প্রতীকী ছবি।
রেল সেতুর উপর পাওয়া গিয়েছিল একজোড়া পা। ট্রেনে কাটা পড়ার ঘটনা, বুঝতে অসুবিধা হয়নি। কিন্তু পুলিশ দেহ খুঁজে পায়নি।
রবিবার বিকেলে নন্দকুমার ও চণ্ডীপুরের মাঝে হলদি নদীর উপর রেল সেতুতে দুর্ঘটনার খবর পৌঁছতেই মৃতের খোঁজ শুরু করে নন্দকুমার থানার পুলিশ। কিন্তু তখনও সুদীপ জানা (১৬) নামে ওই কিশোরের মৃত্যু হয়নি। ট্রেনে পা কাটা পড়লেও সে ছিটকে গিয়ে পড়েছিল নদীতে। রক্তাক্ত অবস্থায় ভাসতে ভাসতে নজরে পড়েছিল মাঝিদের। তাঁরাই উদ্ধার করেন সুদীপকে। সোজা নিয়ে যান চণ্ডীপুর ঘাটের দিকে।
চণ্ডীপুর থানার পুলিশ তাকে নিয়ে যায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। চিকিৎসকেরা জানান, দেহে এখনও প্রাণ রয়েছে। কিন্তু চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে হবে জেলা হাসপাতালে। অ়জ্ঞাতপরিচয় কিশোরকে চণ্ডীপুর থানার পুলিশই নিয়ে যায় তমলুকে। শুরু হয় চিকিৎসা।
ততক্ষণে হলদি নদীর মাঝিদের কাছে পুরো ঘটনা জানতে পেরেছে নন্দকুমার থানার পুলিশও। উদ্ধার হওয়া পা দু’টি বরফ চাপিয়ে তারাও রওনা জেলা হাসপাতালের উদ্দেশে— যদি পা দু’টি জোড়া দেওয়া যায় কিশোরের দেহে। সেই মতো জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের অনুরোধ করেন কনস্টেবলরা, জানা গিয়েছে নন্দকুমার থানা সূত্রে। কিন্তু হাসপাতালে যে তেমন কোনও পরিকাঠামোই নেই। চিকিৎসকেরা তাই পায়ের দায়িত্ব নিতে চাননি।
বিপত্তি শুরু হয় এর পরেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই খবর আসে মারা গিয়েছে ওই কিশোর। পা ছাড়াই তার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য নথিভুক্ত হয়ে যায়। ফলে পা দু’টি রয়ে যায় নন্দকুমার থানার হেফাজতেই। রবি ও সোমবার সারারাত বরফেই ডুবিয়ে রাখা হয় সুদীপের পা দু’টি। মঙ্গলবার আলাদা ভাবে পা দু’টি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে। পুলিশ জানিয়েছে, দেহ ও দেহাংশ পৃথক ভাবে উদ্ধার হলে ময়নাতদন্তও পৃথক ভাবেই হওয়ার নিয়ম।
সোমবার হাসপাতালে দেহ নিতে আসেন সুদীপের বাবা সন্তোষ জানা। তিনি কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন। জানা গিয়েছে, নন্দকুমারের পানিসিথি গ্রামের বাসিন্দা সুদীপ পরিবারের ছোট ছেলে। অভাবের সংসারে পড়াশোনা বেশি দূর এগোয়নি। অষ্টম শ্রেণির পর বাবার সঙ্গে কাজ শুরু করে সে। কিন্তু সে কাজে মন ছিল না। তা নিয়ে বাবার সঙ্গে মনোমালিন্যও হত। সুদীপের এক প্রতিবেশী জানিয়েছেন, রবিবারও বাবার সঙ্গে কাজে যেতে চায়নি সুদীপ। তবে কি অভিমানে আত্মঘাতীই হতে চেয়েছিল সে, তাই রেলসেতুতে উঠেছিল। সে কথার সত্যতা স্বীকার করেননি পরিবারের কেউ।