হেরেও হার স্বীকার করা যাবে না কিছুতেই। তাই ভোটের ফলে পিছিয়ে থেকেও আসন দখলের লড়াই এখনও যেন কিছুতেই থামছে না। সেটা চাঁইপাট কলেজ হোক বা ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজ। দু’জায়গার ছবিটা একই রকম।
চাঁইপাট কলেজের ১৫টি আসনের মধ্যে ৯টিতে দখল পেয়েছে এসএফআই। বাকি ৬টা টিএমসিপির দখলে। ঝাড়গ্রামের কলেজের লড়াইটা আবার তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। সেখানে ১৫টি আসনের মধ্যে ৯টি আসন পায় টিএমসিপি-র জেলা নেতা সৌমেন আচার্যের গোষ্ঠী। আর বাকি আসন পায় ঝাড়গ্রাম শহর টিএমসিপি-র স্বঘোষিত নেতা আর্য ঘোষের গোষ্ঠী। কিন্তু দু’ক্ষেত্রেই এই হার মেনে নিতে নারাজ বিরোধীরা।
চাঁইপাট কলেজে জয়ী এসএফআই কর্মী-সমর্থকদের অভিযোগ, শুক্রবার রাত থেকেই দলের সমর্থকদের মারধর এমনকী বাড়ি ছাড়া করার হুমকি দিচ্ছে শাসক দল তৃণমূলের লোকজন। এসএফআইএর রাজ্য কমিটির সদস্য বিমল দাস বলেন, “শুক্রবার রাতে আমাদের দলের বহু কর্মী-সমর্থক বাড়ি ফিরতে পারেননি। এমনকী জয়ী সদস্যদের টাকার টোপ দিতেও শুরু করেছে টিএমসিপি।” ইতিমধ্যে দাসপুর থানায় মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছেনও তিনি। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল ও দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সহ-সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তাই চাঁইপাট কলেজে মনোনয়ন প্রক্রিয়া থেকে ভোট পর্যন্ত কোনও অশান্তি হয়নি। এখনও হবে না। হুমকি ও টাকার টোপ দেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়।”
ছবিটা একই ঝাড়গ্রাম কলেজেও। এখানে ভোটের ফলে এগিয়ে টিএমসিপি-র জেলা নেতা সৌমেন আচার্যের গোষ্ঠী। সৌমেন অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী তথা ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি চূড়ামণি মাহাতোর অনুগামী। অন্য দিকে, ভোটের ফলে পিছিয়ে থাকলেও কৌশলে ছাত্র সংসদ গঠনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ঝাড়গ্রাম শহর টিএমসিপি-র স্বঘোষিত নেতা আর্য ঘোষ। প্রাক্তন ডিওয়াইএফ কর্মী আর্য হলেন ঝাড়গ্রামের বিধায়ক সুকুমার হাঁসদার অনুগামী। সৌমেনের অভিযোগ, “কিছু সমাজবিরোধী আমাদের নির্বাচিত প্রার্থীদের ফোনে হুমকি দিচ্ছে। তবুও ছাত্রছাত্রীদের সমর্থনে ছাত্র সংসদ আমরাই গঠন করব।” আর পিছিয়ে থাকার পরও গলা উঁচিয়ে আর্যের দাবি, ‘‘সৌমেনরা গায়ের জোরে কলেজে ঢোকার চেষ্টা করছে। আমাদের জয়ী প্রার্থীদের ভয় দেখাচ্ছে। ২৪ জানুয়ারি বোর্ড গঠনের দিন প্রমাণ করে দেব আমরা আছি, থাকব।” টিএমসিপি-র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভানেত্রী দেবলীনা নন্দীর দাবি, “কে, কী দাবি করছেন তা বলতে পারব না। ছাত্র সংসদ গঠনের জন্য ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে তবেই চূড়ান্ত তালিকাটি অনুমোদন দেওয়া হবে।”
হার স্বীকার না করার এই ঐতিহ্য অবশ্য তৃণমূলে সরকারের আমলে নতুন নয়। ভোটে হেরে গিয়েও ভয় দেখিয়ে বা টাকার প্রলোভন দেখিয়ে দল বদল করানোর বহু অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। পঞ্চায়েত, বিধানসভা বা লোকসভা নির্বাচনের সেই ধারা এ বার কলেজ নির্বাচনেও জারি থাকে কি না সেটাই দেখার।