মৃত স্বপনের অঙ্গ দানে গর্বিত পরিবার
Death

এ ভাবেই বেঁচে থাকুক বাবা, বলছেন মেয়ে

গত ১১ জানুয়ারি এসএসকেএমে স্বপন মারা যান। সেখানেই স্বপনের হৃৎপিণ্ড, কিডনি এবং লিভার দান করেন তাঁর পরিবার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মারিশদা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২০ ০০:৪৭
Share:

ভাজাচাউলিতে স্বপনের বাড়ি। ইনসেটে, স্বপন। নিজস্ব চিত্র

বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন। তার পরে কাঁথি হাসপাতাল থেকে কলকাতার এসএসকেএম— দু’টো দিন যমে-মানুষে টানাটানি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। কাঁথি-৩ ব্লকের ভাজাচাউলি এলাকার বাসিন্দা স্বপন হাজরা আর বাড়ি ফেরেননি। কিন্তু স্বজন হারানোর দুঃখেও তাঁর পরিবারে রয়েছে গর্বের বোধ। কারণ, স্বপনের অঙ্গতেই বেঁচে রয়েছেন আরও চার ব্যক্তি।

Advertisement

পেশায় রাজমিস্ত্রি স্বপন গত ৯ জানুয়ারি এটিএম থেকে টাকা তুলতে কাঁথি গিয়েছিলেন। স্থানীয় দুই যুবকের সঙ্গে মোটরবাইকে করে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। দইসাইয়ের কাছে ১১৬ বি জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনার শিকার হন। গত ১১ জানুয়ারি এসএসকেএমে স্বপন মারা যান। সেখানেই স্বপনের হৃৎপিণ্ড, কিডনি এবং লিভার দান করেন তাঁর পরিবার।

প্রত্যন্ত গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারের অঙ্গদানের এই সচেতনতায় অবাক অনেকেই। এভাবে অঙ্গদানের কথা কি তাঁরা জানতেন? স্বপনের পরিজন জানান, তাঁরা আগে এ ব্যাপারে জানতেন না। কিন্তু স্বপনের ভাই সুরজিৎ কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকেন। তিনিই অঙ্গদানের বিষয়ে স্বপনের পরিজনকে বোঝান। তিনি নিজেও এ ব্যাপারে সচেতন বলে জানিয়েছেন। মূলত তাঁর বোঝানোতেই পরিবারের লোকজন স্বপনের অঙ্গদান করেন। সুরজিৎ বলেন, ‘‘রেস্তোরাঁয় কাজের সুবাদে কলকাতায় থাকি। নিয়মিত সংবাদমাধ্যমে অঙ্গদানের ঘটনা শুনি। তাতেই উদ্বুদ্ধ হয়ে দাদার মৃত্যুর পরে ওঁর শরীরের অঙ্গ অন্যকে দান করতে চেয়েছিলাম। পরিবারের বাকি সদস্যরাও রাজি হন।’’

Advertisement

উল্লেখ্য, স্বপনবাবুর হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপিত হয়েছে মেটিয়াবুরুজের মসলিমা বিবির শরীরে। দু’টি কিডনি পেয়েছেন হলদিয়ার বাসিন্দা সুচেতা মাইতি এবং ভদ্রেশ্বরের বাসিন্দা সৌরভ নাথ। লিভার পেয়েছেন বেহালার শকুন্তলা পার্কের বাসিন্দা বছর চল্লিশের এক ব্যক্তি।

বুধবার স্বপনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, শোকে ভেঙে পড়েছেন স্ত্রী নমিতা। গত কয়েক দিন ধরে অসম্পূর্ণ পাকা বাড়ির ভিতর থেকে একবারের জন্যও বাইরে বের হননি। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। আর পাশে বসে মায়ের মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে তিন বছরের ছেলে সঞ্জীব। স্বপনের পাঁচ সন্তানের মধ্যে দুই কন্যা রুমা আর কাকলি অনেকটাই ছোট। বাবা যে আর নেই, সেই শূন্যতা তাদের চোখেও।

এদিন দুপুরে দু’জনেই গিয়েছিল কাকা সুরজিতের বাড়িতে। সেখানেই স্নান করে খাওয়া-দাওয়া। বাপ হারা দুই মেয়েকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন সত্যজিতের স্ত্রী।

এই দুঃখের মধ্যেও স্বপনের পরিবারের এমন পদক্ষেপে তাঁদের সঙ্গে গর্বিত পড়শিরাও। স্থানীয় বাসিন্দা তথা কাঁথি-৩ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি বিকাশ বেজ বলেন, ‘‘ওই পরিবারটি প্রান্তিক এলাকার। তা সত্ত্বেও কী ভাবে স্বপনের পরিবার অঙ্গ দানে এমনভাবে উদ্বুদ্ধ হলেন, প্রথমে আমরা অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। ওই পরিবারের এমন কাজে আমরাও গর্বিত বোধ করছি।’’ তিনি জানান, ওই পরিবারের এমন কাজে অন্যরাও উদ্বুদ্ধ হবেন।

সদ্য শেষ হয়েছে স্বপনের অন্ত্যেষ্টি। বড় মেয়ে সুষমার কথায়, ‘‘বাবা হয়তো আমাদের মধ্যে সশরীরে নেই। কিন্তু অন্যের শরীরে তো তাঁর অঙ্গ রয়েছে! তাই এ ভাবেই না হয় আমাদের কাছে বেঁচে থাকুক!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন