প্রতীকী ছবি।
বাবা-মায়ের কাছে তিনি বলতেন, ‘আমি ভাল হতে চাই’। মাদকাসক্ত বন্ধুদের থেকে ছেলেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতেন অভিভাবকেরাও। কিন্তু কয়েকমাস আগে থেকে প্রায় রোজই ফোন আসত ওই যুবকের কাছে। আর তারপরই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেন বছর চব্বিশের অনুপম। সরকারি উচ্চপদস্থ আধিকারিক বাবার এতে সন্দেহ হয়। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ছেলে হেরোইনের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। আর অনুপমের কাছে ফোন আসত হেরোইনের কারবারিদের।
শুক্রবার তমলুক শহরের হাসপাতাল মোড় থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে অনুপম পাইন ও তাঁর সঙ্গী দেবরাজ বসুকে। তাঁদের কাছে মিলেছে ২৫ পুরিয়া হেরোইন। শহরের ধারিন্দার বাসিন্দা অনুপমের বাবাই পুলিশে নালিশ জানিয়ে ছেলেকে ধরিয়ে দিয়েছেন বলে খবর। ধৃত অনুপম ও দেবরাজকে শনিবার তমলুক আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের শর্ত সাপেক্ষে জামিনের নির্দেশ দেন। তবে অনুপম ও দেবরাজকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, মূলত মেদিনীপুর ও খড়গপুর থেকে হেরোইন এনে তমলুক শহরের কিছু এলাকায় নির্দিষ্ট গোপন ডেরায় যুবকদের বিক্রি করা হয়। আর সেই জালে জড়াচ্ছে শহরের অল্পবয়সীরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, তমলুকের হাসপাতাল মোড় ছাড়াও স্টিমারঘাট, মানিকতলা, পদুমবসান ও নিমতৌড়িতে গাঁজা, ব্রাউনসুগার-সহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য বিক্রির ঠেক চলে। মাদক কারবারিরা মেদিনীপুর, খড়গপুর থেকে এই সব ঠেকে মাদকদ্রব্য সরবরাহ করে। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া যুবক থেকে গাড়ি চালকদের একাংশ এই ধরনের মাদকদ্রব্যের নিয়মিত ক্রেতা। তমলুক শহরের এক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অলোক পাত্র বলছিলেন, ‘‘আমার কাছে দিনে গড়ে ৫-৬ জন মাদকাসক্ত রোগীকে নিয়ে আসেন পরিজনেরা। এদের বেশিরভাগই তরুণ অথবা যুবক। তমলুক শহর ছাড়াও মেচেদা ও পাঁশকুড়া এলাকার একাংশ কলেজ পড়ুয়া ও গাড়ি চালক এই ধরনের নেশায় আসক্ত।’’
জানা গিয়েছে, গাঁজা, কাফ সিরাপ, ব্রাউন সুগার, হেরোইন— সব রকম মাদকের নেশাই জাল ছড়াচ্ছে। এই নেশার খরচ জোগাতে দিনে গড়ে পাঁচশো থেকে দু’হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। খরচ জোগাড়ে অনেকেই বাড়ির থেকে গয়না চুরি করে, কেউ আবার অভিভাবকদের ব্যবহৃত ব্যাঙ্কের কার্ডের এটিএম নম্বর জেনে টাকা তুলে নেয়। মাদক কেনার টাকা জোগাড় করতে না পারলে ব্যবসায়ীরা টোপ দেয়, ‘নতুন ক্রেতা জোগাড় করে দাও। তাহলে ‘ফ্রি’-তে মাদক দেওয়া হবে।’ এ ভাবেই মাদকের কারবার জাল ছড়াচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
মাদকাসক্তের মধ্যে পড়ুয়া ও অল্পবয়সীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও শিক্ষকেরা। তমলুক হ্যামিল্টন হাইস্কুলের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক সোমনাথ মিশ্র বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে মাদকাসক্ত ছাত্রদের চিহ্নিত করে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। তবে এ বিষয়ে অভিভাবকদের সতর্কতার পাশাপাশি মাদক কারবার বন্ধে পুলিশ-প্রশাসনের উদ্যোগও জরুরি।’’
পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, মাদকের কারবার ঠেকাতে অভিযান চলে। মাদকের কুফল জানাতে পাশাপাশি চলে সচেতনতা প্রচার। আগামীতে তার মাত্রা আরও বাড়ানো হবে বলেই পুলিশ-প্রশাসনের আশ্বাস।