বাকচায় লাগাতার বোমাবাজি, খুন
TMC

শাসক ও বিরোধী দুষছে প্রশাসনকেই

২০১৮ থেকে ’২০—তিন বছরে বাকচায় রাজনতিক হিংসার বলি হয়েছেন তিনজন। কেন বারবার উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বাকচা ও সংলগ্ন এলাকা? কেনই বা রাশ টানা আচ্ছে না হিংসায়? শাসক ও বিরোধী পরস্পরের দিকে আঙুল তুললেও প্রশাসনিক ব্যর্থতা নিয়ে সরব একযোগে সরব তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ময়না শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:১০
Share:

প্রতীকী চিত্র

বোমার আঘাতে নিহত বাকচা গ্রাম পঞ্চায়েতের খিদিরপুর গ্রামের বাসিন্দা দীপক মণ্ডলকে দলীয় কর্মী দাবি করে খুনের দায় শাসক দলের উপরেই চাপাল বিজেপি। সেই সঙ্গে লোকসভা ভোটের পর থেকে ময়নার এই এলাকায় লাগাতার বোমবাজি, অশান্তির জন্য পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তারা। যদিও এই এলাকায় অশান্তি, গোলমাল নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পুলিশের উপরে ক্ষুব্ধ শাসক জল তথা তৃণমূল নেতা-কর্মীরাও।

Advertisement

২০১৮ থেকে ’২০—তিন বছরে বাকচায় রাজনতিক হিংসার বলি হয়েছেন তিনজন। কেন বারবার উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বাকচা ও সংলগ্ন এলাকা? কেনই বা রাশ টানা আচ্ছে না হিংসায়? শাসক ও বিরোধী পরস্পরের দিকে আঙুল তুললেও প্রশাসনিক ব্যর্থতা নিয়ে সরব একযোগে সরব তারা।২০১১য় পরিবর্তনের আগে থেকেই ময়নার বাকচা তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হয়ে উঠতে শুরু করে। ২০১১০-র বিধানসভা ভোটে ময়নায় ৫০.৯৫ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূলের ভূষণ চন্দ্র দোলই। ২০১৪র লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ভোটের শতাংশ বেড়ে হয় ৫৮.৯৬। কিন্তু তারপর থেকে এই এলাকায় শাসক দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে। যার পরিণতি ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে শতাংশের নিরিখে শাসক দলের ভোট কমে হয় ৫০.২৫। ক্রমশ শাসক দলের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় বাকচা। ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে গোষ্ঠীকোন্দলের জেরে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ২১ আসনের বাকচা পঞ্চায়েতে ১৫ টি আসন তৃণমূল পেলেও বিজেপি তিনটি এবং নির্দল তিনটি আসন ছিনিয়ে নেয়। পরে প্রধান পদ নিয়ে তৃণমূলের শুকলাল মণ্ডল ও মিলন ভৌমিক গোষ্ঠীর বিরোধ বাধে। প্রধান নির্বাচনের দিন সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে জখম হন নন্দকুমারের সার্কেল ইনস্পেক্টর তীর্থ ভট্টাচার্য এবং এক সিভিক ভলান্টিয়ার। প্রধান নির্বাচনে শুকলাল ১১-১০ ব্যবধানে জিতে প্রধান হলেও বাকচায় ক্রমশ প্রভাব বাড়ে বিজেপির। যার ফলে পঞ্চায়েতের কাজকর্ম প্রায় শিকেয় ওঠে। ২০১৯ লোকসভা ভোটের সময় থেকে পুলিশি পাহারায় শুরু হয় বাকচা পঞ্চায়েতের কাজ। আর রাজনৈতিক ডামাডোলে পড়ে পঞ্চায়েতের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হওয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মানুষের মধ্যে বাড়তে থাকে ক্ষোভ।

বাকচা পঞ্চায়েত এলাকা ভগবানপুর ও পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং থানার সীমানা লাগোয়া। স্থানীয়দের অভিযোগ রাত হলে বাকচার বরুণা, আসনান, চাঁদিমেনিয়া, খিদিরপুর, গোড়ামাহাল প্রভৃতি গ্রাম চলে যায় দুষ্কৃতীদের দখলে। বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় দুষ্কৃতীরা। এলাকায় দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি নিয়ে তৃণমূল, বিজেপি দু’দলকেই দায়ী করেছে তারা। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসন সব জেনেও চুপ করে থাকে। বড় গোলমাল হলে দু’একদিন পুলিশি টহল চলে। তারপর ফের যে কে সেই।

Advertisement

বাকচায় লাগাতার অশান্তির জন্য তৃণমূলের উপরেই দায় চাপিয়েছে বিজেপি। স্থানীয় বিজেপি নেতা তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য সুজিত বেরা বলেন, ‘‘পুলিশের সাহায্য নিয়ে তৃণমূল বহিরাগত দুষ্কৃতীদের এনে এলাকা দখলের চেষ্টা করছে। পুলিশ সঠিক ভূমিকা নিলে বাকচায় কোনও গোলমাল হত না।’’ পুলিশের বিরুদ্ধে সরব তৃণমূলও। দলের ময়না ব্লক সভাপতি সুব্রত মালাকার বলেন, ‘‘বাকচায় পুলিশ সক্রিয় নয় বলেই আমাদের প্রধান পঞ্চায়েত অফিসে যেতে পারছেন না। বিভিন্ন মামলার আসামীরা এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বিজেপির লোকজন এলাকায় বোমা মজুত করছে।’’

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপার সুনীল কুমার যাদব অবশ্য বলেন, ‘‘বাকচায় নতুন করে কোনও হিংসা হয়নি। যেটা ঘটেছে সেটা পশ্চিম মেদিনীপুরে। বাকচায় পুলিশি টহল রয়েছে। এলাকায় বোমা বা আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে স্নিফার ডগ নিয়ে তল্লাশি চলানো হবে। দুষ্কৃতীদের ধরতে ডগ স্কোয়াড ও ডিজিটাল সাপোর্ট নিয়ে শীঘ্রই অভি‌যান হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন