আদালতের পথে রঞ্জন মাইতি। —নিজস্ব চিত্র।
পিংলা বিস্ফোরণের ঘটনায় ধৃত তৃণমূল কর্মী রঞ্জন মাইতির গোপন জবানবন্দি নিতে চেয়ে মেদিনীপুর আদালতে আবেদন জানাল সিআইডি। আদালত আবেদন মঞ্জুরও করেছে। কবে জবানবন্দি নেওয়া হবে, তা অবশ্য ঠিক হয়নি। মেদিনীপুরের তৃতীয় অতিরিক্ত বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট মহম্মদ মহিবুল্লার এজলাসে ধৃতের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হতে পারে। রঞ্জন সিআইডি হেফাজতে ছিলেন। সেই মেয়াদ ফুরনোয় শুক্রবার তাকে মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে হাজির করা হয়। জামিনের আবেদন নাকচ করে ধৃতের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত।
ইতিমধ্যে মুস্তাক শেখ নামে বিস্ফোরণে জখম এক কিশোরের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে মেদিনীপুর আদালতে। মুর্শিদাবাদের সুতির এই কিশোর ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী। গত ৬ মে পিংলার ব্রাক্ষ্মণবাড়ে বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃত্যু হয় ১২ জনের। জখম হয় ৪ জন। গোড়ায় ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ। পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তদন্তভার হাতে নেয় সিআইডি। ইতিমধ্যে রঞ্জনের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে সিআইডি। তল্লাশিতে অবশ্য সন্দেহজনক কিছুই মেলেনি। বাড়ির মধ্যে কয়েকটি আলমারি রয়েছে। আলমারিগুলোয় তালা লাগানো রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে সিআইডি কর্তারা ভেবেছিলেন, হেফাজতে থাকাকালীনই ধৃতকে নিয়ে এসে একবার তল্লাশি চালাবেন। অবশ্য শেষমেশ তা সম্ভব হয়নি। জানা যাচ্ছে, রঞ্জনকে দেখতে পেরে এলাকার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়বেন, তখন পরিস্থিতি অন্য দিতে মোড় নিতে পারে, এই আশঙ্কা থেকেই ধৃতকে ব্রাক্ষ্মণবাড়ে নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নেয়নি সিআইডি। তদন্তকারী সংস্থার কর্তারা অবশ্য বিস্ফোরণস্থলে এসে প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এই সব নমুনা পরীক্ষা- নিরীক্ষার জন্য ‘সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি’- তে (এসএফএসএল) পাঠিয়েও দিয়েছেন। সিআইডি সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে তদন্ত কিছুটা এগিয়েছে। রঞ্জনকে জেরা করে কিছু তথ্য জানা গিয়েছে।
এও জানা গিয়েছে, বেআইনি বাজি কারবারে রঞ্জনের ভাই নিমাই মাইতিও যুক্ত। নিমাইয়ের একটি পিক- আপ- ভ্যান রয়েছে। এই ভ্যানে করেও বিভিন্ন এলাকায় বাজি সরবরাহ করা হত। এই পরিস্থিতিতে রঞ্জনের ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি বলেই মনে করছেন তদন্তকারী সংস্থার কর্তারা। যদি দেখা যায় জিজ্ঞাসাবাদের সময় নিমাই কিছু লুকোচ্ছেন কিংবা রঞ্জনের বয়ানের সঙ্গে তাঁর বয়ান মিলছে না, তখন তাঁকে গ্রেফতারও করা হতে পারে। নিমাইয়ের স্ত্রী সুলেখা মাইতি তৃণমূলের স্থানীয় মহিলা নেত্রী। রঞ্জনের ভাই অবশ্য ঘটনার পর থেকেই পলাতক। তাঁর খোঁজ চলছে বলেই সিআইডি- র এক সূত্রে খবর। পিংলার ঘটনায় এনআইএ তদন্তের দাবিতে সরব বিরোধীরা।
তাদের দাবি, এখানে বাজির আড়ালে বোমাই তৈরি হত। পিডিএসের নেত্রী অনুরাধা দেব যেমন বলেছেন, “বাজিটাজি বলে যতই দায় এড়ানোর চেষ্টা হোক না কেন, ব্রাক্ষ্মণবাড়ে সাঙ্ঘাতিক ধরণের বিস্ফোরণ হয়েছে। এটা ভয়ঙ্কর ব্যাপার।” বিজেপির রাজ্য সহ- সভাপতি সুভাষ সরকার বলেছেন, “পিংলার ঘটনাই প্রমাণ করে বোমা তৈরি যেন এ রাজ্যে কুটির শিল্পে পরিণত হয়েছে।” একধাপ এগিয়ে সিপিএম নেতা সুশান্ত ঘোষ বলেছেন, “বলা হচ্ছে বাজি দুর্ঘটনা। পৃথিবীতে এমন কোনও বাজি আছে না কি যা ফাটলে মানুষের দেহ গাছের ডালে উঠে যায়।’’
তৃণমূলের অবশ্য দাবি, ব্রাক্ষ্মণবাড়ে কোনও বোমা কারখানা ছিল না।