Ruparanarayana

মায়াচরে ভাঙন রোধে চাপানউতোর

মহিলাদলের এই দ্বীপভূমির তিনদিই ঘিরে রেখেছে রূপনারায়ণ নদ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রোজই পাড় ভেঙে ক্রমশ এগিয়ে আসছে নদ। তাঁদের অভিযোগ, নদীবেষ্টিত হওয়ায় যাতায়াতের স্স্যা প্রচণ্ড। ফলে প্রশাসনের কর্তাদেরও আসা-যাওয়া খুবই কম। ভাঙন রোধে জেলা প্রশাসনের তরফে কোনও পদক্ষেপই করা হয়নি।

Advertisement

আরিফ ইকবাল খান

হলদিয়া শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৭ ০৩:০৫
Share:

নদীগর্ভে: ভাঙছে রূপনারায়ণের পাড়।নিজস্ব চিত্র।

নদীগর্ভে: ভাঙছে রূপনারায়ণের পাড়।নিজস্ব চিত্র।

Advertisement

রূপনারায়ণের ভাঙনে বিপন্ন মহিষাদল ব্লকের অমৃতবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মায়াচর। বছর পাঁচেক ধরে ভাঙনের কবলে নিশ্চিহ্ন হয়েছে একাধিক ঘরবাড়ি। কিন্তু ভাঙন যে ভাবে বাড়ছে তাতে আশঙ্কায় এখানকার বাসিন্দারা। পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, মায়াচরের দক্ষিণ দিকে ভাঙন তীব্র।

Advertisement

মহিলাদলের এই দ্বীপভূমির তিনদিই ঘিরে রেখেছে রূপনারায়ণ নদ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রোজই পাড় ভেঙে ক্রমশ এগিয়ে আসছে নদ। তাঁদের অভিযোগ, নদীবেষ্টিত হওয়ায় যাতায়াতের স্স্যা প্রচণ্ড। ফলে প্রশাসনের কর্তাদেরও আসা-যাওয়া খুবই কম। ভাঙন রোধে জেলা প্রশাসনের তরফে কোনও পদক্ষেপই করা হয়নি। ফলে প্রতিনিয়ত পরিবার নিয়ে সব হারানোর আশঙ্কায় দিন কাটছে। ভাঙনে আশ্রয় হারিয়েছেন রাজেন্দ্র নাথ সামন্ত, অমৃত সিংহ,যতীন্দ্রনাথ ধাড়া। রাজেনবাবু বলেন, ‘‘ভাঙন যে কত তীব্র হতে পারে আশ্রয় হারিয়ে তা বুঝেছি। দুপুরে বাড়ির কাছে পুকুরে স্নান করতে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে আর ঘর পাইনি। ভাগ্যিস পরিবারের কেউ তখন বাড়িতে ছিল না। সহায়-সম্বল সবই তলিয়ে গিয়েছে নদীতে।’’ রাজেনবাবুর মতোই অভিজ্ঞতা অন্যদেরও। স্থানীয় শিক্ষক মধুসূদন গুছাইত বলেন, ‘‘চোখের সামনে রোজই দেখছি জমি, বাড়ি-ঘর গিলে নিচ্ছে রূপনারায়ণ। আগে এই দ্বীপ আড়াই কিলোমিটার চও়ড়া ছিল। এখন তা মাত্র দেড় কিলোমিটারে ঠেকেছে।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুরের এই দ্বীপভূমিতে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের বাস। পঞ্চায়েতের সদস্য সংখ্যা ১৫। এর মধ্যে তৃণমূলের পাঁচ। বাকি বাম ও নির্দল। বামেদের অভিযোগ, এখানে ভাঙনের সমস্যা বহুদিনের। অথচ রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে উদাসীন। তৃণমূলের অভিযোগ, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা পঞ্চায়েত থেকে কোনও সাহায্য পান না। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে সিপিএম।

সিপিএমের পঞ্চায়েত প্রধান মধুমিতা দলুই, বলেন, ‘‘পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। প্রতিদিন নদীবাঁধ ভাঙছে। জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া ভাঙন রোধ সম্ভব নয়। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পঞ্চায়েত থেকে সাহায্য করা হচ্ছে।’’

মায়াচরের ভাঙন নিয়ে মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তিলক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা মায়াচরে ৫০ লক্ষ টাকা খরচ করে একটি সাব সেন্টার তৈরি করেছি। ভাঙনে বিপন্ন মানুষ সেখানে আশ্রয় নিতে পারবেন।’’ তমলুকের সাংসদ দিবেন্দু অধিকারী জানান, মায়াচরের ভাঙন নিয়ে সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সেচ দফতরকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

দক্ষিণবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেচ দফতরের মুখ্য বাস্তুকার অনীশ ঘোষ বলেন, ‘‘মায়াচরে ভাঙনের বিষয়টি জানি। হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এর জন্য অর্থ বরাদ্দ করলে ভাঙন রোধের কাজ করা হবে।’’

হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তরফে সিইও উজ্জ্বল সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘মায়াচরের ভাঙন আটকানো সেচ দফতরের কাজ। এর জন্য আমাদের অর্থ বরাদ্দ করার প্রশ্নই ওঠে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন