TB hospital

জঙ্গলে ঢাকছে যক্ষ্মা হাসপাতাল

কঙ্কালসার হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেল এখন চালু রয়েছে তিনটি ওয়ার্ড। সেই ওয়ার্ডগুলিও অযত্নে ঝোপঝাড়ে ঢাকা। পুরুষ-মহিলা মিলিয়ে রোগী আছেন ৪০ জনের মতো।

Advertisement

রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য

চন্দ্রকোনা রোড শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২৩ ০৮:৩৯
Share:

অব্যবহৃত অবস্থায় অ্যাম্বুল্যান্স। — নিজস্ব চিত্র।

আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে দেশকে যক্ষ্মা মুক্ত করার লক্ষ্য নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। স্লোগান দেওয়া হয়েছে— ‘যক্ষ্মা হারবে, জিতবে দেশ’। কেন্দ্রের সুরেই এই রাজ্যের সরকার পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরেই বাংলাকে যক্ষ্মা মুক্ত করার ব্যাপারে তৎপরতা বাড়িয়েছে। আগামী দু’বছরের মধ্যে এই রাজ্যের অন্তত ৭০ শতাংশ পঞ্চায়েত এলাকাকে যক্ষ্মা মুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

দু’সরকারই যক্ষ্মা দূরীকরণে প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিলেও, একদা রাজ্যের বৃহত্তম ডিগ্রির যক্ষ্মা হাসপাতালের দিকে নজর নেই কারও। কর্মী সঙ্কটে দিশাহারা এই হাসপাতাল ঢাকা পড়ছে জঙ্গলে। রোদে-জলে পড়ে থেকে বিকল হচ্ছে সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সও। আশ্বাস দিয়েই দায় সারছে কেন্দ্র-রাজ্য দু’সরকারেরই জন প্রতিনিধিরা। ১৯৫০ সালে মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের আমলে চন্দ্রকোনা রোডের ডিগ্রির তেঁতুলডাঙা মৌজায় গড়ে তোলা হয়েছিল রাজ্যের বৃহত্তর যক্ষ্মা হাসপাতাল। নাম দেওয়া হয়েছিল ‘এম আর বাঙ্গুর টিউবারকুলেসিস স্যানোটোরিয়াম’। গড়ে তোলা হয় ‘আফটার কেয়ার কলোনি’ অর্থাৎ চিকিৎসায় আরোগ্য লাভের পর রোগীদের নজরে রাখার পৃথক স্থান। প্রায় হাজার একর জমির উপর গড়ে ওঠা এই যক্ষ্মা হাসপাতালে কী ছিল না! মেল-ফিমেল মিলিয়ে ১০টিরও বেশি ওয়ার্ড, ৩০০ শয্যা, বহু স্টাফ কোয়ার্টার, নার্স হোস্টেল, অন্তর্বিভাগ-বহির্বিভাগ। ৯-১০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে শুরু হয়েছিল এই যক্ষ্মা হাসপাতালের পথচলা। সুচিকিৎসার আশায় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসতেন যক্ষ্মা রোগীরা। রমরম করে চলা সেই হাসপাতালই এখন সরকারি ঔদাসিন্যে রুগ্ন, ভুতুড়ে এলাকা। হাসপাতালের কর্মীদের কথাতেও হতাশার সুর।

কঙ্কালসার হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেল এখন চালু রয়েছে তিনটি ওয়ার্ড। সেই ওয়ার্ডগুলিও অযত্নে ঝোপঝাড়ে ঢাকা। পুরুষ-মহিলা মিলিয়ে রোগী আছেন ৪০ জনের মতো। আছেন তিনজন চিকিৎসক। বন্ধ বহির্বিভাগ। নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী আছেন প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। ৪৫ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর থাকার কথা, আছেন ২০ জনের মতো। নৈশপ্রহরী থাকলেও দিনরাত অরক্ষিতই থাকে হাসপাতাল। দীর্ঘদিন তালাবন্ধ থাকায় আগাছায় ভরা নার্স হোস্টেল যেন ভুতুড়ে বাড়ি। পরিত্যক্ত স্টাফ কোয়ার্টারগুলিও ভাঙাচোরা, ঝোঁপ-ঝাড়ে ঢাকা। নেই পর্যাপ্ত আলো, বাতিস্তম্ভ, পানীয় জল। হাসপাতালের কয়েকজন কর্মী বললেন, বহু বছর জেনারেটর নেই, লোডশেডিং হলে মোমবাতিই ভরসা। মশা, মাছি আর বিষধর সাপের উপদ্রবে অতিষ্ঠ রোগী থেকে স্বাস্থ্যকর্মী প্রত্যেকেই। যোগাযোগ করা যায়নি হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে। কর্মরত এক স্বাস্থ্যকর্মী বললেন, ‘‘সরকারি উদ্যোগ না হলে এই হাসপাতালকে বাঁচানো অসম্ভব।’’

Advertisement

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, ‘‘এখন তো যক্ষ্মা রোগীর হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করা হয় না, ফ্রি-তে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা হচ্ছে। নেহাত দরকার না পড়লে হাসপাতালে পাঠাতে হয় না।’’ কী বলছেন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের জনপ্রতিনিধিরা? ঝাড়গ্রামের সাংসদ কুনার হেমব্রম বলছেন, ‘‘যক্ষ্মা মুক্ত অভিযানে কেন্দ্র নানা পরিকল্পনা করছে। সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব এলে ডিগ্রির যক্ষ্মা হাসপাতাল নিয়েও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সাথে কথা বলব।’’ স্থানীয় বিধায়ক রাজ্যের মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো বলেন, ‘‘ডিগ্রির যক্ষ্মা হাসপাতালের এতবড় পরিকাঠামোকে কাজে লাগাতে বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া আছে, রাজ্য সরকারের ভাবনায় আছে। প্রয়োজনে সেখানে ক্যান্সার বা হার্টের চিকিৎসা কেন্দ্র করা যেতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন