রক্তদাতাদের গোলাপ অদ্রিজার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
বাড়ির একরত্তি মেয়েটার জন্মদিন। আত্মীয়, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধবের ভিড়। কেক কাটা, পায়েস খাওয়া, সবাই মিলে ভুরিভোজ— চেনা ছবিটা ছিলই। তবে সে সবের মাঝেই ব্যতিক্রমী হয়ে উঠল মেদিনীপুর শহরের মহাতাবপুরের বাসিন্দা অদ্রিজা আচার্যের পাঁচ বছরের জন্মদিন। শনিবার বিশেষ দিনটির সকালেই আয়োজন করা হয়েছিল রক্তদান শিবিরের। দিনের শেষে সেখানে রক্তদাতার সংখ্যা ৪৫জন।
অদ্রিজার বাবা একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক। মা সুতপাদেবী মাদপুরের বাড়বাঁশি হাইস্কুলের শিক্ষিকা। ২০১৬ সালের অগস্টে সুতপাদেবীর দাদা কৌশিক পাত্র ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন। রক্তের সঙ্কট কী, তখন বুঝেছিলেন সুতপাদেবীরা। মেদিনীপুর মেডিক্যালের ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত মেলেনি। রক্তের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছেন অরূপবাবু। শেষে তাঁকে কলকাতা নিয়ে যেতে হয়।
সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বহু মানুষই এখন বিয়েবাড়ি থেকে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করছেন। অরূপবাবুও বলছিলেন, ‘‘একদিন আমি রক্তের জন্য পথে পথে ঘুরেছি। তখনই ঠিক করেছিলাম এমন কিছু একটা করতে হবে, যেখানে রক্তদানের প্রয়োজনীয়তা আত্মীয়-পড়শিদের বোঝাতে পারব। মেয়ের জন্মদিনে সেই চেষ্টাই করেছি।’’
প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব আত্মীয়দের মেয়ের জন্মদিনের নিমন্ত্রণ করতে গিয়ে অরূপবাবু যখন রক্তদান শিবিরের কথা বলেছিলেন, তখন অনেকে এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছিলেন, তেমনই অনেকে চমকে উঠেছিলেন। অরূপবাবুদের প্রতিবেশী অচিন্ত্য দাস বলছিলেন, ‘‘জন্মদিনের নিমন্ত্রণ করতে এসে রক্তদানের কথা বলায় প্রথমে বিরক্ত হয়েছিলাম। পরে বুঝলাম, সমাজের জন্য এই কাজ করা উচিত। আজ আমিও রক্ত দিয়েছি।’’ স্থানীয় কাউন্সিলর সৌমেন খান রক্তদানের আসরে থেকে এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। ছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক রজনী দোলই।
এ দিন সকালে অরূপবাবুর বাড়িতেই ছিল রক্তদান শিবিরের আয়োজন। সেখানে হাজির হয়ে অরূপবাবুকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা। গিরীশবাবুও বলছিলেন, ‘‘এটা খুবই ভাল উদ্যোগ। সমাজের সকলে যদি এ ভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন, তাহলে মুমূর্ষু রোগীর জন্য রক্তের চাহিদা অনেকটাই পূরণ করা যাবে।’’
যার জন্মদিন এমন বার্তা দিল, পাঁচ বছরের সেই অদ্রিজা অতশত বোঝে না। তবে বাড়িতে প্রচুর লোক আসায় সে খুশি। আর বাবা-মা তাকে দিয়েই রক্তদাতাদের হাতে গোলাপ ফুল তুলে দিয়েছেন। অরূপবাবুর কথায়, ‘‘মেয়ে যখন একটু বড় হবে, তখন নিজেই বুঝবে রক্তদান মহৎ দান।’’