Pradhan Mantri Awas Yojana

তদন্তে কেন্দ্রীয় দল, নালিশ ঘিরে বিতর্ক, প্রশ্নের মুখে আবাস-সমীক্ষা

মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় এসেছে দুই সদস্যের কেন্দ্রীয় দল। তারা জেলা প্রশাসনিক অফিসে জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসকের (জেলাপরিষদ) সঙ্গে রাতে বৈঠক করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ময়না শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:২১
Share:

বাড়িতে গিয়ে পরিদর্শন কেন্দ্রীয় দলের। নিজস্ব চিত্র

বিরোধী গেরুয়া শিবিরোর তরফে অভিযোগ পেয়ে জেলায় ফের আবাস প্রকল্পের তদন্তে এসেছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। কিন্তু পরিদর্শনে গিয়ে দলের সদস্যেরা যা দেখলেন, তাতে অভিযোগের সারবত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। ২০০১ সালের তৈরি হওয়া পাকা বাড়ির মালিকের নাম আবাস প্লাসের ২০১৮ সালের প্রাথমিক তালিকাতেই ঠাঁই পেয়েছিল কীভাবে, তা নিয়ে সমীক্ষকদের সমালোচনা করলেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা।

Advertisement

গত মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় এসেছে দুই সদস্যের কেন্দ্রীয় দল। তারা জেলা প্রশাসনিক অফিসে জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসকের (জেলাপরিষদ) সঙ্গে রাতে বৈঠক করে। বুধবার সকালে কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা যান ময়না ব্লকের বাকচা গ্রাম পঞ্চায়েতের ইজমালিচক গ্রামে। ইজমালিচক গ্রামের ২৪২ নম্বর বুথের ২৬টি পরিবারের নাম আবাস প্লাসের চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রের কাছে বিরোধী দল বিজেপির তরফে অভিযোগ জমা পড়েছিল বলে খবর। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই সব উপভোক্তা পরিবারের বাড়ি পরিদর্শন করতে এসেছে কেন্দ্রীয় দল। তবে পরিদর্শনের সময় দেখা যায়, উপভোক্তার তালিকা থেকে বাদ পড়া প্রায় সমস্ত পরিবারেরই পাকাবাড়ি রয়েছে। কারও কারও আবার ২০০১ সালেই পাকা বাড়ি তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এমন সব পরিবারের নাম ২০১৮ সালে তৈরি আবাস প্লাসের প্রাথমিক তালিকাতেই কীভাবে এসেছিল, তা নিয়ে এ দিন সমীক্ষকদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় দলের সদস্যেরা।

কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা সকাল ১১টা নাগাদ ইজমালিচক গ্রামের বাসিন্দা দুলাল বর্মনের বাড়ি যান। দুলালের দোতলা পাকাবাড়ি রয়েছে। বাড়িতে খোঁজ করার পরে তাঁর স্ত্রী মিনতি বর্মণ বেরিয়ে আসেন। কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা জানতে চান, এই বাড়ি তাঁদের কি না, কতদিন আগে বাড়ি হয়েছে? মিনতি জানান, ২০০১ সালে ওই পাকাবাড়ি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই পরিবারের নাম আবাস প্লাসের প্রাথমিক তালিকায় ছিল। তবে গত বছর সমীক্ষার পরে তৈরি চূড়ান্ত তালিকায় তারা বাদ পড়েছে। কিন্তু ২০১৮ সালেরই তালিকায় দুলালদের নাম কী করে ছিল, প্রতিনিধিরা তা অতিরিক্ত জেলাশাসক শ্বেতা আগরওয়ালের কাছে জানতে চান। সমীক্ষা কে করেছিলেন সে সময়, তা-ও জানতে চাওয়া হয়। তবে এ ব্যাপারে কোনও জবাব দেননি প্রশাসনের আধিকারিকরা।

Advertisement

এর পরে কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা এরপর যান গোষ্ঠ বর্মণের বাড়িতে। তাঁদের একটি ইটের দেওয়াল দেওয়া পাকা বাড়ি রয়েছে। কাছেই আরও একটি নির্মীয়মাণ পাকা বাড়ি রয়েছে। কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা খোঁজ করে জানতে পারেন, ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা পাকা বাড়ির টাকা পেয়েছিলেন গোষ্ঠ। কিন্তু সেই পাকা বাড়ির কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। তাহলে কী করে গোষ্ঠের পরিবারের নাম আবাস প্লাসের প্রাথমিক তালিকায় ছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলে কেন্দ্রীয় দল। তাতে সমীক্ষার কাজে যুক্ত থাকা ব্লক প্রশাসনের কর্মী জানান, সমীক্ষার সময়ে তাঁদের অন্য বাড়ি দেখানো হয়েছিল। কেন্দ্রীয় দল এদিন ময়নার ওই এলাকায় বিকাল পর্যন্ত আরও একাধিক বাড়ি ঘুরে উপভোক্তা তালিকা যাচাই করে।

অভিযোগ জানানো হলেও প্রতিনিধিদের পরিদর্শনে এ দিন যে ‘উল্টো’ তথ্য সামনে আসছে, সে নিয়ে বিরোধী বিজেপি অবশ্য তেমন ভাবিত নয়। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আবাস প্লাসের উপভোক্তা তালিকা নিয়ে রাজ্যের শাসকদল ব্যাপক দুর্নীতি করেছে। এ বিষয়ে দলের তরফে ময়না, তমলুক, কোলাঘাট, নন্দীগ্রাম ও ভগবানপুর এলাকার তথ্য দিয়ে দলের রাজ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলাম। এছাড়া কিছু অভিযোগ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে জানানো হয়েছিল। কেন্দ্রীয় দল এসেছে। আশা করছি অভিযোগের সুরাহা হবে।’’ এ নিয়ে ময়নার প্রাক্তন বিধায়ক তথা তৃণমূল নেতা সংগ্রাম দোলাইয়ের কটাক্ষ, ‘‘বিজেপির তোলা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় দল বাড়ি বাড়ি গিয়েছিলেন। আমরা জানতে পেরেছি বিরোধীর করা অভিযোগগুলি যথাযথ নয়। আবাস উপভোক্তার তালিকা থেকে যাদের নাম জমা পড়েছে, তা সঠিকই রয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement