দিন কয়েক আগে জ্বর নিয়ে শালবনির এক উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়েছিলেন জ্যোৎস্না মাহাতো। স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা, কিন্তু এএনএম (অক্সিলারি নার্স মিডওয়াইফ) নেই। অগত্যা জ্বর গায়ে সে দিন বাড়ি ফিরে আসতে হয়েছিল ওই বৃদ্ধাকে। ফের পরদিন গিয়ে ওষুধ এনেছিলেন তিনি।
এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। পর্যাপ্ত সংখ্যক ফার্স্ট ও সেকেন্ড এএনএম এবং আশাকর্মী না থাকায় জঙ্গলমহলের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধুঁকছে। জেলার স্বাস্থ্য-কর্তারাও মানছেন, প্রায় পাঁচ হাজার মানুষপিছু একটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। সেখানে একজন ফার্স্ট এএনএম এবং একজন সেকেন্ড এএনএম থাকার কথা। এক স্বাস্থ্য কর্তা বলেন, ‘‘একটি পদ শূন্য থাকলে কিছু সমস্যা তো হবেই। একজনের পক্ষে সব দিক সামলানো অনেক সময়ই কঠিন হয়ে পড়ে।’’
অথচ ক্ষমতায় এলে স্বাস্থ্যের হাল ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে একের পর এক প্রকল্প ঘোষণাও করেন তিনি। উদ্বোধন হয় কয়েকটি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের। কিন্তু সে সব নামেই। জেলার গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবা সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে। আর এর প্রধান কারণ কর্মীর অভাব।
গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আশা কর্মীদের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, পশ্চিম মেদিনীপুরে বহু আশা কর্মীর পদ শূন্য। ফার্স্ট এবং সেকেন্ড এএনএম (অক্সিলারি নার্স মিডওয়াই)-এরও বেশ কিছু পদ শূন্য। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরে আশা কর্মীর ৯২২টি পদ শূন্য রয়েছে। আর ফার্স্ট এএনএম-এর ২০টি এবং সেকেন্ড এএনএম-এর ১১৮টি পদ শূন্য রয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “কিছু শূন্যপদ রয়েছে। বিষয়টি রাজ্যকেও জানানো হয়েছে।”
কিন্তু কর্মী নিয়োগ হবে কবে?
জেলার এক স্বাস্থ্য-কর্তার জবাব, “বেশ কিছু ব্লকে আশা কর্মী নিয়োগ হয়েছে। যেখানে নিয়োগ হয়নি, সেখানেও পরে পরে নিয়োগ হবে।’’
গ্রামাঞ্চলে আশা কর্মীদের কাজ খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যন্ত এলাকার অন্তঃসত্ত্বাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে শিশুদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোঁজখবর রাখা, কোথাও জ্বর, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, আন্ত্রিকের মতো রোগ ছড়াচ্ছে কি না, এ সব আশা কর্মীদেরই দেখার কথা। কোথাও কোনও সমস্যা নজরে এলে তাঁরা দ্রুত ব্লকে জানান। ব্লক মেডিক্যাল অফিসারের কাছে খবর পৌঁছনোর পরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়।
পশ্চিম মেদিনীপুরে এখন দু’টি স্বাস্থ্য জেলা। একটি পশ্চিম মেদিনীপুর স্বাস্থ্য জেলা, অন্যটি ঝাড়গ্রাম স্বাস্থ্য জেলা। দু’ক্ষেত্রেই অভাব রয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীর। আর তাতে ভোগান্তি বাড়ছে আমজনতার। অথচ গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবা সচল রাখতে এএনএম-দের কাজ খুব গুরুত্বপূর্ণ। উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সমস্ত কিছু এঁদেরই দেখভাল করতে হয়। উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার থাকেন না। এএনএম, আশাকর্মীরা থাকেন। কেউ অসুখ নিয়ে এলে এএনএম-রাই সব দিক দেখে ওষুধপত্র দেন। প্রয়োজনে কাছের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন।
জঙ্গলমহলের এই জেলায় উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংখ্যা খুব কম নয়। এখানে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে ৮৫৮টি। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৮২টি, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে ৪টি। দুই স্বাস্থ্য জেলায় গ্রামীণ হাসপাতাল রয়েছে ২৫টি। এর মধ্যে ১৮টি পশ্চিম মেদিনীপুরে, বাকি ৭টি ঝাড়গ্রামে। মহকুমা হাসপাতাল রয়েছে দু’টি, খড়্গপুর এবং ঘাটালে। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে মেদিনীপুরে। অন্য দিকে, ঝাড়গ্রামে রয়েছে জেলা হাসপাতাল।
কর্মীর যা দশা তাতে প্রত্যন্ত এলাকায় স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া যে সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে তা মানছেন জেলার এক স্বাস্থ্য-কর্তা। তবে একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “বড় কোনও সমস্যা হয়নি। কখনও কোনও অভিযোগ এলে দ্রুত তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে। আর শূন্যপদ পূরণের বিষয়টি রাজ্য নিশ্চয়ই ভাববে।”