নবীন: গাছের চারা হাতে পড়ুয়ারা। দাঁতনের ভাগবতচরণ
শোভাযাত্রায় বেরিয়েছে পড়ুয়ারা। প্রত্যেকের হাতে একটি করে মেহগনি গাছের চারা। কিছু পড়ুয়ার হাতে রয়েছে একটি পোস্টার। তার কোনওটিতে লেখা— ‘আমার একটি গাছ আছে আমি গর্বিত’। আবার কোনও পোস্টারে লেখা রয়েছে—‘আমার গাছ’। মঙ্গলবার এমনই দৃশ্য দেখা গেল দাঁতনে।
দাঁতন ভাগবতচরণ হাইস্কুলের এই উদ্যোগ অবশ্য এই প্রথম নয়। মঙ্গলবার সবুজ বাঁচাতে ও সবুজ রক্ষার প্রতি পড়ুয়াদের ঝোঁক বাড়াতে এক যুগ ধরে এমনই কর্মকাণ্ডের আয়োজন করছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রতিবছর উল্টোরথের দিন বেরোয় শোভাযাত্রা। এবার আবহাওয়া খারাপ থাকায় শোভাযাত্রার জন্য মঙ্গলবার দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। অরণ্য দিবস পালন উপলক্ষে এদিন ১হাজার ১০০ ছাত্রছাত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে মেহগনি গাছের চারা।
প্রকৃতির মধ্যে বেড়ে উঠুক পড়ুয়ারা, মূলত এই ভাবনা থেকে পরিকল্পনা শুরু। ‘আমার গাছ’ নাম দিয়ে প্রতি শ্রেণিকক্ষে টব সমেত গাছ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি টবের নাম বাংলার এক একটি পাখির নামে। শ্যামা, মৌটুসী, তিতির, ফিঙে, দোয়েল, কোয়েল, চন্দনা, মোহনচূড়া, শঙ্খচিল, পানকৌড়ি, বসন্তবৌরীতে ধীরে ধীরে বে়ড়ে উঠছে নানা ধরনের গাছ। যে শ্রেণি গাছের ভালো পরিচর্যা করবে, সুস্থ,সবল করে বাঁচিয়ে রাখবে তারা শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই পাবে অভিনন্দন পত্র। প্রধান শিক্ষক অরবিন্দ দাস বলেন, ‘‘পরিবেশ দিন দিন খারাপ হচ্ছে। আমাদের মধ্যে যদি গাছ লাগানোর প্রবণতা বাড়ে তবেই পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব হবে। গাছের প্রতি ভালোবাসা তৈরি করতেই ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে কর্মসূচি গ্রহণ করি।’’
শুধু গাছ দিয়েই স্কুলের দায়িত্ব শেষ নয়। মাঝে মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে গিয়ে স্কুলের তরফ থেকে দেখে আসা হয় গাছের কীভাবে পরিচর্যা করছে ছাত্রছাত্রীরা। তাদের উৎসাহ দিতে প্রতিবছর সুস্থ, সবল গাছের জন্য তুলে দেওয়া হয় পুরস্কার। স্কুলের পড়ুয়া সৌমেন মণ্ডল, ইতি মণ্ডল, অনিমা পাত্র, সন্দীপ দাস, জয় দাস, ময়ূখ দাস বলে, ‘‘আমরা চারাগাছ বাড়িতে এনে প্রতিবছর বাগানে লাগাই। দিন দিন পরিচর্যা করি, জল দিই। বেশ ভালো লাগে। প্রতিবছর একটি করে চারাগাছ পাই। পড়াশোনার ফাঁকে এটাও আমাদের কাজ। নইলে বাঁচব কী করে?’’
এ দিন শোভাযাত্রা স্কুল থেকে বেরিয়ে দাঁতন বাজার পরিক্রমা করে। সকলের হাতে ছিল একটি করে গাছ। মুখে চন্দ্রমল্লিকা কিংবা সূর্যমুখী ফুলের মুখোশ। হাতে গাছ, স্লোগান দিতে দিতে বাজারে ঘুরছে পড়ুয়ারা। সবুজ বার্তা দেখেশুনে ভিড় জমালেন দোকানিরা। বাজার থামাল গৃহস্থও।