কথার শুরুতেই কাটছে ফোন

সকালের রান্নার কাজ সেরে সবে মেয়েকে ফোন করেছেন গীতাদেবী। কেমন আছিস, বলার পরেই আচমকা ফোনটা কেটে গেল। বিরক্ত গীতাদেবী আরও কয়েক বার ফোন করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু সংযোগ না পেয়ে হাল ছেড়ে দিলেন তিনি।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৬ ০৭:১৪
Share:

সকালের রান্নার কাজ সেরে সবে মেয়েকে ফোন করেছেন গীতাদেবী। কেমন আছিস, বলার পরেই আচমকা ফোনটা কেটে গেল। বিরক্ত গীতাদেবী আরও কয়েক বার ফোন করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু সংযোগ না পেয়ে হাল ছেড়ে দিলেন তিনি।

Advertisement

নানা কাজে প্রায়ই ফোন করতে হয় অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী সুব্রত চট্টোপাধ্যায়কে। অভিযোগ, প্রায় সময় ফোনে সিগন্যাল থাকে না। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সিগন্যাল এলে ভাগ্যজোড়ে প্রত্যাশিত ফোনের সংযোগ হয়তো বা পাওয়া গেল। কিন্তু কয়েক সেকেন্ড কথা বলার পরেই ফোন কেটে যায়। বিরক্ত সুব্রতবাবু বলছেন, ‘‘এ ভাবে কী কথা বলা যায়। তার উপরে প্রতিবার কল করলে হিসেব মতো মিনিট প্রতি টাকাও কেটে নেওয়া হচ্ছে।”

শুধু গীতাদেবী বা সুব্রতবাবু নন, ‘কল ড্রপ’-র সমস্যায় জর্জরিত রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থা ‘ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড’ (বিএসএনএল)-র খড়্গপুর টেলিকম ডিস্ট্রিক্ট-এর বহু গ্রাহক। এই টেলিকম ডিস্ট্রিক্ট-এর আওতায় রয়েছে সমগ্র পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা। এই ডিস্ট্রিক্ট-এ মোবাইলের গ্রাহক রয়েছেন প্রায় ২ লক্ষ। শুধু পশ্চিম নয়, বারবার ফোন কেটে যাওয়ার সমস্যায় জেরবার পূর্ব মেদিনীপুরের বহু গ্রাহকও।

Advertisement

হলদিয়ায় বিএসএনএল-র গ্রাহক তথা আইনজীবী দিলীপ শী বলেন, “এখানেও মাঝেমধ্যেই বিএসএনএল-র টেলিফোন পরিষেবা বিপর্যস্ত হচ্ছে। বারবার ফোন কেটে যাচ্ছে। পরিষেবার মান বাড়ানো জরুরি।” শুধু ‘কল ড্রপ’ নয়, ইন্টারনেট পরিষেবাও ব্যাহত হচ্ছে বলে একাংশ গ্রাহকের অভিযোগ। এক গ্রাহকের অভিযোগ, ‘‘পয়সা খরচ করে ইন্টারনেটের ‘থ্রি জি’ পরিষেবা নিয়েছি। কিন্তু প্রায়ই এই পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়।’’ খড়্গপুরের বাসিন্দা এক বিএসএনএল গ্রাহকের অভিযোগ, ‘‘সারাবছরই কল ড্রপের সমস্যায় ভুগতে হয়। তবে ইদানীং যেন পরিষেবার মান তলানিতে ঠেকেছে। সকাল ও সন্ধেয় ফোন কেটে যাওয়ার সমস্যা বেশি হয়।’’

সমস্যা কোথায়? বিএসএনএল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ২ লক্ষ মোবাইল গ্রাহকের কাছে উন্নত পরিষেবা পৌঁছে দিতে খড়্গপুরে দু’টি ‘সিগন্যাল ট্রান্সফার প্রোটোকল’ (এসএসটি) সার্ভার রয়েছে। এই সার্ভার দু’টি কলকাতা ও পটনার সার্ভারের সঙ্গে ‘ফাইবার অপটিক কেবলের’ মাধ্যমে যুক্ত। কেবলে সংযুক্ত থাকে ‘মাইক্রোওয়েভ সিস্টেম টাওয়ার’। শহর ভিত্তিক ভাবে এই টাওয়ারগুলি থাকে। এই মাইক্রোওয়েভ সিস্টেম টাওয়ার তরঙ্গের মাধ্যেমে বিভিন্ন এলাকার ছোট টাওয়ার ‘বেস ট্রান্সজিভার স্টেশন’ (বিটিএস)-এর সঙ্গে যুক্ত থাকে। কাউকে ফোন করলে এই ‘বিটিএস’-এর তরঙ্গের মাধ্যমেই তা সংযুক্ত হয়।

বিএসএনএল কর্তাদের দাবি, ট্রেন লাইনের কাজ, রাস্তার কাজ বা ইঁদুরের উৎপাতে অনেক সময় এই কেবলগুলি কেটে যায়। তবে একটি কেবল কেটে গেলে অন্যটি সঙ্গে সঙ্গে সচল হয়ে যায়। দু’টি কেবল একসঙ্গে কেটে গেলে অচল হয়ে যায় ‘মাইক্রোওয়েভ সিস্টেম টাওয়ার’। তখন ফোনের সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। একটি কেবল কেটে গেলেও অনেক সময় ফোনে সংযোগ না পাওয়া, ‘কল ড্রপে’র মতো নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। ব্যাটারির আয়ু কমে গেলে অনেক সময় ছোট টাওয়ারগুলি (বিটিএস)ও কাজ করে না। ফলে মাঝেমধ্যেই সিগন্যাল চলে যায়। বিএসএনএলের এক কর্তার কথায়, “বেসরকারি সংস্থাগুলি একটি বড় এলাকা জুড়ে ‘মাইক্রোওয়েভ সিস্টেম টাওয়ারের’ মাধ্যমে কাজ চালায়। তারা কম টাকায় ঠিকাদার কর্মী দিয়ে সব সময় সিস্টেমের রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারে। কিন্তু আমাদের পর্যাপ্ত কর্মী নেই। ফলে একটু অসুবিধা হচ্ছে এটা ঠিক।”

বিএসএনএলের অবসরপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান ইন্দার বাসিন্দা বিনোদ রায় বলেন, “কয়েকদিন ধরেই ‘কল ড্রপ’-র সমস্যা হচ্ছে দেখছি। মনে হয়, বিটিএস-র ব্যাটারিতে চার্জ না থাকায় এ সব সমস্যা হচ্ছে।” বিষয়টি জানা নেই বলে দাবি করেন বিএসএনএল-র ‘খড়্গপুর টেলিকম ডিস্ট্রিক্টে’র জেনারেল ম্যানেজার মীরা মার্দি। তিনি বলেন, “সব সময় ‘মনিটারিং’ করা হয়। ‘মনিটারিং’-এ এ রকম সমস্যা ধরা পড়েনি। অঞ্চল বিশেষে হয়তো ‘বিটিএস’-এ সমস্যা থাকায় গ্রাহকের ‘কল ড্রপ’ হচ্ছে। আমি বিষয়টি দেখব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement