কংসাবতীর ধারে পাথরার প্রাচীন মন্দির। — নিজস্ব চিত্র।
কংসাবতীর পাড়ে প্রাচীন মন্দিরে নিখুঁত টেরাকোটা কাজ। মন্দিরময় পাথরায় যেন প্রতি পদে ইতিহাসের হাতছানি। মেদিনীপুরের থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূর। সম্ভাবনা থাকা সত্বেও জেলার পর্যটন মানচিত্রে এখনও স্থান পায়নি এই জায়গা। পাথরাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে রাজ্যের কাছে প্রস্তাব পাঠাল জেলা প্রশাসন।
প্রস্তাব খতিয়ে দেখে অর্থ বরাদ্দের আর্জিও জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, সম্প্রতি পর্যটন সচিব অজিত বর্ধনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা। সেই চিঠিতেই ওই প্রস্তাব রাখা হয়েছে। জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনার কথায়, “জেলা থেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পাথরাকে আরও সুন্দর করে সাজিয়ে তোলার সব রকম চেষ্টা করা হবে। ওখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে।”
২০০৩ সালে কংসাবতী নদীর তীরে অবস্থিত ৩৪টি মন্দির এবং মন্দির সংলগ্ন ২৫ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করে ‘আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’ (এএসআই)। পরে ১৯টি মন্দিরে সংস্কার কাজ হয়। এখানে রয়েছে নবরত্ন মন্দির। উচ্চতা ৪৫ ফুট। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্যই মন্দির সংস্কার করা হয়। যদিও আজও পাথরায় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি।
পাথরার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে ইয়াসিন পাঠানের নাম। এই মন্দির আগলে রাখতে কম ঝক্কি পোয়াতে হয়নি ইয়াসিন পাঠানকে। সেটা ১৯৭২ সালের কথা। সকালে বাড়ি থেকে স্কুল যাচ্ছিল এক ছাত্র। পথে তিন জনের সঙ্গে দেখা। ওই তিন জন ছাত্রের কাছে পাথরা যাওয়ার রাস্তা জানতে চান। কিশোর বলেছিল, ‘চলুন, আমি সঙ্গে যাচ্ছি।’ স্কুলের পথ ছেড়ে সে চলেছিল পাথরার জীর্ণ মন্দির দেখাতে। সেই শুরু। সেদিন পাথরা যাওয়ার তিন জনের একজন ছিলেন পুরাতত্ব বিশারদ তারাপদ সাঁতরা। মূলত তাঁর উৎসাহেই ওই স্কুল ছাত্র ইয়াসিন পাঠান মন্দিরগুলোর সংরক্ষণের কাজে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তারপর ইয়াসিনের দীর্ঘ লড়াইয়ের স্বীকৃতি স্বরূপ কেন্দ্রীয় পুরাতত্ত্ব দফতর পাথরার মন্দির সংরক্ষণে তৎপর হয়।
পাথরার ৩৪টি মন্দিরের ইতিহাস ও কাহিনী নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘মন্দিরময় পাথরার ইতিবৃত্ত’। আগেও এই বইটি প্রকাশ হয়েছিল। পরে পরিবর্তিত সংস্করণ প্রকাশ হয়। আরও পরিমার্জিত করে বইটি নতুন আঙ্গিকে লেখেন ইয়াসিন।
জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, সম্প্রতি ইয়াসিন পাঠানও জেলা প্রশাসনের কাছে পাথরায় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার আর্জি জানান। এই আর্জিতে সাড়া দিয়েই রাজ্যের কাছে প্রস্তাব পাঠান জেলাশাসক। ইয়াসিন বলছিলেন, “কংসাবতী নদীর তীরে নির্জন প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য্য। আশেপাশে প্রাচীন মন্দির। এই এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র হতেই পারে।”