বিয়ের অনুষ্ঠানে সচেতনতার বার্তা।
বিয়ের আসরে বাজছে সানাই। গোটা বাড়ি সেজে উঠেছে আলোয়। নিমন্ত্রিতেরাও একে একে আসতে শুরু করেছেন। তবে মণ্ডপে ঢোকার মুখেই থমকে দাঁড়াচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের চোখ আটকে যাচ্ছে একটি ব্যানারে। যাতে বড় বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে, ‘মেয়েদের ঋতুচক্র। প্রকৃতির নিয়ম, কুসংস্কার বা লোকলজ্জার নয়’।
পটাশপুর থানার ১ নম্বর ব্লকের পুয়াতলা (তালাডিহা) গ্রামের বাসিন্দা ঘনশ্যাম কুইল্যার ছেলে সহদেব কুইল্যার বিয়েতে এমন বেশ কয়েকটি ‘চমক’ পেয়েছেন আমন্ত্রিতেরা। গত মঙ্গলবার ছিল সহদেববাবুর বিয়ে। গোটা বিয়ে বাড়ি জুড়েই দেখা গিয়েছে নানা সামাজিক বার্তা। পেশায় অধ্যাপক সহদেববাবুর বিয়ের কার্ডে ছিল সর্বশিক্ষা অভিযানের লোগো। আর মেনু কার্ডে ছিল মিশন নির্মল বাংলার প্রচার।
প্রত্যন্ত গ্রামে মেয়েদের ঋতুস্রাব নিয়ে সচেতন করতে ভাগনি প্রিয়ঙ্কা ঘোড়াই, স্ত্রী বিদিশাকে সঙ্গে নিয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিনও বিলি করেছেন সহদেববাবু। ওই দিন ৭০ জন মহিলাকে ন্যাপকিন দেওয়া হয়। ঋতুস্রাবের সময় গ্রামের মেয়েদের গতানুগতিক নোংরা কাপড়ের ব্যবহার কীভাবে তাঁদের বিপদ ফেলতে পারে, তা বোঝানোর চেষ্টা করা হয়।
এ ব্যাপারে সহদেববাবু বলেন, ‘‘এক সময় চরম দারিদ্রে বড় হয়েছি। ওই সময় দেখেছি গ্রামে কত রকমের কুসংস্কার এবং ভ্রান্তধারণা রয়েছে। তাই আমার এই উদ্যোগ।’’
সাতমাইলে সহদেববাবুর স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক শেখ আব্দুল রহিম বলেন, ‘‘ওঁর মতো সমাজ সচেতনতার এই প্রবণতা আরও বেশী করে মানুষের মধ্যে গড়ে উঠুক। সহ সময় সহদেবের পাশে রয়েছি।’’ শুধু শিক্ষক নন, সহদেববাবুর পদক্ষেপে খুশি গ্রামের মানুষও। তাঁদেরও বক্তব্য, সমাজ সচেতনতার বার্তাই আগামিদিনে সকলকে সঠিক রাস্তায় চালনা করবে।
সহদেব-বিদিশার দাম্পত্যের পথ চলা শুরু। সেই সঙ্গে শুরু কুসংঙ্কার ভেঙে সমাজকে সচেতন করার তাঁদের আরও এক নতুন প্রয়াসের!