থমকে: রেল অবরোধ আদিবাসীদের। খড়্গপুরের খেমাশুলিতে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
রেলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগের পরীক্ষা। সোমবার সকালে মায়ের সঙ্গে বেরিয়েছিলেন ঝাড়গ্রামের মৌমিতা মজুমদার। গন্তব্য ছিল সল্টলেক। ঝাড়গ্রাম স্টেশন থেকে উঠেছিলেন টাটানগর-খড়্গপুর প্যাসেঞ্জার ট্রেনে। খেমাশুলি স্টেশনের আউটারে হঠাৎ আটকে গেল ট্রেন। বহুক্ষণ পরেও যখন ঠায় দাঁড়িয়ে ট্রেন, হাল ছাড়ার ভঙ্গিতে মৌমিতা বললেন, ‘‘জানি না কীভাবে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছব!”
ঝাড়গ্রামে আটকে ছিল টাটানগর-হাওড়া স্টিল সুপারফাস্ট। ক্যানসারে আক্রান্ত ১০-১২ বছরের এক কিশোরকে নিয়ে কলকাতায় আসছিলেন অভিভাবকেরা। বহুক্ষণ অপেক্ষার পর গাড়ি ভাড়া করে ছেলেকে নিয়ে রওনা হলেন অভিভাবকেরা। এসবই ভারত জাকাত মাঝি পারগাণা মহলের ডাকে রেল ও জাতীয় সড়ক অবরোধের হয়রানির টুকরো ছবি।
এ দিন রীতিমতো টাঙি, বল্লম, তির-ধনুক নিয়ে ধামসা বাজিয়ে লাইন ও জাতীয় সড়কের ওপর বসে পড়েন ওই আদিবাসী সংগঠনের সদস্যরা। আর সবকিছু দেখেও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় পুলিশ ও আরপিএফকে। খড়্গপুর রেল ডিভিশনের বিভিন্ন স্টেশনে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে ছিল একাধিক মেল-এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেন। বহু ট্রেন বাতিল করতে হয়। চরম দুর্ভোগে কখনও অবরোধকারীদের ওপর আবার কখনও রেলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখা যায় রেলযাত্রীদের। খড়্গপুরের সিনিয়ার ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার কুলদীপ তিওয়ারি বলেন, “প্রতিটি স্টেশনে ক্যাটারিং সংস্থাকে পর্যাপ্ত জল ও খাবার রাখতে বলা হয়েছে। অবরোধকারীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত সমাধান হয়নি।” সন্ধ্যার পর দু’পক্ষ আলোচনায় বসলেও রফাসূত্র বেরোয়নি। হয়রানির দায় অবশ্য নিতে নারাজ আদিবাসী সংগঠনের নেতা রবিন টুডু। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা আগে থেকে জানিয়েছিলাম। হয়রানির দায় প্রশাসনেরই।’’ প্রশাসন সূত্রের খবর, রাতের আলোচনায় বরফ গলার ইঙ্গিত মিলেছে। পরে রবিন ফের বলেন, ‘‘লিখিত প্রতিশ্রুতি পেলে অবরোধ তোলা হবে।’’
রাতেই ফের খেমাশুলিতে যান খড়্গপুরের মহকুমা শাসক ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
বিকেলের পর থেকে বাড়তে থাকে উত্তাপ। বেলদায় স্টেশন ম্যানেজারের অফিসে ভাঙচুর করে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা। স্টেশন চত্বরে একটি বাইকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বালিচকে বিডিওর গাড়িতে ভাঙচুর চালান বিক্ষোভকারীরা। যদিও সে গাড়িতে বি়ডিও ছিলেন না। ছিলেন এক সরকারি কর্মী। গাড়ির চালক আহত হন। খেমাশুলিতে কেন্দ্রীয় সরকারের কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর হয়। এ দিন গোয়ালতোড়, গড়বেতা বা চন্দ্রকোনা রোড এলাকায় অবরোধকারীদের পথে তেমন দেখা না গেলেও শালবনি, সারেঙ্গা, ক্ষীরপাই সহ আশেপাশের এলাকায় ট্রেন ও সড়ক অবরোধ হওয়ায় বাস চলাচল ছিল খুবই কম।