ওঝা-গুণিনে হিতে বিপরীত

পশ্চিম মেদিনীপুরে এ খুবই চেনা ছবি। বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতিতে সাপের ছোবলে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, অনেকটা দেরিতে হাসপাতালে আনা হচ্ছে সর্পদষ্টকে। ফলে, ঠিকঠাক চিকিৎসার সুযোগ থাকছে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৭ ০৭:৩০
Share:

মেদিনীপুর সন্ধেবেলায় ঝোপঝাড়ে ঘেরা নলকূপ থেকে জল তুলতে গিয়ে খরিশের লেজে পা দিয়েছিলেন বছর বত্রিশের এক মহিলা। ফণা উঁচিয়ে পায়ে ছোবল বসায় সাপটি। পরিজনেরা তাঁকে গোড়ায় হাসপাতালে নিয়ে যাননি। ওঝা-গুণিন ঘুরে যখন হাসপাতালে পৌঁছলেন, ততক্ষণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন ওই মহিলা।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরে এ খুবই চেনা ছবি। বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতিতে সাপের ছোবলে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, অনেকটা দেরিতে হাসপাতালে আনা হচ্ছে সর্পদষ্টকে। ফলে, ঠিকঠাক চিকিৎসার সুযোগ থাকছে না।

বানভাসি ঘাটাল, কেশপুর-সহ জেলার নানা প্রান্তে ইতিমধ্যে জলমগ্ন এলাকায় ৭৬ জন সর্পদষ্ট হয়েছেন। ৪ জনের মৃত্যুও হয়েছে। জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “কেউ কেউ দেরিতে হাসপাতালে এসেছেন। কিন্তু ঝাড়ফুঁক করে সর্পদষ্টকে বাঁচানো যায় না। পুরনো ধ্যানধারণা আঁকড়ে থাকলে হিতে বিপরীতই হবে।”

Advertisement

সাপের ছোবলে চিকিৎসা হল অ্যান্টিভেনম (এভিএস)। স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে যত দ্রুত এই ওষুধ প্রয়োগ করা হবে, সর্পদষ্টকে বাঁচানো তত সহজ হবে। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা বলছিলেন, “সাপের ছোবলে প্রতিটি মিনিট গুরুত্বপূর্ণ। ওঝার কাছে নিয়ে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট করলে মারাত্মক হতে পারে। এক মিনিট নষ্ট হলে কিডনি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা এক শতাংশ বেড়ে যায়।’’ ওই স্বাস্থ্যকর্তার পরামর্শ, সাপের ছোবলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ক্ষতস্থানে শক্ত বাঁধন দেওয়ারও দরকার নেই। ক্ষতস্থান ব্লেড বা ছুরি দিয়ে কাটা যাবে না, দেওয়া যাবে না বরফ বা জল।

সাপের ছোবলে মৃত্যু হলে নিয়মানুযায়ী পরিবারে এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয় রাজ্য সরকারকে। অভিযোগ, ক্ষতিপূরণ দিয়েই দায় সারে রাজ্য। সে ভাবে সচেতনতামূলক প্রচার হয় না। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা মানছেন, “সাম্প্রতিক অতীতে এমন অনেক ঘটনা দেখা গিয়েছে যেখানে সর্পদষ্টকে আগে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু ঝাড়ফুঁকে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়। পরে যখন হাসপাতালে আনা হয়, তখন আর বাঁচানো যায় না।’’

পরিস্থিতি দেখে অবশ্য এ বার ওঝাদেরও প্রশিক্ষণ দিতে উদ্যোগী হয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলছিলেন, “ওঝাদের যদি সাপের ছোবলের খুঁটিনাটি বোঝানো যায়, আশা করি পরিস্থিতির অনেকখানি উন্নতি হবে। সাপের ছোবলে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমিয়ে আনা যাবে।’’

সাপের ছোবল

কী করবেন

• ক্ষতস্থান স্থির রাখতে হবে

• শরীরে বাঁধা জিনিস যেমন চুড়ি, হাতঘড়ি খুলে ফেলতে হবে

• দ্রুত পৌঁছতে হবে হাসপাতালে

কী করবেন না

• ক্ষতস্থানে বরফ লাগাবেন না

• লাগানো যাবে না রাসায়নিক

• বিষ বের করার চেষ্টা করবেন না

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement