সব ওষুধের মেয়াদ যাচাই করবে কমিটি

ওয়ার্ডে যে সব ওষুধ পৌঁছচ্ছে, সেই সব ওষুধের মেয়াদ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখবে ওই কমিটি। কবে ওষুধ তৈরি হয়েছিল, কবে মেয়াদ ফুরবো তাও দেখা হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৭ ০৬:১০
Share:

প্রতীকী ছবি।

মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ খেয়ে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল মেদিনীপুর মেডিক্যালে। ফের এমন ঘটনা এড়াতে ওয়ার্ডস্তরে কমিটি গঠনের পরিকল্পনা হয়েছে। ওয়ার্ডে যে সব ওষুধ পৌঁছচ্ছে, সেই সব ওষুধের মেয়াদ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখবে ওই কমিটি। কবে ওষুধ তৈরি হয়েছিল, কবে মেয়াদ ফুরবো তাও দেখা হবে।

Advertisement

এই পরিকল্পনার কথা মানছেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডু। তিনি বলেন, “একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে। এ বার সতর্ক হতেই হবে।” তাঁর কথায়, “ওয়ার্ডের চিকিৎসক-নার্সদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি ওষুধের সমস্ত দিক খতিয়ে দেখবে। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখার পরই তা রোগীদের দেওয়া হবে। এরফলে, মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ রোগীর কাছে পৌঁছনোর কোনও সম্ভাবনাই থাকবে না।” সমস্ত দিক খতিয়ে দেখেই তো সেই ওষুধ রোগীকে দেওয়ার কথা। তাহলে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ রোগীকে দেওয়া হল কী ভাবে? অধ্যক্ষের জবাব, “ওই ঘটনার তদন্ত চলছে।”

মেদিনীপুর মেডিক্যালে ‘সেন্ট্রাল মেডিসিন স্টোর’ (সিএমএস) থেকে ওষুধ আসে। রাজ্য থেকেই অনলাইনে ওষুধের বরাত দেওয়া হয়। কী কী ওষুধ প্রয়োজন তা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ রাজ্যকে জানিয়ে দেন। হাসপাতালের এক আধিকারিকের কথায়, “সব ওষুধপত্র এখন অনলাইনেই কেনা হয়। আমরা রাজ্যকে জানিয়ে দিই প্রয়োজনের কথা। পরে সিএমএস থেকে যাবতীয় ওষুধপত্র এখানে আসে।”

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরের সবথেকে বড় সরকারি হাসপাতাল মেদিনীপুর মেডিক্যাল। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোজ বহু মানুষ আসেন এখানে। হাসপাতালে ২০টিরও বেশি ওয়ার্ড রয়েছে। গড়ে রোগী ভর্তি থাকেন ৭০০-৭৫০ জন। বহির্বিভাগেও রোজ বহু মানুষ আসেন। সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো ও পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ নতুন নয়। চিকিৎসার অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ ঘিরে মাঝেমধ্যেই উত্তেজনা ছড়ায়। দিন কয়েক আগে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ খেয়ে মেডিক্যালে এক যক্ষ্মা রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। গত শনিবার সকালে শান্তিনাথ কুণ্ডু নামে ওই রোগীর মৃত্যু হয়। শান্তিনাথবাবুর ভাই মিলন কুণ্ডু লিখিত অভিযোগ জানান। যক্ষ্মার উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ জুলাই থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি ছিলেন শান্তিনাথবাবু। মিলনবাবুর অভিযোগ, গত শুক্রবার যে ওষুধ ওয়ার্ডের নার্সরা দাদাকে দিয়েছিলেন, সেটাই মেয়াদ উত্তীর্ণ। ওষুধের মেয়াদ জুন মাসেই ফুরিয়ে গিয়েছিল।

ওষুধের মেয়াদ ফুরনোর অভিযোগ যে ভুল নয় তা প্রাথমিক তদন্তেই স্পষ্ট হয়েছে। তদন্তে জানা গিয়েছে, যে ওষুধ ওই রোগীকে দেওয়া হয়েছিল তা মেয়াদ উত্তীর্ণই ছিল। চিকিৎসকদের ব্যাখ্যা, মেয়াদ ফুরনো ওষুধ দিলে তা কাজ করবে না। কিন্তু তাতে রোগীর মৃত্যুর কথা নয়। কিন্তু, সরকারি হাসপাতালে কেন দু’মাস আগে মেয়াদ ফুরনো ওষুধ দেওয়া হবে, প্রশ্ন সেখানেই। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, “ওই ওষুধ যে মেয়াদ উত্তীর্ণ ছিল সেই নিয়ে বিন্দুমাত্র সংশয় নেই। কী ভাবে এই মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ হাসপাতালে থেকে গেল ও রোগীকে দেওয়া হল, সেটাই প্রশ্ন।”

হাসপাতালের এক আধিকারিক মানছেন, “এ ক্ষেত্রে সব দিক খতিয়ে দেখা হলে এমন ঘটনা ঘটত না। রোগীর কাছে পৌঁছনো তো দূরের কথা, ওই ওষুধ ওয়ার্ডেই পৌঁছত না।” হাসপাতালের এই আধিকারিকের আশ্বাস, “এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে তার সব রকম চেষ্টা চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন