Heritage Site

Heritage Site: ঐতিহ্যে সিলমোহর

এই জেলার ১১টি কেন্দ্র আগেই রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের স্বীকৃতি পেয়েছিল। এ বার সংখ্যাটা বেড়ে হতে চলেছে ১৩।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:৫০
Share:

মেদিনীপুর কালেক্টরেটের পুরনো ভবন। নিজস্ব চিত্র।

হেরিটেজের তকমা পেল মেদিনীপুর কালেক্টরেটের পুরনো ভবন। অদূরে জেলাশাসকের বাংলো ‘হেস্টিংস হাউস’ও এই স্বীকৃতি পেয়েছে। রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের এই স্বীকৃতিতে মেদিনীপুরের মুকুটে নতুন পালক জুড়ল।

Advertisement

এই জেলার ১১টি কেন্দ্র আগেই রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের স্বীকৃতি পেয়েছিল। এ বার সংখ্যাটা বেড়ে হতে চলেছে ১৩। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘কালেক্টরেটের এই ভবনটির প্রাচীনত্ব নিয়ে সন্দেহ নেই। বাংলোটিও অনেক পুরনো। তাই আমরা চেয়েছিলাম এই দুই ভবন হেরিটেজ স্বীকৃতি পাক। স্বীকৃতি মেলায় আমরা সবাই খুবই খুশি।’’ মেদিনীপুর কালেক্টরেট চত্বরে পুরনো ভবনটি তৈরি ব্রিটিশ আমলে। চুন-সুরকির দেওয়াল আর কড়ি-বরগায় যেন কথা বলে ইতিহাস। পরপর পেল্লায় ঘর। একটি দরজাই ১০-১২ ফুট উঁচু। প্রশাসন চেয়েছিল, ভবনটি হেরিটেজ ঘোষিত হোক। এর সংস্কার এবং সংরক্ষণেও পদক্ষেপ হোক। বাংলোটিও হেরিটেজ হিসেবে ঘোষিত হোক। প্রশাসন সূত্রে খবর, সেই মতো মাস কয়েক আগে রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের সচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন জেলাশাসক।

কালেক্টরেটের পুরনো ভবনেই ছিল জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসকের দফতর। কয়েক বছর আগে এই চত্বরে নতুন ভবন হয়েছে। এখন সেখানে জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসকের দফতর রয়েছে। পুরনো ভবনে কয়েকটি দফতর থেকে গিয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, ঠিক কবে এই ভবনের গোড়াপত্তন হয়েছে, সে নথি অনেক বহু খুঁজেও এখনও মেলেনি। তবে ১৯৩৪ সালে যে ভবনটির অস্তিত্ব ছিল, সে প্রমাণ মিলেছে। যে নকশা ধরে এই ভবন হয়েছে, তারও খোঁজ নেই। তবে পুরনো আমলের কিছু আসবাবপত্রও রয়েছে। জেলাশাসক বলছিলেন, ‘‘ওই দুই ভবনেরই স্থাপত্যশৈলী অন্য রকম। দেওয়ালে সূক্ষ্ম কারুকাজও রয়েছে।’’

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে খবর, রাজ্য হেরিটেজ কমিশনে যে চিঠি পাঠানো হয়েছিল, সেখানে মেদিনীপুরের ইতিহাস এবং এই দুই ভবনের গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মেদিনীপুর ঐতিহাসিক শহর। কথিত রয়েছে, এই শহরের পাশ দিয়েই পুরী গিয়েছিলেন শ্রী চৈতন্যদেব। মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবও এখানে এসেছিলেন। মেদিনীপুরের নাম মিলেছে ‘আইন- ই- আকবরি’তে। আর স্বাধীনতা আন্দোলনপর্বে তো বিপ্লবের সূতিকাগার ছিল মেদিনীপুর। শহরের পুরসভাও যথেষ্ট প্রাচীন— ১৮৬৫ সালের। মেদিনীপুরের যেটুকু ইতিহাস মেলে সেই অনুযায়ী, এক সময়ে শহর ঘেঁষা কংসাবতী নদীতে জাহাজ চলত। জাহাজ মেরামতের এক ভগ্নস্তূপও পরে মিলেছিল নদীর ধারে। শহর জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে প্রাচীন মন্দির, মসজিদ। মেদিনীপুরে গাঁধীজি, নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলও এসেছিলেন। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেও মেদিনীপুরের সম্পর্ক কম দিনের নয়। বঙ্কিমচন্দ্রের বাবা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৪৩ সালের নভেম্বরে ডেপুটি কালেক্টর হয়ে সপরিবার মেদিনীপুরে এসেছিলেন। আর ১৮৮৭ সালের মে মাসে বঙ্কিমচন্দ্র মেদিনীপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এবং ডেপুটি কালেক্টর পদে যোগ দিয়েছিলেন। ছিলেন মাস ছয়েক। সেই সময়ই তাঁর শেষ উপন্যাস ‘সীতারাম’ গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছিল।

ঐতিহ্য সংরক্ষণে বর্তমান আইনে বিস্তর ‘ফাঁক’ও রয়েছে। সেই ‘ফাঁক’ গলেই নষ্ট হচ্ছে নানা ঐতিহ্যশালী বাড়ি বা ভবন। কালেক্টরেটের পুরনো ভবনেও ইতিউতি ফাটল ধরেছে। মনে করা হচ্ছে ঐতিহ্য অটুট রেখে প্রয়োজনে ভবনের সংস্কার হতে পারে। জেলার এক প্রশাসনিক আধিকারিক বলছেন, ‘‘সংস্কার মানে তো শুধু ভাঙাভাঙি নয়। পুরনো চেহারা ফিরিয়ে দেওয়ার কাজে হাত দেওয়ার আগে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন