কল্পনা চিত্রকর। —নিজস্ব চিত্র।
পটচিত্রের জন্য জাতীয় পুরস্কার পাচ্ছেন পূর্ব মেদিনীপুরের কল্পনা চিত্রকর।
চণ্ডীপুর ব্লকের হবিচক গ্রামের বাসিন্দা কল্পনাদেবী ২০১৬ সালের জন্য পটশিল্পে ওই পুরস্কার পাচ্ছেন। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রকের তরফে ছত্তীসগঢ়ের রায়পুরে ইন্ডোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া তবে।
পটশিল্পে শিক্ষানবীশ হিসাবে কল্পনাদেবীর হাতে খড়ি তাঁর বাপের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার নয়াগ্রামে। কল্পনার বিয়ে হয় চণ্ডীপুর ব্লকের হবিচক গ্রামের বাসিন্দা নুরদিনের সঙ্গে। হবিচক গ্রামের প্রায় ৫০-৬০টি পরিবার পট শিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। ১৮ বছরে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি হবিচকে এসে স্বামী নুরদিন, শ্বশুর গোলাপ ও শাশুড়ি নুরজাহান চিত্রকরের উৎসাহে কল্পনাদেবী ফের গৃহস্থালির কাজের ফাঁকে পট আঁকা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। গোলাপবাবু পট আঁকার পাশাপাশি পটের গান রচনা করেন এবং সুর বাঁধেন।
কল্পনার স্বামী নুরদিনও পট শিল্পী হিসাবে জেলাস্তরে ও রাজ্য সরকারের পুরস্কার পেয়েছেন। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে গত বছর লন্ডনে আয়োজিত হস্তশিল্পীদের মেলায় গিয়ে নুরদিন নিজের আঁকা পট প্রদর্শনের সুযোগ পেয়েছিলেন। আর এবার আদিবাসীদের জীবনকাহিনী নিয়ে আঁকা পটচিত্রের জন্য জাতীয় পুরস্কার অর্জন করলেন কল্পনাদেবী।
শুধু আদবাসী জীবন কাহিনী নয়, কল্পনাদেবীর তুলিতে উঠে আসে রামায়ণ, মনসামঙ্গল, দেবী দুর্গা, মনসা ও নানা সামাজিক কাহিনীর ছবি। কল্পনাদেবীর তিন ছেলে বাপ্পা চিত্রকর, বাপন চিত্রকর ও সিন্টু চিত্রকর দাদু- বাবা-মায়ের হাত ধরে পট আঁকা শিখছে।
জাতীয় পুরষ্কার পাওয়া নিয়ে কল্পনাদেবী বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই বাবা–মায়ের হাত ধরে পট আঁকা শিখেছিলাম। শশুরবাড়িতে এসেও পট আঁকার সুযোগ পেয়েছি। তাঁদের সাহায্যেই আজ এমন পুরস্কার পেলাম। খুব ভাল লাগছে।’’
স্ত্রীর সাফল্যে খুশি নুরদিন। তাঁর কথায়, ‘‘কল্পনা একজন দক্ষ পটশিল্পী। ও আগেও অনেক পুরস্কার পেয়েছে। তবে জাতীয় পুরস্কার শুধু আমার পরিবার নয়, গোটা রাজ্যের পটশিল্পীদের জন্য একটা বড় সম্মান বলে মনে করছি।’’