পুলিশের ‘যাত্রা’-ভঙ্গ বিরোধে সরগরম দিঘা

পুলিশের সঙ্গে যুব মোর্চার কর্মী-সমর্থকদের দফায় দফায় ধস্তাধস্তি ও তর্কবিতর্ক চলল। দিঘা ছাড়ার পরে পূর্ব মেদিনীপুরের মারিশদা ও ভূপতিনগর থানা এলাকাতেও বাইক র‌্যালিতে থাকা যুব কর্মীদের পুলিশ হেনস্থা করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিজেপি।

Advertisement

শান্তনু বেরা

কাঁথি শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
Share:

বিবদমান: পুলিশের সামনেই স্লোগান দিচ্ছেন বিজেপি কর্মীরা। নিউ দিঘায়। নিজস্ব চিত্র

হাইকোর্টের অনুমতি মেলায় পূর্ব ঘোষণা মতোই বিজেপি-র যুব মোর্চার ‘প্রতিরোধ সঙ্কল্প যাত্রা’-র জমায়েত হয়েছিল দিঘায়। কিন্তু সেই অভিযান ঘিরে বৃহস্পতিবার দিনভর সরগরম রইল সৈকত শহর। পুলিশের সঙ্গে যুব মোর্চার কর্মী-সমর্থকদের দফায় দফায় ধস্তাধস্তি ও তর্কবিতর্ক চলল। দিঘা ছাড়ার পরে পূর্ব মেদিনীপুরের মারিশদা ও ভূপতিনগর থানা এলাকাতেও বাইক র‌্যালিতে থাকা যুব কর্মীদের পুলিশ হেনস্থা করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিজেপি।

Advertisement

এ দিন সকালে নিউ দিঘার যুব আবাসমোড়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙেই সমুদ্র থেকে ঘট উত্তোলন করে যুব মোর্চার বাইক র‌্যালির উদ্বোধন করেন নদী উন্নয়ন ও গঙ্গা পুনরুজ্জীবন দফতরের কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল। বেলা ১১টা ২০ মিনিটে তিনি গাড়িতে চেপে দিঘা ছাড়ার পরে যুব আবাস মোড়েই পুলিশ ‘রোড ডিভাইডার’ ফেলে বাইক র‌্যালির পথ আটকায়। দুপুর ২টো ২০ মিনিট পর্যন্ত ওল্ড দিঘা এবং নিউ দিঘার মাঝে রাস্তার উপর পুলিশের ব্যারিকেড ছিল আঁটোসাটো। তারই মধ্যে অবশ্য প্রায় চারশো বাইক বিভিন্ন গলিপথ দিয়ে দিঘা বাইপাস হয়ে পুলিশের নজর এড়িয়ে চলে যায়। ঘুরপথে দিঘা ছাড়েন ভারতীয় যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি দেবজিৎ সরকারও। আর একশো বাইক নিয়ে পুলিশের ব্যারিকেডে আটকে পড়েন বিজেপির পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি সোমনাথ রায় ও ভারতীয় যুব মোর্চার রাজ্য নেতা অনিল সিংহ।

যুব মোর্চার এই বাইক র‌্যালি আটকাতে এ দিন দিঘায় হাজির ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু, কাঁথি মহকুমা পুলিশ আধিকারিক পার্থ ঘোষ, ছিল র‌্যাফও। পুলিশের ব্যাখ্যা, দলীয় পতাকা নিয়ে এ ভাবে যানজট করে এত সংখ্য মোটর বাইক নিয়ে র‌্যালি করার অনুমতি নেই। বিজেপি-র নেতা-কর্মীরা পাল্টা জানান, হাইকোর্টের অনুমতির পরে এ ভাবে পুলিশ র‌্যালি আটকাতে পারে না। এই টানাপড়েনে দিঘার রাস্তায় যানজট তৈরি হয়, আটকে পড়েন বহু পর্যটকও। শেষ পর্যন্ত বিজেপির দলীয় পতাকা গুটিয়ে এক এক জন করে বাইক আরোহী ছাড়া পান।

Advertisement

পাগড়ি: চলছে র‌্যালি হেলমেট নেই মন্ত্রীর মাথায়। নিজস্ব চিত্র

র‌্যালির উদ্বোধন নিয়েও এ দিন বিতর্ক বেধেছে। যে বাইকে চেপে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী র‌্যালির সূচনা করেন, তার চালকের হেলমেট ছিল না বলে অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক দিব্যেন্দু অধিকারী বলেন, “একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর আইন সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তিনি তা করেননি।’’

যদিও বিজেপির জেলা সভাপতি সোমনাথ রায়ের দাবি, “আইন মেনেই এ দিন সব হয়েছে। রাজ্যের পুলিশ বেআইনি ভাবে আমাদের দিঘায় আটকেছে।’’ দিঘা ছাড়ার আগে রাজ্য সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়ালও বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ কাঁথি ও সবং উপ-নির্বাচনে আমরা ভাল ফল করেছি। পুলিশ ও প্রশাসনকে বলছি সতর্ক হোন। এই রাজ্যেও একদিন পদ্ম ফুটবে। আর মিটিং-মিছিল করার গণতান্ত্রিক অধিকার সব দলের আছে।’’

নিউ দিঘার যুব আবাস মাঠে আদালতের অনুমতি নিয়ে বুধবার রাতে মঞ্চ বাঁধার কাজ হলেও পুলিশ তা করতে দেয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন যুব মোর্চার নেতৃত্ব। মাইক ও তিন প্যান্ডেল কর্মীকে আটকও করেছে পুলিশ। পুলিশের অবশ্য দাবি, র‌্যালির অনুমতি থাকলেও মঞ্চ বা সভার অনুমতি ছিল না। প্যান্ডেল কর্মীদের সে কথা জানানোয় তাঁরা নিজেরাই চলে যান।

অন্য দিকে, দিঘা-নন্দকুমার ১১৬ বি জাতীয় সড়কে মারিশদা ও বাজকুলে বাইক আরোহীদের আটকানোর প্রেক্ষিতে পুলিশের ব্যাখ্যা, ১১ থেকে ১৮ জানুয়ারি পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ চলছে। তাই এই দুই জায়গায় নজরদারি চলছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও হেলমেট না থাকায় মারিশদা পুলিশ ৩০ জন ও ভূপতিনগর থানার পুলিশ ৯ জনকে আটক করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন