প্রকাশ্যে ধূমপান যেন ‘নিয়ম’

নামেই আইন, হুঁশ ফেরেনি ধূমপায়ীদের

এই ঘটনা মনে করে দিচ্ছে অন্য একটি কথা—প্রকাশ্যে ধূমপান যে অপরাধ, তা যেন ভুলতেই বসেছেন সকলে। ভুলতে বসেছে সেই আইনের কথা। প্রশাসনই মানছে, ধূমপানের জরিমানা বাবদ জেলায় কোথাও কোনও আয় নেই।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:২৬
Share:

প্রকাশ্যে: সকলের সামনেই ধূমপান। নির্বিকার বাকিরাও। ঘাটালের কেন্দ্রীয় বাস স্ট্যান্ডে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

এক বৈঠকে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার ঘাটালের বীরসিংহ বিদ্যাসাগর হাসপাতালে গিয়েছিলেন জেলার সহকারি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান। হঠাৎই তাঁর চোখে পড়ে, হাসপাতালে মধ্যেই ধূমপান করছেন এক ব্যক্তি। তৎক্ষণাৎ ২০০ টাকা জরিমানাও করেন।

Advertisement

তবে এই ঘটনা মনে করে দিচ্ছে অন্য একটি কথা—প্রকাশ্যে ধূমপান যে অপরাধ, তা যেন ভুলতেই বসেছেন সকলে। ভুলতে বসেছে সেই আইনের কথা। প্রশাসনই মানছে, ধূমপানের জরিমানা বাবদ জেলায় কোথাও কোনও আয় নেই। কোনও মামলাও হয়নি।

সেই সূত্রে উঠে আসছে আরও একটি আইনের কথা। তা হল, নাবালকদের মাদক বিক্রি করা যাবে না। এ বিষয়ে সংশয় তৈরি হলে বয়সের প্রমাণপত্র দেখতে চাওয়ার এক্তিয়ারও আছে বিক্রেতার। কিন্তু নিয়ম আছে নিয়মেই। একটু চোখ রাখলেই দেখা যাবে যে কিশোর-কিশোরীদেরও দেদার বিক্রি করা হচ্ছে মদ, সিগারেট। সিগারেট কেনার পর তারা প্রকাশ্যেই ধূমপান করছে।

Advertisement

এই সব ঘটনাগুলিই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে আইন করার পরেও তৈরি যায়নি সচেতনতা। এ প্রসঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “মাঝেমধ্যে ধরপাকড় হয়। তবে সচেতনতাও জরুরি। তাই দ্রুত ওই আইন বিষয়ে অবগত করতে জেলায় অভিযান শুরু করা হবে।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার কথায়, “বছরের শুরুতেই ২০০ টাকা জরিমানা করে অভিযান শুরু করা হয়েছে। সরকারি জায়গায় কাউকে ধূমপান করতে দেখলেই ‘কোটপা’ আইনে জরিমানা-সহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বৃহস্পতিবার ডেঙ্গি-সংক্রান্ত বৈঠকে যোগ দিতে ঘাটালের হাসপাতালে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথবাবু। বৈঠক চলাকালীন এক বার বেরতেই তিনি দেখতে পান, হাসপাতাল চত্বরে ধূমপান করছেন এক ব্যক্তি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সরকারি জায়গায় ধূমপানের ঘটনায় ক্ষুব্ধ রবীন্দ্রনাথবাবু ‘কোটপা’ আইন মনে করিয়ে ২০০ টাকা জরিমানা করেন।

কোটপা (সিগারেট অ্যান্ড আদার্স টোব্যাকো প্রোডাক্টস) আইন অনুযায়ী, সরকারি জায়গার ১০০ গজের মধ্যে ধূমপান করলে ২০০ টাকা জরিমানা করার নিদান রয়েছে। একই শাস্তি বিক্রির ক্ষেত্রেও। এক ব্যক্তি একাধিক বার আইন ভাঙলে জেল ও জরিমানার ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি, নাবালকদের সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধ করতে এবং শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ২০১৫ সালে জুভেনাইল জাস্টিস (কেয়ার অ্যান্ড প্রোটেকশন অব চিলড্রেন) আইনও চালু হয়েছে। ওই আইনে মামলা হলে দোকান মালিকের ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং ১ লক্ষ টাকা জরিমানার উল্লেখ রয়েছে। তবে আইন হলেও বদলায়নি জেলা বা রাজ্যের চিত্রটা। এমনকী, দোকানগুলিতে ১৮ বছর কম বয়সীদের কাছে সিগারেট বিক্রির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা বোর্ড টাঙানো হয়নি। শহরাঞ্চলের কিছু দোকানে বোর্ড থাকলেও জেলা সদর বা গ্রামগঞ্জে নিয়মের কথাই জানেন না অনেকে। ফলে নাবালকদের কাছে সিগারেট বিক্রির প্রবণতা কমছে না। এই চিত্র কমবেশি সর্বত্র।

চিকিৎসকদের মতে, আইন থাকলেও সচেতন করতে হবে মানুষকে। না হলে এই ব্যাপারটা পুরোপুরি বন্ধ করা কঠিন। আর এই ঘটনা বন্ধ না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকবে না। সিগারেট বা ওই জাতীয় নেশা বিভিন্ন বয়সের মানুষের শরীরেই প্রভাব ফেলে। তবে কমবয়সীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তাই এই প্রবণতা ঠেকাতে না পারলে, বয়স বাড়লে তার প্রভাব পড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন