কোথাও আন্দোলন, কোথাও পাশে প্রশাসন

সাঁওতালি মাধ্যম স্কুলে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনে যখন আন্দোলন হচ্ছে, পাশের জেলা ঝাড়গ্রামে তখন দেখা গেল ভিন্ন ছবি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দাঁতন ও ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২০ ০০:১৫
Share:

সরব: দাঁতনের স্কুলে পড়ুয়াদের প্রতিবাদ। নিজস্ব চিত্র

সাঁওতালি মাধ্যম স্কুলে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনে যখন আন্দোলন হচ্ছে, পাশের জেলা ঝাড়গ্রামে তখন দেখা গেল ভিন্ন ছবি। সাঁওতালি মাধ্যমের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ আবাসিক কোচিং শিবির চালু করছে ঝাড়গ্রাম জেলা প্রশাসন।

Advertisement

আন্দোলনের কর্মসূচি আগেই ঘোষণা করেছিল আদিবাসী সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল। সেই মতো বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দাঁতনের মালযমুনা কালীপ্রসন্ন স্মৃতি বিদ্যাপীঠ স্কুলের গেটে তালা লাগিয়ে শুরু হয় অবস্থান-বিক্ষোভ কর্মসূচি। সকাল ১১টার আগে থেকেই সাঁওতালি মাধ্যমের ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে স্থায়ী শিক্ষকের দাবিতে অবস্থান বিক্ষোভে বসে সংগঠন। বিক্ষোভের জেরে ক্লাস হয়নি স্কুলে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৌমেন বাগ বলেন, ‘‘সারাদিন বাইরে দাঁড়িয়ে ও স্কুলের বাইরে অন্যের বাড়িতে বসে কাটাতে হল। ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে স্কুল খোলা যায়নি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর তাদের ফিরতে হয়েছে।’’

২০১৭ সালে দাঁতনের মালযমুনা কালীপ্রসন্ন স্মৃতি বিদ্যাপীঠ পাকাপাকি ভাবে সাঁওতালি মাধ্যমের ক্লাস শুরু হয়। অভিযোগ, দু’জন অস্থায়ী শিক্ষক দিয়েই বর্তমানে পঞ্চম-সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা চলছে স্কুলে। চলতি শিক্ষাবর্ষে অষ্টম শ্রেণি চালু হবে। আগামী শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক হওয়ার কথা। এই পরিস্থিতিতে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ ও পরিকাঠামো তৈরির দাবিতে অবস্থান শুরু করেছে আদিবাসী সংগঠন। এদিন সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে জেলা ও ব্লক শিক্ষা দফতর, স্কুল কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসেন। রাত পর্যন্ত অবশ্য জট কাটেনি।

Advertisement

শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর নয়। ঝাড়গ্রাম জেলাতেও আদিবাসী সংগঠনগুলি সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে পঠনপাঠনের পরিকাঠামোর অভাব সম্পর্কে প্রায়ই অভিযোগ তোলে। বেশির ভাগ সাঁওতালি মাধ্যম স্কুলে হাতে গোনা স্থায়ী শিক্ষক। কিছু ক্ষেত্রে স্থায়ী শিক্ষকের দাবি মিটেছে। কিছু ক্ষেত্রে তা মেটেনি এখনও। শিক্ষক নিয়োগ দীর্ঘ সরকারি প্রক্রিয়া। তবে সাঁওতালি মাধ্যমের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে বিশেষ আবাসিক কোচিং শিবির চালু করছে ঝাড়গ্রাম জেলা প্রশাসন। আজ, শুক্রবার ৩ জানুয়ারি থেকে আবাসিক কোচিং শিবির হবে নয়াগ্রাম ব্লকের কলমাপুকুরিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের ধানশোল এসসি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, সারিয়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, বেলপাহাড়ি ব্লকের বেলপাহাড়ি এসসি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ঝাড়গ্রাম ব্লকের জমিদারডাঙা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এই ৪টি উচ্চ মাধ্যমিক এবং একটি মাধ্যমিক মোট ৫টি স্কুলে হবে বিশেষ কোচিং শিবির। এই স্কুলগুলি থেকে ২০২০ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে ৫৯ জন এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে ৩৭ জন। এর মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকের বিজ্ঞান শাখার পরীক্ষার্থী পাঁচ জন। ওই পাঁচটি স্কুল সংলগ্ন ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাসে রেখে ওই পরীক্ষার্থীদের বিশেষ কোচিং দেওয়া হবে। ওই পাঁচটি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাশাপাশি, অন্যান্য স্কুলের শিক্ষকেরাও পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বিশেষ ভাবে সাহায্য করবেন। জেলাশাসক আয়েষা রানি জানান, এই পাঁচটি স্কুলের বিশেষ প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত পঠনপাঠনের তথ্যের আদানপ্রদানও হবে। সেই জন্য জেলা প্রশাসনের সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন