স্কুলের জমি হাতিয়ে কাঠগড়ায় তৃণমূল নেতা

তিনি শাসক দলের নেতা। স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতিও। সেই পদ ব্যবহার করেই স্কুলের প্রায় ৩৮ কাঠা জমি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল দাসপুরের চাঁইপাট হাইস্কুলের সভাপতি, স্থানীয় তৃণমূল নেতা অনুপ আলুর বিরুদ্ধে। অনুপ ওই স্কুলের প্রাক্তন সম্পাদকও বটে। সেই পদের সই, স্ট্যাম্প জালিয়াতি করেই আনুমানিক পঞ্চাশ লক্ষ টাকার স্কুলের জমি ওই তৃণমূল নেতা হাতিয়ে নিয়েছিলেন অভিযোগ।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

দাসপুর শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৪১
Share:

স্কুলের সামনের এই জমি ঘিরেই বিতর্ক। কৌশিক সাঁতরার তোলা ছবি।

তিনি শাসক দলের নেতা। স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতিও। সেই পদ ব্যবহার করেই স্কুলের প্রায় ৩৮ কাঠা জমি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল দাসপুরের চাঁইপাট হাইস্কুলের সভাপতি, স্থানীয় তৃণমূল নেতা অনুপ আলুর বিরুদ্ধে।

Advertisement

অনুপ ওই স্কুলের প্রাক্তন সম্পাদকও বটে। সেই পদের সই, স্ট্যাম্প জালিয়াতি করেই আনুমানিক পঞ্চাশ লক্ষ টাকার স্কুলের জমি ওই তৃণমূল নেতা হাতিয়ে নিয়েছিলেন অভিযোগ। অথচ সেই বাবদ স্কুলের তহবিলে এক টাকাও জমা পড়েনি। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পরে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শাসক দলের একাংশ অনুপকে বাঁচাতে উঠেপড়ে লাগে। বেগতিক দেখে অনুপ ওই জমি ফের স্কুলকে হস্তান্তর করে দেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের মদত ছাড়া কী করে এই কাণ্ড ঘটল সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ নিয়ম বলছে, স্কুল পরিচালন কমিটির সম্মতি না থাকলে কেউ স্কুলের সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারে না। তা ছাড়া, সম্পাদকের সই, স্ট্যাম্প জালিয়াতি-সহ সরকারি জমি আত্মসাতের ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অরুণ পাল বলেন, ‘‘আমার অগোচরেই ঘটনাটি ঘটেছে। বিষয়টি অত্যন্ত নিন্দনীয়। তবে জানার পরই আগে আমরা জমি ফেরত নিয়ে নিয়েছি। এ বার দ্রুত পরিচালন সমিতির বৈঠক ডাকা হবে। তারপরই আইনের পথে যাব।’’

আর অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা অবলীলায় বলছেন, “ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি। তা ছাড়া, আমি তো জমি ফেরত দিয়ে দিয়েছি।’’ স্কুল সম্পাদকের সই, স্ট্যাম্প ব্যবহার প্রসঙ্গে তাঁর আবার যুক্তি, ‘‘আমি এখন সম্পাদক নেই ঠিকই, আগে তো ছিলাম। তাই স্ট্যাপ আমার বাড়িতেই ছিল।” কিন্তু জমির মূল্য স্কুলকে দেওয়া হল না কেন? এ বার ঝাঁঝিয়ে ওঠেন শাসক দলের নেতা। তাঁর জবাব, ‘‘এত সব কথা আমি সাংবাদিকদের বলতে পারব না।’’

Advertisement

অনুপ যতই দাপট দেখান না কেন, স্কুলের জমি চুপিসাড়ে আত্মাসাতের কথা জেনে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার অনুপ আলু-সহ ঘটনায় যুক্ত বাকিদের নামে থানায় মামলা রুজুর দাবিতে স্কুলে বিক্ষোভ দেখায় সিপিএম। সিপিএমের জোনাল কমিটির সদস্য তথা দাসপুর বিধানসভার প্রার্থী স্বপন সাঁ‌তরা বলেন, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষ না করলে আমরা থানায় অভিযোগ করব।’’ বিষয়টি লিখিতভাবে মহকুমাশাসক, বিডিও, জেলা স্কুল পরিদর্শককে দলের তরফে জানানো হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্কুল পরিদর্শক অমর কুমার শীল বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। স্কুলের জমি কেউ এ ভাবে নিতে পারে না। স্কুল কর্তৃপক্ষকে জরুরি বৈঠক ডাকতে বলা হয়েছে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ ঘাটালের মহকুমাশাসক পিনাকিরঞ্জন প্রধানেরও বক্তব্য, ‘‘স্কুলের জমি কী ভাবে একটি সংস্থার নামে রেজেস্ট্রি হয়ে গেল, তা তদন্ত করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

জানা গিয়েছে, চাঁইপাট হাস্কুলের নিজস্ব সাড়ে চার একর জমি রয়েছে। সম্প্রতি স্কুলের উদ্যোগে একটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালুর সিদ্ধান্ত হয়। ইতিমধ্যে ওই শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলার জন্য ‘চাঁইপাট হাইস্কুল ট্রাস্ট’ একটি বেসরকারি সংস্থা অনুমোদন পায়। ওই ট্রাস্টের নামেই চাঁইপাট ভগবতী দেবী শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলার জন্য যাবতীয় প্রস্ততি চলছে। অনুপই ওই সংস্থার সম্পাদক। তবে জানা গিয়েছে, পেশায় স্কুল শিক্ষক অনুপই বকলমে ওই সংস্থার মালিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের একাধিক শিক্ষকও বলেন, “ওই শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি স্কুলের নামে হলেও গোপনে অনুপ বা তাঁর সঙ্গীরা নিজেদের নামে তা করে নেওয়ার তোড়জোড়ও শুরু করেছিলেন। তাই গোপনে স্কুলের জমিও নিয়ে নিয়েছিলেন।”

গত ২২ এপ্রিল দাসপুর রেজিস্ট্রি অফিসে স্কুলের জমি ওই বেসরকারি সংস্থার নামে রেজিস্ট্রি করিয়ে নেওয়ার সময় স্থানীয় দুই তৃণমূল নেতা জিতেন্দ্রনাথ নায়েক ও দেবাশিস মণ্ডল সাক্ষী হিসাবে সই করেন বলেও জানা গিয়েছে। তবে পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে এই দুই নেতা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তবে তৃণমূলেরই একটি সূত্রের খবর, ঘটনাটির দলীয় ভাবে তদন্ত শুরু হয়েছে। তৃণমূলের দাসপুর-২ ব্লক সভাপতি তপন দত্ত বলেন, ‘‘বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি খোঁজ নিচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন