জাঁক ফিকে, রথে সম্বল আবেগ

এক সময় লালগড়ে ১৬ চাকার প্রকাণ্ড কাঠের রথে সপার্ষদ সওয়ার হতেন রাধামোহন জিউ ও শ্রীমতী। আর এখন রথযাত্রার দিনে ৮ চাকার লোহার ছোট রথে চড়েন লালগড় রাজপরিবারের কুলদেবতারা। ঐতিহ্যের রথযাত্রার আয়োজন করতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন লালগড় রাজপরিবারের সদস্য দর্পনারায়ণ সাহসরায়!

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৬ ০০:৪৯
Share:

লালগড় রাজবাড়ির রথ। —নিজস্ব চিত্র।

এক সময় লালগড়ে ১৬ চাকার প্রকাণ্ড কাঠের রথে সপার্ষদ সওয়ার হতেন রাধামোহন জিউ ও শ্রীমতী। আর এখন রথযাত্রার দিনে ৮ চাকার লোহার ছোট রথে চড়েন লালগড় রাজপরিবারের কুলদেবতারা। ঐতিহ্যের রথযাত্রার আয়োজন করতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন লালগড় রাজপরিবারের সদস্য দর্পনারায়ণ সাহসরায়!

Advertisement

রথযাত্রার দিন লালগড়ের বাবুপাড়ার মন্দির থেকে রাধামোহন ও শ্রীমতীর পাশাপাশি গোপীনাথ, গোবিন্দ, আরও দু’টি শ্রীমতী, সাক্ষীগোপাল, কৃষ্ণ-বলরাম, ধাম গৌরাঙ্গ ও জগন্নাথের বিগ্রহ নিয়ে আসা হয় রথতলায়। কেবলমাত্র এ দিনই রাধামোহন ও শ্রীমতীকে সোনার অলঙ্কারে সাজানো হয়। রথযাত্রার দিন বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে, অমৃতযোগে রথের রশি টানা শুরু হয়। স্থানীয় হাটচালায় মাসির বাড়িতে পৌঁছে যাত্রা শেষ হয়। সেখানে ৮দিন ধরে রথের মেলা বসে। ওইদিন গুলিতে পালাকীর্তন, রামায়ণ গানের আসর বসে। ৮দিন সেখানে থাকার পর উল্টোরথে সপার্ষদ রাধামোহন ও শ্রীমতীকে বাবুপাড়ার মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হয়। দর্পনারায়ণবাবু জানান, আগে ১৬ চাকা বিশিষ্ট ৬০ ফুট উঁচু কাঠের রথ ছিল। সেটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ১৯৯১ সালে ২০ ফুট উঁচু আট চাকার লোহার রথ তৈরি হয়।

লালগড়ের তিনশো বছরের পুরনো রথযাত্রার জাঁক-জৌলুস অনেক ফিকে হয়ে গিয়েছে। তবে এই রথযাত্রাকে ঘিরে এলাকাবাসীর মধ্যে আবেগ আজও অটুট। গত আড়াই দশক ধরে রাজপরিবারের তরফে রথযাত্রা পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন বছর পঞ্চাশের দর্পনারায়ণবাবু। লালগড় রাজ পরিবারের কুলদেবতা রাধামোহন জিউ মন্দিরের সেবাইতও তিনি। মন্দিরের দেবত্র জমির ভাগচাষের ধান থেকে বছরে কয়েক হাজার টাকা মেলে। রথের মেলার আয়োজন করে হাজার বিশেক টাকা সংগ্রহ হয়। এই দিয়েই ভক্তির উপাচারে নমো নমো করে ফি-বছর রথযাত্রার আয়োজন করা হয়। দেবসেবার জন্য বছরে ১৯ হাজার টাকা সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে শরিকি-মামলায় সেই টাকা কয়েক বছর ধরে তোলা যাচ্ছে না। দর্পনারায়ণবাবুর আক্ষেপ, “জাঁক-জমক তো দূর। বার্ষিক উৎসব ও আচার-অনুষ্ঠান করতে গিয়ে ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রির মতো অবস্থা। পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য-পরম্পরা কতদিন টেনে নিয়ে যেতে পারব জানি না।”

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, জঙ্গলমহলের ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী কল্পতরু। লালগড় রাজ পরিবারের রথযাত্রা ও ঐতিহ্যের উৎসবগুলি পরিচালনার জন্য উপযুক্ত সরকারি বরাদ্দ প্রয়োজন। পাশাপাশি, সরকারিস্তরে রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে লালগড়কে তুলে ধরার পক্ষেও সওয়াল করেছেন বাসিন্দাদের একাংশ। লালগড় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কৃষ্ণগোপাল রায় বলেন, “লালগড় রাজ পরিবারের এখন খুবই দৈন্যদশা। লালগড়ের রথের উৎসবের সুদিন ফেরানো প্রয়োজন। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।” তবে বেসরকারি পর্যটন সংস্থাগুলি এ বার রথের দিন কয়েকজন পর্যটককে লালগড়ের রথ দেখাতে নিয়ে যাচ্ছে। ঝাড়গ্রামের এমনই একটি পর্যটন সংস্থার কর্তা সুমিত দত্ত বলেন, “লালগড়ের রথযাত্রার উৎসবটিকে হেরিটেজ উৎসব বলা চলে। এমন একটি উৎসবকে সরকারি ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হলে খুব ভাল হয়। তাতে আরও বেশি লোকজন এখানে আসবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন