মানিকপাড়া

স্কুলে তাণ্ডব হনুমানের, জখম শিক্ষিকা

শিশুদের স্কুল চত্বরে মাস খানেক ধরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হনুমানের দল। আক্রান্ত হচ্ছে শিশু পড়ুয়ারা। সমস্যার কথা বন দফতরকে জানিয়েছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু একটা হনুমানও ধরা যায়নি। এবার স্কুল চত্বরে হনুমানের কামড়ে গুরুতর জখম হলেন এক শিক্ষিকা। শুক্রবার সকালে ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়ায় ওই ঘটনার পরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিভাবকরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৬ ০১:৪১
Share:

জখম শিক্ষিকা। নিজস্ব চিত্র।

শিশুদের স্কুল চত্বরে মাস খানেক ধরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হনুমানের দল। আক্রান্ত হচ্ছে শিশু পড়ুয়ারা। সমস্যার কথা বন দফতরকে জানিয়েছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু একটা হনুমানও ধরা যায়নি। এবার স্কুল চত্বরে হনুমানের কামড়ে গুরুতর জখম হলেন এক শিক্ষিকা। শুক্রবার সকালে ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়ায় ওই ঘটনার পরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিভাবকরা। স্কুলে বিক্ষোভ দেখিয়ে শিশুদের নিরাপত্তার দাবি জানান তাঁরা। এরপরই তড়িঘড়ি বন দফতর স্কুল প্রাঙ্গণে একটি হনুমান ধরার ফাঁদ-খাঁচা বসিয়েছেন। কিন্তু হনুমান ধরা পড়েনি। উল্টে রামভক্তদের দাপাদাপিতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

Advertisement

মানিকপাড়া রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম প্রাঙ্গণে রয়েছে ওই আশ্রম পরিচালিত শিশুদের দু’টি স্কুল। একটি নার্সারি স্কুল। অন্যটি প্রাথমিক স্কুল। মোট ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ৬৪৫ জন। স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, মাস খানেক ধরে গোটা পাঁচেক হনুমানের উপদ্রব শুরু হয়েছে আশ্রম প্রাঙ্গণে। আশ্রমের সব্জি খেতে ও ফলের গাছে হামলা চালাচ্ছে হনুমানের দল। পড়ুয়াদের দেখলেই দাঁত মুখ খিঁচিয়ে তাড়া করছে তারা। দিন দশেক আগে হনুমানের তাড়া খেয়ে পড়ে গিয়ে জখম হয় প্রথম শ্রেণির অঞ্জলি সরেন। কয়েকদিন আগে হনুমানটি চতুর্থ শ্রেণির প্রিয়া মাহাতোর পিঠে আঁচড়ে দিয়েছিল।

শুক্রবার সকালে আশ্রম প্রাঙ্গণ দিয়ে স্কুলে যাওয়ার সময় আক্রান্ত হন নার্সারি স্কুলের শিক্ষিকা অপর্ণা রানা। আচমকা একটি হনুমান তাঁকে আক্রমণ করে। হনুমানটি অপর্ণাদেবীকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দিয়ে বাম হাতে ও বাম হাঁটুতে আঁচড়ে-কামড়ে দেয়। চিৎকার করতে থাকেন ওই শিক্ষিকা। ওই সময় কয়েকজন অভিভাবক তাঁদের ছেলে-মেয়েদের স্কুলে ছাড়তে এসেছিলেন। অভিভাবকরা তাড়া করলে হনুমানটি অপর্ণাদেবীকে ছেড়ে দিয়ে চম্পট দেয়। এরপরই ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ অপর্ণাদেবীকে গাড়িতে করে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা করানো হয় ওই শিক্ষিকার। এ দিন হাসপাতালে ইঞ্জেকশন নেওয়ার সময় অপর্ণাদেবী বলেন, “স্কুলে যেতেই ভয় করছে। এতগুলো শিশু ওই স্কুলে পড়ে। অবিলম্বে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”

Advertisement

অভিভাবকদের অভিযোগ, শিশুদের স্কুল চত্বরে পাগল হনুমান দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, অথচ স্কুল কর্তৃপক্ষ ও বন দফতর হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দিন দশেক আগে পড়ুয়ারা আক্রান্ত হওয়ার পরে মানিকপাড়া ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসে বিষয়টি জানানো হয়।” রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের সম্পাদক স্বামী ভবানন্দ বলেন, “হনুমানের আতঙ্কে অভিভাবকরা ছেলেমেয়েরা স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। শিশুদের নিরাপত্তা নিয়েও আমরা খুবই চিন্তিত।”

এ দিন অবশ্য বন দফতরের লোকজন এসে স্কুল প্রাঙ্গণে হনুমান ধরার জন্য একটি ফাঁদ-খাঁচা বসিয়েছেন। কিন্তু ওতে কী আদৌ হনুমান ধরা দেবে, প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকরা। মানিকপাড়ার ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসার বিজনকুমার নাথ বলেন, “হনুমানগুলি সব সময় এলাকায় থাকছে না। খাঁচায় হনুমান ধরা না-গেলে তখন বিকল্প ভাবনা চিন্তা করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন