Waste Management Plant

বাজেয়াপ্ত মাদক থেকে বাজি, নীরবেই নষ্ট হুগলি তীরের কারখানায়

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংস্থার এক আধিকারিক জানান, এই নিষ্ক্রিয় করার পদ্ধতিতে বাতাস এবং ভুগর্ভস্থ জল যাতে কোনও ভাবেই দূষিত হয় তার প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হয়।

Advertisement

সৌমেন মণ্ডল

হলদিয়া শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৫৬
Share:

বাজি নিষ্ক্রিয়করণের কারখানা। —নিজস্ব চিত্র।

শিল্প ও বন্দর শহর হিসেবেই পরিচিতি হলদিয়ার। এখানে রয়েছে শতাধিক কারখানা ও সামুদ্রিক বন্দরও। আর সেই শহরেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্ববৃহৎ ভস্মীকরণ চুল্লি (ইনসিনেরেটর প্ল্যান্ট)। এখানেই নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছে দত্তপুকুরে বিস্ফোরণ কাণ্ডের পরে উদ্ধার হওয়া ১৫০ টন নিষিদ্ধ বাজি।

Advertisement

হলদিয়া পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব শ্রীকৃষ্ণপুরে রয়েছে ‘পশ্চিমবঙ্গ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা লিমিটেড’। এখানে শুধু বাজি নয়, বিভিন্ন কারখানার বর্জ্য থেকে ‘নারকোটিক্স’ দফতর বাজেয়াপ্ত বিভিন্ন মাদক দ্রব্য (হেরোইন, ব্রাউন সুগার, গাঁজা) নষ্ট করা হয়। করোনা কালে রাজ্যের বহু করোনা-বর্জ্যেরও শেষ ঠিকানা ছিল এই কারখানা। সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে অন্তত ন’জনের। পুলিশি অভিযানে সেখান থেকে উদ্ধার হওয়া ১৫০ টন বাজিও এখানেই নষ্ট করা হবে।

হুগলির পশ্চিম তীরে প্রায় ৭০ একর জমিতে এই কারখানার চারপাশ উঁচু পাঁচিলে ঘেরা। এলাকাবাসীর দাবি, এখানে শিল্পাঞ্চলের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হয় তাঁরা জানেন। কিন্তু বাজি নিষ্ক্রিয় করা হয় বলে জানতেন না। স্থানীয় বাসিন্দা শেখ সাদ্দামের কথায়, ‘‘কারখানায় বাজি নিষ্ক্রিয় করা হয় এই প্রথম শুনলাম। কোনওদিন বাজি ফাটার আওয়াজ পাইনি।’’ এলাকার প্রাক্তন পুর প্রতিনিধি চন্দন মাঝিরও বক্তব্য, ‘‘কোনও দিনও আওয়াজ পাইনি।’’

Advertisement

শিল্প-শহরের বিভিন্ন কারখানার দূষণ নিয়ে হামেশাই প্রশ্ন তোলেন পরিবেশ প্রেমীরা। এখানেও কি ছড়ায় দূষণ?

বছর দুয়েক আগে পুলিশ নৈহাটিতে বেআইনি বাজি নিষ্ক্রিয় করার সময় জনরোষের মুখে পড়েছিল। অভিযোগ ছিল, ওই বাজি নিষ্ক্রিয় করার জন্য যে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল, তার অভিঘাতে নৈহাটি পুর এলাকায় বহু ঘরবাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। কিন্তু হলদিয়ায় হাজার হাজার টন বাজি নিষ্ক্রিয় করা হলেও স্থানীয় মানুষ তা জানতেই পারেন না। সংস্থা সূত্রের খবর, এখানে বিস্ফোরণ ছাড়া বাজি নিষ্ক্রিয় করা হয় বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহার করে। প্রথমে বাজেয়াপ্ত বাজির এখানের নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। নমুনা পরীক্ষার পরে ঠিক হয় এর সঙ্গে কোন ধরনের রাসায়নিক মেশানো হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংস্থার এক আধিকারিক জানান, এই নিষ্ক্রিয় করার পদ্ধতিতে বাতাস এবং ভুগর্ভস্থ জল যাতে কোনও ভাবেই দূষিত হয় তার প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হয়। ৩০ একর জমিতে এই সায়েন্টিফিক ল্যান্ড ফিলের কাজ করা হয়। প্রথমে একটি পুকুর খোঁড়া হয়। একটা পুরু মাটির স্তরের ওপর জিও টেক্সটাইল এবং জিও মেমব্রনের আচ্ছাদন তৈরি করা হয়। একই ভাবে তার ওপর আরেকটি আচ্ছাদন তৈরি করা হয়, যাতে প্রথম আচ্ছাদনে সমস্যা হলেও দ্বিতীয় আচ্ছাদন দূষণ প্রতিরোধ করতে পারে। এরপর উদ্ধার হওয়া বাজির মশলার সঙ্গে মিশ্রিত রাসায়নিক পাহাড়ের টিলার আকার নিলে ফের তার উপর ওই রকম আরও আচ্ছাদন করা হয়। এর ফলে পুরো মিশ্রণটি দূষণ প্রতিরোধী ক্যাপসুলের মধ্যে আটকে থাকে।পুরো প্রক্রিয়াটাই চলে কারখানা চত্বরে, উঁচু পাঁচিলের ভেতরে। তাই কেউ টের পান না ভেতরে কী চলছে।

সত্যিই কি এই পদ্ধতিতে দূষণ ছড়ায় না? সংস্থার প্রজেক্ট হেড সপরেন্দু চট্টোপাধ্যায় ‘বৈঠকে ব্যস্ত’ বলে ফোন কেটে দেন। তবে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আধিকারিক সৌভিক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাজিতে যে সব রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, সেগুলির প্রতিটি ক্ষেত্রেই দূষণ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে। তবে হলদিয়ায় গর্ত খুঁড়ে বাজি নিষ্ক্রিয়করণ করা হলে, নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় দূষক পদার্থগুলিকে আলাদা করা হবে। তাতে দূষণের সম্ভাবনা নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন