বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষকদের মূল্যায়ন, হাতে পেলেন ফল

২০১৩-১৪ সাল থেকে চলছিল পরীক্ষা। সম্প্রতি ফল প্রকাশিত হয়েছে। পরীক্ষা নিয়েছিলেন যাঁরা তাঁদের সংখ্যাটা হাজার দুয়েকেরও বেশি। আর যাঁদের পরীক্ষা হল, তাঁরা সারাজীবনটাই কাটিয়ে দিচ্ছেন পরীক্ষা নিয়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৬ ০১:১৭
Share:

২০১৩-১৪ সাল থেকে চলছিল পরীক্ষা। সম্প্রতি ফল প্রকাশিত হয়েছে। পরীক্ষা নিয়েছিলেন যাঁরা তাঁদের সংখ্যাটা হাজার দুয়েকেরও বেশি। আর যাঁদের পরীক্ষা হল, তাঁরা সারাজীবনটাই কাটিয়ে দিচ্ছেন পরীক্ষা নিয়ে।

Advertisement

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মূল্যায়নে উদ্যোগী হয়েছিল। পড়ুয়াদের হাতে ছিল নম্বর দেওয়ার দায়িত্ব। তার ভিত্তিতে ‘রিপোর্ট কার্ড’ তৈরি করেছে সরকার অনুমোদিত একটি বেসরকারি সংস্থা। এই ফলাফল থেকেই শিক্ষকরা বুঝতে পারবেন তাঁরা ঠিক কতটা ছাত্রবন্ধু হয়ে উঠেতে পেরছেন। সম্প্রতি শিক্ষক শিক্ষিকাদের মুখবন্ধ খামে সেই ‘রিপোর্ট কার্ড’ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, “ছাত্রছাত্রীরা মূল্যায়ন করেছিল। তাই তুলে দেওয়া হয়েছে শিক্ষক শিক্ষিকাদের হাতে। আশা করি, এর ফলে শিক্ষার মনোন্নয়নই হবে।” একই মত বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জয়ন্তকিশোর নন্দীরও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা জানালেন, ইউজিসি-র গাইডলাইন মেনেই এই ব্যবস্থা চালু হয়। মুখবন্ধ খামেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য যাঁর দেখানে ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে, তা তাঁরা সংশোধন করে নেবেন। তাতে পঠনপাঠনের মান বাড়বে। তবে কেউ যদি এই রিপোর্ট পেয়েও নিজেকে না-বদলান? বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই কর্তার কথায়, “এখনই তেমন কোনও পদক্ষেপ করার ভাবনা নেই। তেমন হলে পরবর্তী সময় এ নিয়ে এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলে আলোচনার সুযোগ রয়েছে। সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে।” তবে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই মূল্যায়নের উদ্দেশ্য কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া নয়। উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন এবং শিক্ষাক্ষেত্রে অনুশাসন আনা।

Advertisement

কী ভাবে শিক্ষকদের মূল্যায়ন করেছে ছাত্রছাত্রীরা?

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সূত্রে খবর, ১১টি মাপকাঠির একটি তালিকা তৈরি করে দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। ছাপানো সেই তালিকা ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া হয়। শিক্ষকেরা নিয়মিত ক্লাস নেন কি না, কেমন উৎসাহ দেন, পড়ানোর পদ্ধতি কী রকম, গুণগত মান কেমন, পরীক্ষা নেন কি না, উত্তরপত্র যাচাই করে নির্দিষ্ট সময়ে দেন কি না— এ সব বিষয়েই প্রশ্ন ছিল সেখানে। মান নির্ধারণ করাছিল চারটি— অসাধারণ, খুব ভাল, ভাল এবং গড়পরতা। ২০১৩-১৪ সালে এই মূল্যায়ন শুরু হয়। ছাত্রছাত্রীরাও ওই ছাপানো তালিকা পূরণ করে জমা দেন মুখবন্ধ খামে। নিরপেক্ষতা বজায় রাখতেই সরকার স্বীকৃত বাইরের সংস্থাকে দিয়ে এই রিপোর্ট তৈরি করানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, প্রায় সাড়ে তিন হাজার ছাত্রছাত্রীর মধ্যে দু’হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রী শিক্ষকদের সম্পর্কে তাঁদের মতামত জানান। তা দেখেই শিক্ষকদের মূল্যায়ন করা হয়।

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনা ১৯৮১ সালে। মাত্র ছ’টি বিভাগ নিয়ে পঠনপাঠন শুরু হয় ১৯৮৬- ৮৭ সালে। এখন সবমিলিয়ে ৩৫টি বিভাগে স্নাতকোত্তর পঠনপাঠন হয়। সঙ্গে রয়েছে দূরশিক্ষা বিভাগ। কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন তোলেন গুণগত মানের উন্নতি হয়েছে কতটা? অভিযোগ, গবেষণাতে তেমন সাফল্য নেই। কর্তৃপক্ষের একাংশ মনে করেন, এ জন্য ছাত্রছাত্রীদের যেমন ত্রুটিই দায়ী। তবে শিক্ষকরাও দায় এড়াতে পারেন না। একাংশের শিক্ষক নিয়মিত ক্লাস নেন না বলে অভিযোগ। গবেষণাতেও তেমন উৎসাহ দেন না। সব দিক খতিয়ে দেখেই ছাত্রছাত্রীদের হাত দিয়ে শিক্ষকদের মূল্যায়ন করতে উদ্যোগী হয় বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের ‘নিউ এডুকেশন পলিসি’ (এনইপি) অনুযায়ী শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারই লক্ষ্য। রাজ্য সরকারেরও নিজস্ব নীতি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা মনে করিয়ে দেন, এই পদক্ষেপও তারই অংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন