জঙ্গলমহলের সিধু জ্যাঠা প্রয়াত

পঞ্চম শ্রেণির পরে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন অভিমানে। প্রথাগত পড়াশোনা না করলেও জঙ্গলমহলের ‘সিধু জ্যাঠা’ ছিলেন সুধাকর মাহাতো। আদিবাসী-মূলবাসী এলাকার খুঁটিনাটি ইতিহাস ছিল তাঁর নখদর্পণে। সোমবার সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রামের ধোবাধোবিন গ্রামের বাড়িতে এই প্রবীণ সমাজ-কর্মীর জীবনাবসান হয়। বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৬ ০২:২০
Share:

সুধাকর মাহাতো। নিজস্ব চিত্র।

পঞ্চম শ্রেণির পরে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন অভিমানে। প্রথাগত পড়াশোনা না করলেও জঙ্গলমহলের ‘সিধু জ্যাঠা’ ছিলেন সুধাকর মাহাতো। আদিবাসী-মূলবাসী এলাকার খুঁটিনাটি ইতিহাস ছিল তাঁর নখদর্পণে। সোমবার সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রামের ধোবাধোবিন গ্রামের বাড়িতে এই প্রবীণ সমাজ-কর্মীর জীবনাবসান হয়। বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তিনি ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে ঝাড়গ্রামের সর্বশেষ যোগসূত্র।

Advertisement

পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা ৭ টা নাগাদ বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। সুধাকরবাবুর জন্ম ১৯২৮ সালে ঝাড়গ্রামের ধোবাধোবিন গ্রামের এক চাষি পরিবারে। গ্রামের পাঠশালায় প্রাথমিকের পাঠ সাঙ্গ করে ভর্তি হন ঝাড়গ্রাম শহরের কুমুদকুমারী ইনস্টিটিউশনে। তখন ১৯৪০ সাল। শুরু হয়ে গিয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ওই বছরের ১২ মে ঝাড়গ্রাম শহরের লালগড় মাঠে (বর্তমান দুর্গা ময়দান) এক জনসভায় বক্তব্য রাখেন সুভাষচন্দ্র। তখনও তিনি নেতাজি হননি। অবিভক্ত মেদিনীপুরে সেটিই ছিল সুভাষচন্দ্রের শেষ জনসভা। বাবা লক্ষ্মীরাম মাহাতোর সঙ্গে সুভাষচন্দ্রের সভায় গিয়েছিলেন সুধাকরবাবু। তখন তিনি পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।

সুধাকরবাবুর আত্মস্মৃতি থেকে জানা যায়, সভার আগের দিন স্কুলের প্রধান শিক্ষক নোটিশ জারি করে ফতোয়া দিয়েছিলেন, সুভাষচন্দ্রের সভায় যাওয়া চলবে না। যারা যাবে, তাদের বহিষ্কার করা হবে। সুধাকরবাবু-সহ কয়েকজন স্কুলপড়ুয়া সুভাষচন্দ্রের সভায় গিয়েছিলেন, সে খবর চলে গিয়েছিল প্রধান শিক্ষকের কাছে। স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরে অপমানে আর স্কুলের চৌকাঠ মাড়াননি সুধাকরবাবু। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে স্বাধীনতা সংগ্রামী ও প্রাক্তন আন্দামান বন্দি দীনেশ দাশগুপ্ত, সমাজবাদী নেতা রাম মনোহর লোহিয়ার সংস্পর্শে আসেন সুধাকরবাবু। দীনেশবাবুদের নেতৃত্বে ষাটের দশকে বাংলা-বিহার-ওড়িশার জঙ্গলমহল জুড়ে শুরু হয় বনবাসী আন্দোলন। আদিবাসীদের জল-জঙ্গল-জমির উপর অধিকারের দাবিতে ওই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন সুধাকরবাবু। বিহারে গ্রেফতার হয়ে কিছুদিন কারাবাস করেন। পরে চাষাবাদের পাশাপাশি মন দেন সমাজসেবায়।

Advertisement

‘অরণ্যের কথা’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। পাঁচ বছর (২০০৩-২০০৮) ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। খদ্দরের পাঞ্জাবি আর ধুতি শোভিত সুধাকরবাবু বছর খানেক সাইকেল চালিয়ে ঝাড়গ্রাম শহরে আসতেন। মাস ছ’য়েক আগে একমাত্র নাতির অকাল মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন তিনি। তারপর থেকে বেশির ভাগ সময় বাড়িতেই থাকতেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন