এক দশক পার, ইস্পাত-বঞ্চনা এখনও বেঁধে শালবনিকে 

শালবনির মানুষ অবশ্য এখনও ইস্পাত প্রকল্পের আশায় দিন গুনছেন, একই আশা জমিদাতাদেরও। এশিয়ার সব থেকে বড় ইস্পাত প্রকল্প যে হওয়ার কথা ছিল এই শালবনিতেই।

Advertisement

বরুণ দে

শালবনি শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৮ ০২:২৪
Share:

দীর্ঘশ্বাস: শালবনিতে জিন্দলদের সিমেন্ট কারখানার কাছে। ইনসেটে, ২০০৮ সালে বিস্ফোরণে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া সেই গাড়ি। ছবি: কিংশুক আইচ, ফাইল চিত্র

‘আজ বছর দশ পর...দীর্ঘশ্বাস করে ভর...।’

Advertisement

বৃহস্পতিবার দুপুরে নচিকেতার গানটা ভেসে আসছিল শালবনির গাইঘাটার এক চা-তেলেভাজার দোকান থেকে। মোবাইলে গানটা শুনছিলেন বছর বত্রিশের এক যুবক। পাশেই ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক।

ঠিক ১০ বছর আগের ২ নভেম্বর এই গাইঘাটার অদূরেই জিন্দলদের প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানার শিলান্যাস করতে এসেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শালবনি থেকে মেদিনীপুরে ফেরার পথে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ ঘটে। একই কনভয়ে ছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ানও। ভাদুতলার অদূরে কলাইচন্ডী খালের উপর মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণের কবলে পড়ে। মাইন পেতেছিল মাওবাদীরা। বুদ্ধবাবুরা জখম হননি। তবে বিস্ফোরণে একটি ‘পাইলট- কার’ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জখম হন পুলিশ কর্মীও।

Advertisement

এই ঘটনার সূত্রেই তেতে ওঠে গোটা জঙ্গলমহল। ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে জড়িতদের খোঁজে লালগড়ে হানা দেয় পুলিশ। মাওবাদী সন্দেহে ধরপাকড় শুরু হয়। এর প্রতিবাদেই গড়ে ওঠে ‘পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনগণের কমিটি’। লালগড়-আন্দোলনের সেই শুরু। তারপর রাজনীতির জল বহু দূর গড়িয়েছে, রাজ্যে পালাবদল হয়েছে। তবে ইস্পাত কারখানা আর পায়নি শালবনি। অনেক টানাপড়েনের পরে মাথা তুলেছে সিমেন্ট প্রকল্প। চলতি বছরের গোড়ায় সেই প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। ছিলেন জিন্দল গোষ্ঠীর কর্ণধার সজ্জন জিন্দলও।

শালবনির মানুষ অবশ্য এখনও ইস্পাত প্রকল্পের আশায় দিন গুনছেন, একই আশা জমিদাতাদেরও। এশিয়ার সব থেকে বড় ইস্পাত প্রকল্প যে হওয়ার কথা ছিল এই শালবনিতেই। জমিদাতা সংগঠনের সম্পাদক পরিষ্কার মাহাতো বলেন, ‘‘সিমেন্ট কারখানা হয়েছে ভাল। তবে আমরা এখনও ইস্পাত প্রকল্পের আশায় রয়েছি। ইস্পাত প্রকল্প হলে শালবনি অনেক বদলে যাবে।’’

বড় শিল্প স্থাপনের জন্যই জিন্দলদের পশ্চিম মেদিনীপুরে এনেছিল রাজ্য সরকার। সেটা ২০০৭ সাল, বাম-আমল। কয়েকটি এলাকার জমি দেখার পরে শালবনির জমি জিন্দলদের পছন্দ হয়।

শালবনিতে মোট ৪,৩৩৪ একর জমি নিয়েছিল জিন্দল গোষ্ঠী। এর মধ্যে ৩,০৩৫ একর জমি ছিল খাস। ৭৯৯ একর জমি প্রাণিসম্পদ দফতরের ছিল। ১৮৯ একর জমি পাট্টা প্রাপকদের থেকে ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে ফিরিয়ে নিয়েছিল রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম। বাকি ২৯৪ একর জমি ছিল রায়তি। জমিদাতাদের থেকে সরাসরি কিনে নিয়েছিল জিন্দলরা। শালবনিতে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা লগ্নি করে সিমেন্ট কারখানা করা হয়েছে। পরে রঙের কারখানা-সহ একাধিক প্রকল্প হওয়ার কথা। জমিদাতা সংগঠনের সম্পাদক পরিষ্কার মাহাতোর কথায়, ‘‘দেরিতে হলেও একটা কারখানা চালু হয়েছে। তবে শালবনির মানুষ ইস্পাত কারখানার জন্যই জমি দিয়েছেন।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘দেখতে দেখতে দশ বছর কেটে গেল। এই তো সে দিন কারখানার পাঁচিলের জন্য পাথর আসল। পরে পাঁচিল তৈরি হল। পরে আবার ছোট কারখানার জন্য (সিমেন্ট কারখানা) চিমনি তৈরি হল। সেই চিমনি থেকে ধোঁয়া বেরোতে শুরু করল।" ‘আজ বছর দশ পর...খুঁজতে গেলাম...স্মৃতির নুড়িপাথর...।’ ২ নভেম্বরের আগে স্মৃতি হাতড়াচ্ছে শালবনিও!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন