অশ্বারোহী: দিঘার সৈকতে ঘোড় সওয়ারি। নিজস্ব চিত্র
কালো ঘোড়ায় বসে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র বান্টি। পাছে ছেলে পড়ে যায়, তাই পিছনে বসে তাকে ধরে রেখেছেন বাবা সুমন বিশ্বাস। সৈকতে ঘোড়া হাল্কা দৌড় শুরু করতেই আনন্দে আত্মহারা বান্টি। দিঘা, মন্দারমনি সৈকতে এমন দৃশ্য নতুন নয়।
যদিও নিরাপত্তার কারণে সৈকতে ঘোড় সওয়ারিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে প্রশাসনের। কিন্তু সে সবের তোয়াক্কা না করেই অবাধে চলছে ঘোড়া, উটের সওয়ারি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ছোটেন ধেনদুপ লামা এবং অন্তরা আচার্য যখন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক ছিলেন তখন সৈকতে ঘোড় সওয়ারি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন তাঁরা। সেই সময় বলা হয়েছিল দিঘার সৈকতে এর ফলে দূষণ হয় এবং সৈকত নোংরাও হয়। শুধু ঘোড় সওয়ারি নয়, রাবারের টিউব নিয়ে সমুদ্রে নামার ক্ষেত্রেও বিধি নিষেধ আরোপ করেছিল প্রশাসন। বলা হয়েছিল, যাঁরা সাঁতার জানেন না তাঁরা টিউব ভাড়া নিয়ে সমুদ্রে যান। ঢেউয়ের ধাক্কায় অনেকে টিউব থেকে পিছলে জলে পড়ে যান। এতে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে।
কিন্তু বর্তমানে সে সব নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে অবাধে ঘোড়া-উটের সওয়ারি টিউব নিয়ে সমুদ্রে দাপাদাপি চলছেই। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিঘা সৈকতে ঘোড় সওয়ারি এখন এখন অন্যতন জীবিকা। পর্যটকেরাও এ সব পছন্দ করেন। ১৭থেকে ২০টি পরিবার দিঘায় এই ব্যবসায় যুক্ত। তাঁদের একজন জগন্নাথ পয়ড়্যা। কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের বসন্তিয়া গ্রামের বাসিন্দা জগন্নাথের কথায়, ‘‘এটা করেই সংসার চলে। ঘোড় সওয়ারি করানো যাবে না এমন কোনও নির্দেশের কথা জানি না। তা ছাড়া এটা বন্ধ হলে খাব কী ? অনেক টাকা দিয়ে ঘোড়া কিনেছি। স্থানীয় পদিমা ১ গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছি। এখন যদি বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে মারা পড়ব।’’ তিনি জানান, একটা ঘোড়া কিনতে প্রায় ৭০ হাজার টাকা লাগে। সৈকতে প্রতিদিন ঘোড় সওয়ারি থেকে আয় হয় ৫০০-৭০০ টাকা। দিঘায় ঘোড় সওয়ারির আর এক ব্যবসায়ী শেখ আখতারের যুক্তি, ‘‘মন্দারমনিতে প্যারাসেলিং করতে গিয়ে এক পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। সেই সময় এই নিয়ে খুব হইচইও হয়। ঘোড় সওয়ারিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু ফের মন্দারমনিতে প্যারাসেলিং হচ্ছে। তা হলে দিঘায় ঘোড় সওয়ারিতে দোষ কোথায়?”
পদিমা-১ পঞ্চায়েতের প্রধান মনীন্দ্র দত্ত অসুস্থ থাকায় উপ প্রধান সোমা দাস গিরি বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে আমরা এমন কোনও ট্রেড লাইসেন্স দিইনি। প্রধান কি করেছেন জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
কী বলছেন পর্যটকেরা?
দিঘায় বেড়াতে আসা কলকাতার বাগুইআটির বাসিন্দা অমর পাল বলেন, ‘‘অনেকবার এখানে এসেছি। শুধু ছোটরা নয়, বড়দেরও ঘোড়-সওয়ারি করার জন্য আগ্রহ দেখেছি। কিন্তু ঘোড়া থেকে পড়ে কেউ জখম হয়েছেন শুনিনি। তবে নিরাপত্তার উপরে আরও জোর দিয়ে এটা চালু রাখলে পর্যটকেরাও আনন্দ পাবেন।’’
বিষয়টি নিয়ে বর্তমান জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, “আগে যাঁরা জেলাশাসক ছিলেন, সেই সময় সৈকতে ঘোড়-সওয়ারি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল কি না জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’’ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। তবে এ নিয়ে কোনও অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেব।’’