তখনও আকাশ ফর্সা হয়নি। খানিক শীতের আমেজ। হাতে টর্চ আর মুখে বাঁশি নিয়ে পাহারা দিতে বেরিয়ে পড়েছে ব্লক প্রশাসনের দল। ঝোপঝাড়ে, গাছের আড়ালে কেউ বসে পড়েননি তো! তেমন কাউকে দেখলেই ওই দলের সদস্যেরা বাজচ্ছেন বাঁশি। চোখে ফেলছেন টর্চের আলো। এরপরও বসে থাকবেন কার সাধ্যি!
জেলায় এক সময়ে এমন নজরদারি চলেছে। কোথাও কোথাও এখনও চলে। নজরদারিতে আরও গতি আনতে চলেছে জেলা প্রশাসন। শৌচাগার ব্যবহার নিয়ে নজরদারির কাজে গতি আনতে এ বার ‘রিসোর্স টিম’ গড়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ব্লকে ব্লকে এই টিম গড়া হবে। ইতিমধ্যে জেলা থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক পি মোহনগাঁধী মানছেন, ‘‘ব্লকস্তরে রিসোর্স টিম গড়া হচ্ছে। এই টিম নজরদারির কাজ করবে।’’ জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, বিভিন্নস্তরের মানুষদের নিয়ে ব্লকপিছু ১০ জনের টিম গড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ‘ব্লক রিসোর্স টিম’ (বিআরটি) গ্রামস্তরের, সংসদস্তরের কাজকর্মের পর্যালোচনা করবে। সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শন করবে। ব্লকে রিপোর্ট দেবে।
শালবনির বিডিও সঞ্জয় মালাকার বলেন, ‘‘জেলার নির্দেশ পেয়েছি। নির্দেশ মতো ব্লকে রিসোর্স টিম গড়া হয়েছে।’’ কেশপুরের বিডিও দীপক ঘোষের কথায়, ‘‘ব্লকে রিসোর্স টিম গড়া হয়েছে। এ বার এই টিম কাজ শুরু করবে।’’ ২০১২ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, পশ্চিম মেদিনীপুরের ২১টি ব্লকে শৌচাগারবিহীন পরিবারের সংখ্যা ছিল ৪ লক্ষ ৩ হাজার ৯৭৪। শুরুতে গ্রাম পঞ্চায়েত ধরে শৌচাগার নির্মাণের কাজ শুরু হয়। পরে অবশ্য জেলার সব গ্রাম পঞ্চায়েতেই এই কাজ শুরু হয়। জেলা প্রশাসনের দাবি, শৌচাগারবিহীন সব পরিবারেই এই সময়ের মধ্যে শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাকে নির্মল জেলা হিসেবে ঘোষণা করার জন্য রাজ্যের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের অন্য এক সূত্র অবশ্য মানছে, প্রায় ৪ হাজার শৌচাগার নির্মাণের কাজ এখনও অসম্পূর্ণ।
খোলা জায়গায় প্রাতঃকৃত্য সারলে কী ভাবে পরিবেশ দূষিত হয়, রোগ ছড়ায়, রিসোর্স টিম গ্রামে গ্রামে গিয়ে স্থানীয়দের এ সবও বোঝাবে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘শুধু তো শৌচাগার তৈরি করলেই হল না। ব্যবহার করা জরুরি। মানুষকে সচেতন করার উপর আরও বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে।’’