তামার ঘটেই শক্তি আরাধনা কন্যাগুরুকুলে

ঝাড়গ্রামের শ্রীরামকৃষ্ণ সারদাপীঠ কন্যাগুরুকুলের প্রাচীন কালীপুজো হয় এমনই রীতি মেনে। তন্ত্র মতে পুজো হলেও পশুবলি হয় না এখানে। পরিবর্তে কলা বলি দেওয়া হয়।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৩৯
Share:

আলোয়-আলো: কন্যাগুরুকুলে বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

দেবীর অধিষ্ঠান তামার ঘটে। কার্তিকী অমাবস্যায় সেই ঘটস্থাপন করেন সন্ন্যাসিনীরা। জলপূর্ণ তামার ঘটের ভিতর দেওয়া হয় মুক্তো, সোনা, রুপো ও তামার মতো নানা রত্ন ও ধাতু। থাকে আম, বট, অশ্বত্থ, কাঁঠাল ও বকুল— পঞ্চপল্লব। তার উপর ডাব। এই ঘটেই দক্ষিণা কালীর আহ্বান। প্রাণ প্রতিষ্ঠার পরে ষোড়শোপচার পুজো।

Advertisement

ঝাড়গ্রামের শ্রীরামকৃষ্ণ সারদাপীঠ কন্যাগুরুকুলের প্রাচীন কালীপুজো হয় এমনই রীতি মেনে। তন্ত্র মতে পুজো হলেও পশুবলি হয় না এখানে। পরিবর্তে কলা বলি দেওয়া হয়। তবে দক্ষিণা কালিকার উদ্দেশে অন্নভোগের সঙ্গে নিবেদন করা হয় পঞ্চব্যঞ্জন আর মাছ-মাংসের রকমারি পদ। কন্যাগুরুকুলের সম্পাদিকা ও পুজোর তন্ত্রধারক পরিব্রাজিকা আত্মহৃদয়া জানালেন, এ বার ৬৮ তম বর্ষের কালীপুজোয় সেই একই নিয়ম মেনে আচার অনুষ্ঠান হয়েছে।

সময়টা ১৯৪৮ সাল। জঙ্গলমহলে নারী শিক্ষার প্রসারে ঝাড়গ্রামে আসেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সন্ন্যাসী স্বামী শর্বানন্দ। অরণ্যশহরের জঙ্গল লাগোয়া একপ্রান্তে তিনি গড়ে তোলেন শ্রীরামকৃষ্ণ সারদাপীঠ কন্যাগুরুকুল। ১৯৫০ সালে তাঁরই উদ্যোগে এখানে তামার ঘটে কালী পুজোর সূচনা হয়। ১৯৬১ সাল পর্যন্ত তিনি নিজেই পুজো করতেন। কিন্তু স্বামী শর্বানন্দ অসুস্থ হয়ে পড়ায় ১৯৬২ সাল থেকে কন্যাগুরুকুলের সন্ন্যাসিনীরাই পুজোয় তন্ত্রধারক ও পুরোহিতের দায়িত্ব পান। ১৯৭০ সালে দেহ রাখেন শর্বানন্দ।

Advertisement

কালীপুজোর সকালে কন্যাগুরুকুলের শ্রীরামকৃষ্ণ সারদা মন্দিরে চণ্ডীপাঠ হয়। নাটমন্দিরে ঘট-পুজো শুরু হয়ছিল বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকার তিথি মেনে মহানিশায়। ফল-মিষ্টি নৈবেদ্যের পাশাপাশি, দেবীকে নিবেদন করা হয় অন্নভোগ, লুচি, নানা ব্যঞ্জন, মাছ ও মাংসের বিভিন্ন পদ। ষোড়শোপচারে পুজো শেষে দক্ষিণা কালীর হোমের পূর্ণাহতির পর ঘট নাড়িয়ে হয় বিসর্জন ক্রিয়া। শুক্রবার প্রতিপদের দুপুরে অন্ন ও মাছ-মাংসের প্রসাদ বিতরণ করা হয়।

পঞ্চাশের দশকে স্বামী শর্বানন্দ মাতৃশক্তি জাগরণের ভাবনা থেকেই সারদা মায়ের ছবিতে শারদীয়া দুর্গা পুজো ও কালীর ছবিতে ও তামার ঘটে দীপান্বিতা কালীপুজো শুরু করেন। সেই থেকে প্রতি বছর নিয়ম নিষ্ঠাভরে পুজোর আয়োজন করা হয়।

প্রায় সাত দশক ধরে জঙ্গলমহলের আদিবাসী-মূলবাসী মেয়েদের মনে জ্ঞানের আলোক শিখা জ্বালিয়ে যাওয়ার কাজ করে চলছে কন্যাগুরুকুল। সংস্থার স্বশাসিত তিনটি স্কুল, নানা ধরনের সমাজসেবা মূলক কাজে নিয়োজিত রেখেছেন সন্ন্যাসিনীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন