অনেকদিন পর লাভের মুখ দেখলেন মেদিনীপুরের রিকশা চালকেরা।
বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর শহর জুড়ে শীতল আবহাওয়া। না-প্রকৃতির কল্যাণে নয়। ২৪ ঘণ্টা আগেও পরিস্থিতি ছিল অন্য রকম।
বুধবার দুপুরের সংঘর্ষের পর ওই রাতেই অটো এবং টোটো মালিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি তথা জেলা পরিবহণ বোর্ডের সদস্য প্রদ্যোত ঘোষ। কারণ বুধবারের সংঘর্ষে পথে নেমেছিলেন যাঁরা তাঁদের সকলের হাতেই ছিল তৃণমূলের পতাকা। অটো হোক বা টোটো দু’পক্ষেই সহায় ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। তাই তড়িঘড়ি ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’র চেষ্টা করেছে দল। সিদ্ধান্ত হয়েছে রবিবার পর্যন্ত টোটো চলবে না। তার মধ্যে জেলা পরিবহণ দফতর প্রশাসনিক অনুমতি না দিতে পারলে টোটো চলবে গলিতেই। অনুমতি পেলে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত মেনে নির্দিষ্ট রুটে টোটো চলবে।
সিদ্ধান্ত মনঃপুত না হলেও অশান্তি এড়াতে তা মেনে নিয়েছেন টোটো চালকরা। তাঁদের নেতা স্নেহাশিস ভৌমিক বলেন, “এটা এক তরফা সিদ্ধান্ত। জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হল। তবু অশান্তি এড়াতে আমরা মেনে নিয়েছি।’’ কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, গরিব ছেলেরা টোটো চালিয়ে সংসার চালায়। এ ক’দিন তাঁদের কী হবে? প্রদ্যোতবাবু অবশ্য বলেছে, “মাত্র তো ক’টা দিন। দ্রুত গতিতে সরকারি অনুমোদনের জন্য পদক্ষেপ করা হয়েছে।”
জেলা পরিবহণ আধিকারিক অনিমেষ সিংহ রায়ও বলেন, “যুদ্ধকালীন তত্পরতায় টোটো চালকদের অনুমোদন দেওয়ার কাজ চলছে। আশা করছি, সামনের সপ্তাহ থেকেই অনুমোদন দেওয়ার কাজ শুরু করতে পারব।”
বুধবারের ঘটনায় পুলিশ দু’পক্ষের ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে। বৃহস্পতিবার রাস্তায় টোটো নামেনি ফলে রিকশা চালকরা কিছুটা মুনাফার মুখ দেখেছেন অনেকদিন পরে। শুধু টোটো নয়, আগের দিনের ঘটনার জেরে অটোও চলেছে হাতে গোনা। এক অটো চালকের কথায়, “রাস্তায় নামলে টোটো চালকেরা যদি ঘিরে মারধর করে!” যদিও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে মোতায়েন ছিল পুলিশ।
সারাদিন যাত্রী পেয়েছেন রিকশা চলাকেরা। তেমনই একজন পল্টু খান জানালেন, “বহুদিন পর সারাদিন ভাড়া খাটলাম। অটো-টোটোর জন্য এতদিন বসেই কাটাতাম।’’ তাঁর অভিজ্ঞতা বলছে এখন আর সারাদিনে দু’একটির বেশি ভাড়া মেলে না। যাত্রীর সঙ্গে দর কষাকষির করতে করতেই পাশ থেকে ১০ টাকা ভাড়ায় যাত্রী তুলে নেয় টোটো। এ দিন অটো- টোটো না থাকায় বাধ্য হয়ে স্কুলবাজার থেকে চড়ে নারায়ণ বিদ্যাভবন (বালক) যেতে হল ৪০ টাকা ভাড়া দিয়ে।
এ দিকে রিকশা চালকদের সমস্যা না-মিটিয়ে নতুন করে টোটোর অনুমোদন দেওয়া নিয়ে সরকারকে বিঁধেছে বিরোধী দলগুলি। পাশাপাশি তাঁরা শহরের অন্য সমস্যা গুলির কথাও তুলে ধরেছেন। শহর কংগ্রেস সভাপতি সৌমেন খানের বক্তব্য, “শহরে যথেচ্ছ অটো-টোটো নামানো হয়েছে। প্রশাসন নির্বিকার। রিকশাচালকদের স্বার্থ না দেখেই শহরে যথেচ্ছ অটো-টোটো নামানো হয়েছে।” বিজেপির শহর সভাপতি অরূপ দাসের আবার অভিযোগ, ‘‘শহরে রাস্তার সম্প্রসারণ হয়নি। অথচ, প্রচুর অটো-টোটো নেমে গিয়েছে। প্রশাসন এর দায় এড়াতে পারে না।” সিপিএমের শহর জোনাল সম্পাদক সারদা চক্রবর্তীরও বক্তব্য, “এই অশান্তির দায় পুরসভা-প্রশাসন এড়াতে পারে না। কেন অটো-টোটো নিয়ে স্পষ্ট কোনও নির্দেশিকা থাকবে না?” বিরোধীদের বক্তব্য, মেদিনীপুর পুরসভার ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। রাজ্যের ক্ষমতাতেও রয়েছে তৃণমূল। কোনও নিয়মনীতি না থাকার জন্যই এই অশান্তি।
অটো ইউনিয়নের সভাপতি শশধর পলমল বলেন, “আমরা চাই টোটোও চলুক। কিন্তু সরকারি নিয়ম মেনে। ” আন্দোলন জোরদার করতে শীঘ্রই টোটো ইউনিয়নের কমিটিও গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্নেহাশিস ভৌমিক। নামও ঠিক হয়েছে ‘পশ্চিম মেদিনীপুর প্রোগ্রেসিভ ই-রিকশা এবং ই-ভ্যান ইউনিয়ন’। অনেকেই মনে করছেন সেই জোরেই টোটো চালকরা তৃণমূলের পতাকা নিয়েই পথে নেমেছিলেন বুধবার।