এই সব দোকানই সরানো হবে।—নিজস্ব চিত্র।
পাঁচিল লাগোয়া রাস্তাকে বেআইনি দখল মুক্ত করতে উদ্যোগী হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ। তবে উচ্ছেদ করে নয়। পুনর্বাসনের মাধ্যমেই দখলমুক্ত করা হবে পাঁচিল সংলগ্ন এলাকা। এ জন্য পরিকল্পনাও তৈরি হয়ে গিয়েছে। বাকি শুধু প্রকল্প রূপায়ণ। জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ বলেন, “পাঁচিলের ধারে পরপর দোকান গজিয়ে ওঠায় রাস্তায় যানজট তৈরি হয়। দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। তাই বলে হকারদের তো জোর করে উঠিয়ে দেওয়া যায় না। তাই দোকান ঘর তৈরি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” শীঘ্রই দোকান ঘর তৈরির কাজ শুরু হয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।
কী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে? জেলা পরিষদ জানিয়েছে, পাঁচিল লাগোয়া এলাকায় তৈরি করা হবে দোকান। বতর্মানে যে সমস্ত হকার বসে রয়েছে তাঁদেরই দেওয়া হবে সেই দোকানঘর। তার বাইরেও কিছু বেকার যুবক বা হকারদের জন্যও তৈরি হবে দোকানঘর। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে জেলা পরিষদ সংলগ্ন এলাকায় যেমন বেআইনি দখলদার থাকবে না, তেমনই জেলা পরিষদের আয়ও বাড়বে। স্থায়ী ঠিকানা পাবেন হকারেরাও।
জেলা পরিষদে দোকানঘর তৈরি অবশ্য আগেও দু’দফায় হয়েছিল। প্রথম দফায় রিং রোডের একাংশে দোতলা দোকানঘর তৈরি করে তা লটারির মাধ্যমে বেকার যুবকদের দেওয়া হয়েছিল। পরের ধাপে বাঁশগলির দিকে দোকান তৈরি করে ওই পদ্ধতিতেই দেওয়া হয়। কিন্তু রিংরোডের একটি প্রান্ত উন্মুক্তই ছিল। এছাড়াও হাসপাতাল রোডের দিকটিও ছিল খালি। সে দিকে দোকান ঘর তৈরি না করায় পাঁচিলের ধারে একের পর এক হকার বসতে শুরু করে। রিংরোডের দিকটি আবার ডিভাইডার দিয়ে দু’ভাগে বিভক্ত। তার মধ্যে বেআইনি দখল হওয়ায় রাস্তা ভীষণ সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে।
দোকান তো ছিলই, যত দিন গিয়েছে ততই দোকান থেকে বাঁশ বের করে সামগ্রী সাজিয়ে রাখার দিকে ঝোঁক বেড়েছে দোকানদারদের। তারপর ক্রেতাদের ভিড়। সাইকেল, মোটরসাইকেল নিয়ে ক্রেতারা গিয়ে ভিড় জমালে যানবাহন যাতায়াতের জন্য রাস্তা থাকে না বললেই চলে। একটু অসাবধান হলেই বিপদ। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই জেলা পরিষদের সভাধিপতি থেকে কর্মাধ্যক্ষরা আলোচনা করছিলেন। সভাধিপতি জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে সকলের সঙ্গে আলোচনার পরেই দোকানঘর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রিং রোডের একাংশ ও হাসপাতাল রোড মিলিয়ে ৩৫টি দোকান রয়েছে। প্রথমে তাঁদের দোকান ঘর নেওয়ার জন্য অগ্রাধিকার দেওয়ার হবে। তারপর অন্যদের। এখানে তিনতলা দোকান করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রথম তলায় বর্তমানে যে সব হকার রয়েছেন তাঁদের দেওয়া হবে। দ্বিতীয় তলায় অন্য বেকার যুবক-যুবতীদের। আর তিন তলায় করা হবে গুদাম। তাও ভাড়া দেওয়া হবে।
জেলা পরিষদ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কিন্তু মেদিনীপুর পুরসভা পারেনি। বছরের পর বছর ধরে পুর এলাকার সর্বত্র বেআইনি দখল হয়ে চলেছে। যার জেরে শহর জুড়েই যানজট, দুর্ঘটনার আশঙ্কা। যা দেখে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও ক্ষুব্ধ হয়ে দ্রুত রাস্তায় ফুটপাত তৈরির নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন পুরপ্রধানকে। বেআইনি দখল সরানো দূর, ফুটপাথ পর্যন্ত এখনও করে উঠতে পারেনি পুরসভা। এ বিষয়ে কী ভাবছেন পুর-কর্তৃপক্ষ? পুরপ্রধান প্রণব বসু বলেন, “ফুটপাথ তৈরির জন্য পরিকল্পনা তৈরি হয়ে গিয়েছে। টাকা পেলেই কাজ শুরু করে দেব।”
তবে শহর জুড়ে ফুটপাত আদৌ বেআইনি দখলমুক্ত করা সম্ভব কিনা তা নিয়ে কোনও আশ্বাস দিতে পারেনি পুরসভা।