সাংসদের সৌজন্যে অস্বস্তি শাসকের।

বাঁদনার মঞ্চে হঠাৎ ক্ষণিকের অতিথি 

সুকুমার তখন অনুষ্ঠানস্থলে মঞ্চের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ওই সময়ই রাস্তার গাড়ি থামিয়ে হেঁটে সুকুমারের কাছে গিয়ে করমর্দন করেন কুনার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৯ ০০:১৮
Share:

বাঁদনা পরবে গরু খঁুটান অনুষ্ঠানে শুভেন্দু অধিকারীর প্রণাম। বুধবার ঝাড়গ্রামের কাশিয়ায়। নিজস্ব চিত্র।

আদিবাসীদের সহরায় ও কুড়মিদের বাঁদনা পরবের সরকারি অনুষ্ঠানে রাজনীতির কথা বললেন না পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তবে বুধবারের ওই অনুষ্ঠানটি অবশ্য রাজনীতির ছোঁয়ার বাইরে থাকল না।

Advertisement

ঝাড়গ্রাম শহরের অদূরে ঝাড়গ্রাম গ্রামীণ এলাকার কাশিয়া মাঠে এ দিনের অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদ। সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন। সরকারি অনুষ্ঠান হলেও ঝাড়গ্রামের সাংসদ কুনার হেমব্রম অবশ্য আমন্ত্রিত ছিলেন না। তবে অনুষ্ঠান শুরুর আগে চিল্কিগড়ের দিকে যাওয়ার পথে ওই অনুষ্ঠানস্থলে এসে উপস্থিত হন কুনার। ঝাড়গ্রামের বিধায়ক তথা বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার সুকুমার হাঁসদাকে সহরায় ও বাঁদনা পরবের শুভেচ্ছা জানিয়ে চলে যান তিনি। এই নিয়েই জমে উঠেছে শাসক-বিরোধী তরজা।

এ দিন দুপুর সোয়া দু’টো নাগাদ কাশিয়া মাঠে আসেন কুনার। তখনও শুভেন্দু এসে পৌঁছননি। সুকুমার তখন অনুষ্ঠানস্থলে মঞ্চের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ওই সময়ই রাস্তার গাড়ি থামিয়ে হেঁটে সুকুমারের কাছে গিয়ে করমর্দন করেন কুনার। মিনিট দু’য়েক সৌজন্য বিনিময় করে চলে যান তিনি। এমন ঘটনায় সুকুমার-সহ উপস্থিত তৃণমূলের অন্য জনপ্রতিনিধিরা হকচকিয়ে যান। শুরু হয় গুঞ্জন। অপ্রস্তুত সুকুমার বলেন, ‘‘আচমকা সাংসদ এসে শুভেচ্ছা জানিয়ে গেলেন। একটু অবাকই হয়েছি।’’

Advertisement

কুনারকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে বিধায়ককে দেখে তাঁর কাছে গিয়ে সৌজন্য বিনিময় করেছি। সুকুমারদার সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। এর মধ্যে কেউ রাজনীতি খুঁজতে চাইলে খুঁজতেই পারেন।’’ এরপরে সাংসদ জানান, আদিবাসীদের সহরায় ও বাঁদনা পরবের গরু-মোষ খুঁটানে আমন্ত্রণ জানাতে হয় না। যে কেউ যেতে পারেন।

বিকেল সোয়া তিনটে নাগাদ এসে পৌঁছন শুভেন্দু। কাশিয়া জুয়ান গাঁওতা প্রাঙ্গণে সিদো-কানহোর মূর্তিতে মালা দিয়ে পদযাত্রা করে অনুষ্ঠান স্থলে পৌঁছন তিনি। মাঠে খুঁটিতে বাঁধা গরুকে প্রদক্ষিণ করে প্রণাম করেন পরিবহনমন্ত্রী। অনুষ্ঠান মঞ্চে আদিবাসী-মূলবাসী সম্প্রদায়ের একশো জন গুণিজনকে সংবর্ধনা জানানো হয়। সংবর্ধনা দেওয়ার সময়ে সাহিত্যিক ললিতমোহন মাহাতোর পা ছুঁয়ে প্রণামও করেন শুভেন্দু। তাঁর হাতে নিজের গল্পের সংকলন ‘জনারণ্যে জনদর্পণ’ বইটি তুলে দিলেন সাহিত্যিক। তাঁর পরের বই প্রকাশের জন্য শুভেন্দুর কাছে আর্থিক সাহায্য চান তিনি। মঞ্চে বাঁদনা পরবের অহিরাগীত গেয়ে শোনান গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতো। এরপরে গরু ও মোষ খুঁটান (খুঁটিতে বাঁধা গরু ও মহিষের সামনে মৃত গরুর চামড়া ধরা হয়। গরু ও মোষ উত্তেজিত হয়ে লাফাতে থাকে। লোকশ্রুতি, এর ফলে গরু ও মোষ শারীরিক ভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

এ দিন ধমসাও বাজান শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘এই উৎসব হল গোমাতাকে পুজো করা ও গোবন্দনা করা। সবাইকে উৎসবের শুভেচ্ছা জানাতে এসেছি।’’ ঝাড়গ্রামের অনুষ্ঠান শেষে গোপীবল্লভপুরের যাত্রা ময়দানে একটি কালী পুজো কমিটির বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন