জটিল অস্ত্রোপচারে ভাঙা চোয়াল জুড়ে নজির

মোটর বাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম এক যুবকের ভাঙা চোয়াল জোড়া হল জটিল অস্ত্রোপচারে। শনিবার প্রায় তিন ঘন্টা ধরে ওই জটিল অস্ত্রোপচার করেন হাসপাতালের ডেন্টাল সার্জেন অরুণাভ চট্টোপাধ্যায়। অ্যানাস্থেটিস্ট ছিলেন হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার প্রসূন ঘোষ।

Advertisement

ঝাড়গ্রাম

কিংশুক গুপ্ত শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৭ ০১:২৩
Share:

নিরাপদ: হাসপাতালের শয্যায় শিবশঙ্কর। নিজস্ব চিত্র

ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়! মুখ্যমন্ত্রীর ধমকের পরে অন্তত সেটাই করে দেখালেন ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

মোটর বাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম এক যুবকের ভাঙা চোয়াল জোড়া হল জটিল অস্ত্রোপচারে। শনিবার প্রায় তিন ঘন্টা ধরে ওই জটিল অস্ত্রোপচার করেন হাসপাতালের ডেন্টাল সার্জেন অরুণাভ চট্টোপাধ্যায়। অ্যানাস্থেটিস্ট ছিলেন হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার প্রসূন ঘোষ। খুবই ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্রোপচার সফল ভাবে করায় প্রশংসিত হয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিছুদিন আগেই রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের প্রধান সচিব অযথা ‘রেফার’ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। গত মঙ্গলবার ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝাড়গ্রামের সিএমওএইচকে জানিয়ে দেন, অযথা রেফারের অভিযোগ পেলে রেয়াত করা হবে না। ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রীর সফরের সময়ই গত সোমবার সন্ধ্যায় বেলিয়াবেড়ার বনগড়া গ্রামের বছর কুড়ির শিবশঙ্কর বাগ বাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন। পিসির বাড়ি থেকে ফেরার সময় আড়ডাংরি এলাকায় হঠাৎ সামনে কুকুর চলে আসায় ব্রেক কষতে গিয়ে বাইক সমেত উল্টে পড়েন শিবশঙ্কর।

গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল থেকে রেফার হয়ে ওই রাতেই ঝাড়গ্রামে ভর্তি হন শিবশঙ্কর। তাঁর চোয়াল ভেঙে গিয়েছিল। হাসপাতালের শল্যচিকিত্সক ও দন্তচিকিত্সকদের একাংশ জানিয়ে দেন, এই ধরনের অস্ত্রোপচার খুবই ঝঁুকির। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাও এ ধরনের চোয়াল ভাঙার অস্ত্রোপচার হয় না। ‘ওপেন রিডাকশন অ্যান্ড ইন্টারনাল ফিকশন উইট টাইটেনিয়াম প্লেটিং’ নামে এই অস্ত্রোপচারে টাইটেনিয়াম প্লেট বসিয়ে ভাঙা চোয়াল স্ক্রু দিয়ে জোড়া লাগানো হয়। সাধারণত প্লাস্টিক সার্জেন অথবা ডেন্টাল সার্জেনরা এই ধরনের অস্ত্রোপচার করেন। মুখের ভেতরের হাড়ের জটিল অস্ত্রোপচারের জন্য রোগীকে অজ্ঞান করার প্রক্রিয়াটিও বেশ জটিল (নেজো ট্রেকিয়্যাল ইনটিউবেশন)। এ ক্ষেত্রে রোগীকে অজ্ঞান করতে গেলে বিশেষ পদ্ধতির সাহায্য নিতে হয়। এই প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। ভারপ্রাপ্ত সুপার তথা অ্যানাস্থেটিস্ট প্রসূন ঘোষ এই কাজটি করেছেন। চিকিত্সক অরুণাভবাবু বলেন, “নাক দিয়ে টিউব ঢুকিয়ে রোগীকে অজ্ঞান করার সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। একটু উনিশ-বিশ হলে মুখের স্নায়ু ও শিরা-উপশিরাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু অ্যানাস্থেটিস্ট প্রসূন ঘোষ সফল ভাবে এই কাজটি করে দেওয়ায় নিশ্চিন্তে অস্ত্রোচার করতে পেরেছি।’’ অস্ত্রোপচারে অরুণাভবাবু ও প্রসূনবাবুকে সাহায্য করেন হাসপাতালের আর এক ডেন্টাল সার্জেন অর্ণব প্রধান এবং নার্স অর্চনা সাহা, কর্মী গঙ্গাসাগর দুবে।

Advertisement

রোগীর পরিবারের বেসরকারি জায়গায় অস্ত্রোপচার করানোর সামর্থ ছিল না। শিবশঙ্করের বাবা তারিণী বাগ বলেন, “কলকাতার নার্সিংহোমে এই অপারেশনের জন্য ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়ে বলে শুনেছি। এখানে বিনা পয়সায় ছেলের অপারেশন হল। মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যাবাদ।”

ঝাড়গ্রামের সিএমওএইচ অশ্বিনী মাঝিরও বক্তব্য, “প্রশংসনীয় উদ্যোগ। রেফার না করে এভাবেই আমাদের গরিব রোগীদের স্বার্থে কাজ করতে হবে। প্রয়োজনীর আরও যন্ত্রপাপতি হাসপাতালে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।” এই ঘটনার পরে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার প্রসূন ঘোষ মানছেন, “চেষ্টা থাকলে সীমিত পরিকাঠামোর মধ্যেও কাজ করা যায়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন