সমস্যায় পেনশন গ্রাহকরা

নতুন নোট মেলেনি, খুশি ১০০ টাকাতেই

তমলুকের বানপুকুরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে সকাল থেকেই দীর্ঘ লাইন। সেখানেই জনা পঞ্চাশ মানুষের পিছনে লাইন দিয়েছিলেন নিশ্চিন্তবসানের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অশীতিপর কৃষ্ণপদ বেরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৫৪
Share:

তমলুকে একটি ব্যাঙ্কের সামনে গ্রাহকের ভিড়।

তমলুকের বানপুকুরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে সকাল থেকেই দীর্ঘ লাইন। সেখানেই জনা পঞ্চাশ মানুষের পিছনে লাইন দিয়েছিলেন নিশ্চিন্তবসানের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অশীতিপর কৃষ্ণপদ বেরা। ক্লান্ত কৃষ্ণপদবাবু বললেন, ‘‘নোট বদলাতে আসিনি। পেনশনের জন্য ‘লাইফ সার্টিফিকেট’ জমা দিতে এসেছি। ব্যাঙ্কের সামনে গ্রাহকদের ভিড় দেখে লাইনে দাঁড়িয়েছি।’’

Advertisement

ভোর হতেই গ্রাহকরা হাজির ব্যাঙ্কের দরজায়। বেলা যত গড়িয়েছে লাইনও তত লম্বা হয়েছে। ব্যাঙ্ককর্মীরাও হাজির হয়েছেন আগে ভাগে। কিন্তু লাইনে যাঁরা দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা সকলেই যে ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোট বদলাতে এসেছেন, এমন নয়। অনেকেই এসেছিলেন জরুরি প্রয়োজনে টাকা ‘ট্রান্সফার’ করতে। কেউ পেনশন তুলতে। হয়রান হয়েছেন তাঁরাও। ব্যাঙ্ক আধিকারিকরা অবশ্য বলেছেন, ‘‘নোট বদলের লাইনে অন্য গ্রাহকরা দাঁড়ালেও বয়স্কদের দেখতে পেলেই আমরা তাঁদের ডেকে নিচ্ছি দ্রুত কাজের জন্য।’’

তবে সকালের দিকে ভিড় বাড়লেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। দ্রুত গ্রাহকদের এগিয়েছে লাইন। ৫০০, ১০০০ টাকার নোট বদল করে হাতে পেয়েছেন ৫০, ২০, ১০ টাকার নোটের বান্ডিল। ‘‘কয়েকটা ৫০০, ১০০০ টাকার নোট বদলে ১০, ৫০ টাকার বান্ডিল পেলাম। ভালই হল। খুচরো বাজারে আর অসুবিধা হবে না’’, বললেন তমলুক স্টিমারঘাটের বাসিন্দা পরশুরাম সর্দার। তবে অভিযোগ, নোট বদলে টাকা পাননি তমলুক প্রধান ডাকঘরের গ্রাহকরা অনেকেই। পার্বতীপুরের রত্না মাইতি বলেন, ‘‘৫০০ টাকার নোটে ২২০০০ হাজার টাকা ডাকঘরে জমা দিয়েছি। কিন্তু হাতে টাকা পাইনি।’’

Advertisement

তমলুক প্রধান ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার অঞ্জলি বেরা অবশ্য জানান, ‘‘ টাকা আসে ব্যাঙ্কের কাছ থেকে। এ দিন চাহিদা মতো টাকা আসেনি। তাই সবাইকে টাকা দেওয়া যায়নি’’

বৃহস্পতিবার সাত সকালেই ঝাড়গ্রামে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের সামনে গ্রাহকদের লম্বা লাইন ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রতিটি ব্যাঙ্কের বাইরে মোতায়েন ছিল সশস্ত্র পুলিশ। ঝাড়গ্রাম প্রধান ডাকঘরেও সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিষেবা দেওয়া হয়। বেসরকারি ব্যাঙ্ক গুলিতে অবশ্য ভিড় কম ছিল। সেখানে নির্বিঘ্নে পরিষেবা পান গ্রাহকরা। ঝাড়গ্রামের কোনও ব্যাঙ্কেই নতুন নোট দেওয়া হয়নি। সব জায়গাতেই একশো টাকার নোট দেওয়া হয় গ্রাহকদের।

নতুন ৫০০ ও ২০০০ টাকার নোট হাতে না-পেয়ে ঘাটালের বাসিন্দারা অনেকেই হতাশ। তবে খুচরো ১০০ টাকার নোটে যে দিনগুজরান হবে, এতেই তাঁরা নিশ্চিন্ত। শহরের রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি, কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক ও সমবায় গুলিতে সকাল থেকেই ভিড় করেছিলেন তাঁরা। কোথাও কোনও অভিযোগও হয়নি।

ঘাটাল স্টেট ব্যাঙ্কের চিফ ম্যানেজার সুব্রত বিশ্বাস বলেন, “অনান্য দিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার ভিড় বেশি ছিল। তবে এ জন্য পরিষেবায় ব্যাঘাত ঘটেনি। এখনও ব্যাঙ্কে নতুন নোট আসেনি। তাই গ্রাহকদের ১০০ এবং তার কম খুচরো টাকাই দেওয়া হয়েছে।” এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের ঘাটাল শহর শাখার ম্যানেজার সুবীর কুমার মিশ্র বলেন, “ আশা করছি শুক্রবার থেকে গ্রাহকদের নতুন নোট সরবরাহ করতে পারব।”

কাঁথির ব্যাঙ্কগুলিতেও সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভিড় ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ বাহিনীও মোতায়েন ছিল।

পার্থপ্রতিম দাস ও কৌশিক সাঁতরার তোলা ছবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন