কাজে লাগে না পাঁচ কোটির স্পিড বোট

রাজ্যের উপকূলীয় নিরাপত্তার জন্য পশ্চিমবঙ্গ পেয়েছিল ১৬টি আধুনিক স্পিড বো়ট। তার মধ্যে ছ’টি রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরে। ২০১১ সালে ওই স্পিড বোটগুলি পেয়েছিল জেলা। কিন্তু আজও তা কাজে লাগাতে পারেনি তেমনভাবে।

Advertisement

আরিফ ইকবাল খান

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৬ ০০:০০
Share:

বন্দরে পড়ে রয়েছে বোট দু’টি। নিজস্ব চিত্র।

রাজ্যের উপকূলীয় নিরাপত্তার জন্য পশ্চিমবঙ্গ পেয়েছিল ১৬টি আধুনিক স্পিড বো়ট। তার মধ্যে ছ’টি রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরে। ২০১১ সালে ওই স্পিড বোটগুলি পেয়েছিল জেলা। কিন্তু আজও তা কাজে লাগাতে পারেনি তেমনভাবে।

Advertisement

ছ’টি বোটের দু’টি মাত্র টহলদারিতে বেরোয়। একটি দিঘা মোহনায়, অন্যটি পেটুয়াঘাট সংলগ্ন এলাকায়। এ দু’টিই আকারে ছোট। অন্য চারটি স্পিড বোট পড়ে আছে অবহেলায়। শুধু তাই নয়, অভিযোগ রয়েছে অন্য রকমও। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যায় ওই অত্যাধুনিক স্পিড বোটে নিজস্বী তুলেছেন কয়েকজন যুবক। কেমন করে ওই নৌকায় উঠতে পারেন সাধারণ কোনও মানুষ? উত্তর মেলেনি। হলদিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কার্যত এড়িয়ে গিয়েছেন এ প্রশ্ন।

তবু এই অবহেলার কথা মানতে নারাজ পুলিশ প্রশাসন। তাঁদের দাবি শুধু মাত্র চালকের অভাবেই প়ড়ে রয়েছে নৌকাগুলি। ভাঁড়ারে ছ’টি নৌকা থাকলেও, তা চালানোর মতো প্রশিক্ষণ রয়েছে শুধু মাত্র হলদিয়া থানার পুলিশ কর্মী মিন্টু কুমার দাসের।

Advertisement

ফলে হলদিয়া বন্দরের ‘লক এনট্রান্স’ (জাহাজ প্রবেশ এবং বেরনোর প্রবেশ পথ)-এর মুখে একদিকে বাঁধা রয়েছে দু’টি বড় স্পিড বোট। চারপাশে জঙ্গল। এক ঝলক দেখলে মনে হবে পরিত্যক্ত বোট দু’টি। পুলিশ সূত্রের খবর, এই বোট দু’টির এক একটির দাম পাঁচ কোটি টাকারও বেশি। একসঙ্গে বসতে পারেন ১২জন। ছোট চারটি বোট তবু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে টহলে বেরোয়। কিন্তু বড় বোট দু’টি একেবারে চলে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিনের পর দিন এ ভাবে পড়ে থাকলে নষ্ট হয়ে যাবে অত দামি নৌকাগুলি।

কিন্তু কেন চালানো যায় না বড় বোটগুলি?

জেলা পুলিশ সুপারও স্বীকার করে নিয়েছেন, নিয়মিত না চালালে এই নৌকাগুলি খারাপ হয়ে যাবে। তাঁর দাবি, ‘‘প্রশিক্ষিত চালকের সমস্যা থাকলেও আমার নিয়মিত বোট গুলি জলে নামাই। কিন্তু মাত্র একটি নৌকাই মাঝে মাঝে জলে নামে টহলের জন্য।’’ হলদিয়া বন্দরসূত্রে খবর, বড় নৌকা দু’টি লক এন্ট্রান্সের বাইরে রাখা হয়েছে, সে গুলি জেলা পুলিশ একেবারেই ব্যবহার করে না। বাকি দুটি বোট বন্দরের মধ্যে একটি বার্থে রাখা আছে। দীর্ঘদিন বন্দরে নৌকাগুলি রাখার ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে জেলা পুলিশকেও জানানো হয়েছে বলে তাঁরা জানিয়েছেন। হলদিয়া বন্দরের ম্যানেজার অ্যাডমিন অমল দত্ত বলেন, ‘‘পুলিশের নিজস্ব জেটি নেই। তাই নৌকাগুলি বন্দরে রাখা আছে। এতে আমাদেরও সমস্যা হচ্ছে।’’

জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানান, পুলিশের নিজস্ব কোন জেটি নেই। তাই হলদিয়া বন্দরেই রেখে দেওয়া হয়েছে আধুনিক চারটি আধুনিক নৌকা। দিঘা মোহনায় টহলদারি নৌকাটি শঙ্করপুরে থাকে, মন্দারমণির টহলদারি নৌকাটি থাকে পেটুয়াঘাটে। শঙ্করপুরে এবং মন্দারমণিতে স্থায়ী জেটি নির্মাণ করেছে পুলিশ। তালসারিতেও জেটি তৈরির কাজ চলছে।

প্রায় ৬০ কিমি দীর্ঘ পূর্ব মেদিনীপুরের তটীয় এলাকা। উপকূল প্রহরার জন্য একাধিক লঞ্চ রয়েছে। সুতাহাতটা থানা এলাকা কুঁকড়াহাটি–হোড়খালি, গেঁয়োখালি এলাকায় নিউ বিজয় নামে লঞ্চটি টহল দেয়। নন্দীগ্রাম তালপাটি খালে থাকে দুই ভাই নামে পুলিশ লঞ্চ। এ ছাড়া লঞ্চ চলে নন্দীগ্রাম–নয়াচর দিঘা মোহনা থেকে তালসারি। খেজুরির বোগা ঘাটে আগে পুলিশ টহল চলত, এখন তাও বন্ধ। দাদন পাত্রবাড় থেকে জুনপুট পুলিশের লঞ্চ টহল বন্ধ।

জেলা পুলিশেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে, মূলত জ্বালানি বেশি লাগে বলেই চালানো হয় না বড় স্পিড বোটগুলি। ছ’টি নৌকা চালাতে যথেষ্ট খরচ বেশি। বড় স্পিড বোটগুলি চলে পেট্রোলে, ছোটগুলি ডিসেলে। বড়গুলির জন্য ঘণ্টায় ১০০ লিটার পেট্রোল খরচ হয়, ছোটগুলির জন্য ঘণ্টায় ১২০ লিটার ডিসেল দরকার। যদিও হলদিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজি সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘অর্থের জন্য নয়, আসল সমস্যা প্রশিক্ষিত পাইলট এবং নিজস্ব জেটির অভাব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement