কেবলু, কানু, বল্লুর নিশ্চিন্ত ঠাঁই ‘ভালবাসা’

দিন দশেক আগে ঝাড়গ্রাম শহরের রাস্তায় গাড়ির দু’টো ঠ্যাং-ই গুঁড়িয়ে গিয়েছিল ‘কেবলু’র। মাথা ও কোমরেও বেজায় চোট পেয়ে উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা হারিয়েছিল অবলা সারমেয়টি।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৭ ০১:৫০
Share:

শুশ্রূষা: কেবলুর। নিজস্ব চিত্র

দিন দশেক আগে ঝাড়গ্রাম শহরের রাস্তায় গাড়ির দু’টো ঠ্যাং-ই গুঁড়িয়ে গিয়েছিল ‘কেবলু’র। মাথা ও কোমরেও বেজায় চোট পেয়ে উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা হারিয়েছিল অবলা সারমেয়টি। রাস্তায় পড়ে তাকে কাতরাতে দেখে তুলে নিয়ে এসেছিলেন পেশায় প্রাথমিক স্কুলশিক্ষক সোমনাথ দাস, শুভজিৎ দাস, অয়ন সিংহ। সহৃদয় ওই শিক্ষকদের যত্ন, শুশ্রূষা ও ভালবাসায় নতুন জীবন পেয়েছে চারপেয়েটি।

Advertisement

রাস্তা থেকে তুলে আনা সারমেয়টির ভালবেসে নামকরণও করেছেন তাঁরা, ‘কেবলু’। শুধু কেবলু নয়, গত কয়েক বছর ধরে ঝাড়গ্রাম শহরে দুর্ঘটনায় জখম ও অসুস্থ পথ কুকুরদের নিশ্চিন্ত আশ্রয় হয়ে দাঁড়িয়েছেন সোমনাথবাবুরা। তাদের সুস্থ করে ফের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন তাঁরা। শুভজিৎ দাস, অয়ন সিংহ, বিপ্লব মাহাত, অনিরুদ্ধ মল্লিক, সোমনাথ দাসের হাত ধরে গড়ে ওঠা ‘ভালবাসা’ এখন পথকুকুরদের নিশ্চিন্ত ঠাঁই।

শুভজিতের কথায়, ‘‘দিন দশেক আগে শহরের কেকেআই মোড়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়ির ধাক্কায় ছিটকে পড়ে কেবলু। যন্ত্রণায় কাঁদতে থাকে সারমেয়টি। স্থানীয় ব্যবসায়ী সোমনাথ দাস জখম কুকুরটিকে দেখে ‘ভালবাসা’য় খবর দেন।’’ এর পর কেবলুকে উদ্ধার করে রঘুনাথপুরে শিক্ষক অনিরুদ্ধ মল্লিকের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়। বিনা পয়সায় কেবলুর চিকিৎসা করেছিলেন চঞ্চল দত্ত ও সজল দত্ত। তাঁদের কথায়, ‘‘কুকুরটি মাথায়, কোমরে মারাত্মক চোট ছিল। এক্স-রে তে দেখা যায় সামনের ডান পা ও পিছনের বাঁ পায়ের হাড় ভাঙা।’’ কিন্তু দমেননি সোমনাথবাবুরা। স্কেল দিয়ে পা বেঁধে রেখে কেবলুকে টানা সাতদিন পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। চঞ্চলবাবু বলেন, ‘‘আমরা ওষুধ লিখে দিয়েছি। কিন্তু আসল কাজটা করেছেন সোমনাথবাবুরা। ওঁদের সেবায় কুকুরটি সুস্থ হয়ে উঠছে। আর কিছুদিনের মধ্যে স্বাভাবিক হাঁটাচলা করতে পারবে।”

Advertisement

শহরের তরুণতীর্থ ক্লাব প্রাঙ্গণই ‘ভালবাসা’র ঠেক। সেখানে দেখা গেল নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে কানকাটা কানু, সোনু, লম্বু, বল্লুর মতো গোটা দশেক সারমেয়। সকলেই সোমনাথবাবুদের হাতে পড়ে নতুন জীবন পেয়েছে। ওদের জন্য রোজ খাবারও আসে হোটেল থেকে। দুধ বিক্রেতা শঙ্কর ঘোষের দুধের বরাদ্দও রয়েছে তাদের জন্য।

তবে শুধু অসুস্থ, জখম সারমেয়ের দেখভালেই থেমে থাকেননি সোমনাথবাবুর। গড়ে তুলছেন সচেতনতাও। আর তাই তাঁদের স্লোগান, “বড় রাস্তায় জোরে গাড়ি ও বাইক চালাবেন না। অবলা জীবগুলোরও বাঁচার অধিকার রয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন