পুরনো চেহারায় মহকুমা অফিস

ইংরেজ আমলে তৈরি হওয়া ঝাড়গ্রাম এসডিও অফিস-ভবনটিকে সংস্কার করে একেবারে আগের পুরনো চেহারায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে! পর্যটকদের কাছে ভবনটিকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য সম্প্রতি পূর্ত দফতরের উদ্যোগে ভবনটির সংস্কার ও রংয়ের কাজ হয়েছে। ইংরেজ আমল থেকেই ঝাড়গ্রাম এসডিও অফিসটির বাইরের রং মেটে লাল।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৫ ০০:৪৬
Share:

নতুন সাজে। ছবি:দেবরাজ ঘোষ।

ইংরেজ আমলে তৈরি হওয়া ঝাড়গ্রাম এসডিও অফিস-ভবনটিকে সংস্কার করে একেবারে আগের পুরনো চেহারায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে! পর্যটকদের কাছে ভবনটিকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য সম্প্রতি পূর্ত দফতরের উদ্যোগে ভবনটির সংস্কার ও রংয়ের কাজ হয়েছে। ইংরেজ আমল থেকেই ঝাড়গ্রাম এসডিও অফিসটির বাইরের রং মেটে লাল। সংস্কারের পরে নতুন কলেবরে সেই একই রংয়ে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে ভবনটি। শোনা যায়, আগে ব্রিটিশ আমলে এই প্রশাসনিক ভবনের প্রাঙ্গণে সবুজ ঘাসের লনে ঘেরা ফুলের বাগান ছিল। পরে অবশ্য সে সবের আর কোনও অস্তিত্ব ছিল না। প্রশাসনের উদ্যোগে নতুন করে ঘাসের লন ও মরশুমি ফুলের বাগান তৈরি করা হয়েছে। বাগানটি সাজানো হয়েছে আলোয়। অফিস প্রাঙ্গণে বহু পুরনো গাছ রয়েছে। প্রাঙ্গণের এক পাশে ফলের বাগানটিও দেখার মতো। সেখানে অজস্র আম, কাঁঠাল ও নারকেল গাছ রয়েছে।

Advertisement

ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক এস অরুণ প্রসাদ বলেন, “১৯২২ সালে ঝাড়গ্রামকে মহকুমা ঘোষণা করা হয়। শোনা যায়, ভবনটির তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল তারও আগে। শতবর্ষ ছুঁইছুঁই পুরনো এই প্রশাসনিক ভবনটির নির্মাণ শৈলির মধ্যে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ঐতিহ্যের ছাপ। পর্যটকদের কাছে ভবনটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্যই এই উদ্যোগ।” মহকুমাশাসক জানান, ঐতিহ্যের এই ভবনটির বাইরে পুরনো আমলের সনাতন রূপ বজায় রাখা হলেও ভিতরের সাজসজ্জায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ভবনটির ছাদ ও দেওয়ালের অনেক জায়গায় পলেস্তারা খসে গিয়েছিল। সেগুলি মেরামত করা হয়েছে। ‘রেইন ব্রিক রুফ’ পদ্ধতিতে তৈরি ছাদটিরও সংস্কার হয়েছে। ভবনের বাইরের দেওয়ালে আগে মাকড়সার জালের মতো বিদ্যুতের তার ঝুলত। সে সব সরিয়ে নতুন করে বিদ্যুদয়নের কাজ হয়েছে। দীর্ঘ কয়েক বছর পরে ভবনটির বাইরে রং করা হয়েছে।

Advertisement

১৯০১ সালে মেদিনীপুরের এক ইংরেজ কালেক্টরের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, আগে ঝাড়গ্রামের বেশিরভাগ এলাকা ছিল ঘনজঙ্গলে ঘেরা। হিংস্র জন্তুজানোয়ারের দেখা মিলত হামেশাই। ১৯১০ সালে ইংরেজ সরকারের ব্যবসার স্বার্থে খড়্গপুর থেকে ঝাড়গ্রাম হয়ে কালিমাটি (অধূনা জামশেদপুর) পর্যন্ত রেল লাইন পাতার কাজ শুরু হয়। ঝাড়গ্রামে তৈরি হয় রেল স্টেশন। ধীরে ধীরে বন কেটে বসত তৈরির কাজ শুরু হয়। পরবর্তীকালে বাংলায় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের তীব্রতায় শঙ্কিত হয়ে ওঠে ইংরেজ সরকার।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে ও শাসন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজতে ১৯২২ সালের নভেম্বরে ঝাড়গ্রামকে মহকুমা ঘোষণা করা হয়। সরকারি নথি অনুযায়ী, মূল ভবনটির কাজ তারও আগে শুরু হয়ে গিয়েছিল। প্রথম মহকুমাশাসক নিযুক্ত হন ই টি কোটস্‌। ব্রিটিশ সরকারের আমলে (১৯২২-১৯৪৭) ১৯ জন মহকুমাশাসক এখানে কাজ করেছেন। স্বাধীনতার পরে ৪৮ জন মহকুমাশাসকের পদে দায়িত্ব সামলেছেন। গত ৯৩ বছরে সব মিলিয়ে মোট ৬৭ জন মহকুমাশাসক এখানে কাজ করে গিয়েছেন। বর্তমানে এস অরুণ প্রসাদ হলেন ৬৮ তম মহকুমাশাসক।

মূল ভবনটিতে রয়েছে এসডিও চেম্বার, রেকর্ড রুম, এসডিও-র আপ্ত সহায়কের ঘর, ইলেকশন সেকশন, জেনারেল সেকশন, রিলিফ সেকশন, এসডিও কোর্ট, পুলিশ কোর্ট, এস্টাবলিশমেন্ট রুম, নাজিরখানা, তিন জন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের ঘর, সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের ঘর। মূল ভবনে স্থান সঙ্কুলান না-হওয়ায় সত্তর ও আশির দশকে মূল ভবনের পিছনে অতিরিক্ত ভবন তৈরি করা হয়। নব্বইয়ের দশকে এসডিও অফিসের পাশে নতুন ভবনে ট্রেজারি অফিসটি স্থানান্তরিত হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন