নোটের ধাক্কায় লাটে জমি-বাড়ি কেনাবেচা

বাতিল নোটের ধাক্কা জমি-বাড়ির কেনাবেচাতেও। ফলে, রেজিস্ট্রেশন বাবদ রাজস্ব আদায়ও তলানিতে এসে ঠেকেছে। শুধু মেদিনীপুর ও খড়্গপুর মহকুমা থেকেই রেজিস্ট্রেশন দফতর দিনে যেখানে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা রাজস্ব পেত, গত ৮ নভেম্বরের ঘোষণার পরে সেই পরিমাণ নেমে এসেছে দিনে ২-৩ লক্ষ টাকায়!

Advertisement

সুমন ঘোষ

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৬ ০০:২৭
Share:

বাতিল নোটের ধাক্কা জমি-বাড়ির কেনাবেচাতেও। ফলে, রেজিস্ট্রেশন বাবদ রাজস্ব আদায়ও তলানিতে এসে ঠেকেছে। শুধু মেদিনীপুর ও খড়্গপুর মহকুমা থেকেই রেজিস্ট্রেশন দফতর দিনে যেখানে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা রাজস্ব পেত, গত ৮ নভেম্বরের ঘোষণার পরে সেই পরিমাণ নেমে এসেছে দিনে ২-৩ লক্ষ টাকায়!

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে খবর, রেজিস্ট্রেশনের ‘ফি’ অনলাইনে জমা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু জমি-বাড়ি কেনাবেচা না হলে রেজিস্ট্রেশন হবে কী করে! আর এ ক্ষেত্রে লেনদেনের একটা বড় অংশ হয় নগদে। আর এই মুহূর্তে পুরনো পাঁচশো-হাজারের নোট বাদে সেটা সম্ভব নয়। যে গুটিকয় ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে আগে আর্থিক লেনদেন হয়েছিল, তেমনই দু’-একজন রেজিস্ট্রেশন করাচ্ছেন। এই বাজারে অনেকে আবার পুরনো পাঁচশো-হাজার টাকার নোট দিয়ে ফ্ল্যাট কেনার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু প্রোমোটার রাজি হচ্ছেন না।

এই পরিস্থিতিতে রেজিস্ট্রেশন দফতর থেকে সরকারি রাজস্ব আদায় যেমন কমে গিয়েছে, তেমনই বিপাকে পড়েছেন দলিল লেখক ও ভেন্ডাররাও। প্রবীণ ভেন্ডার সত্যরঞ্জন ঘোষ বলেন, “আগে দিনে ১০টা ৫ হাজার টাকার স্ট্যাম্প বিক্রি করতাম। এখন ৮ দিনেও ১০টা স্ট্যাম্প বিক্রি করতে পারিনি!’’ দলিল লেখক দেবব্রত প্রামাণিকেরও বক্তব্য, “সপ্তাহে গড়ে ৪টি দলিল হতই। গত ৮ দিনে একটি দলিলও করতে পারিনি। লোকই যে আসছে না।” কিন্তু চেকে তো লেনদেন হতেই পারে। তাহলে অসুবিধেটা কোথায়? সত্যরঞ্জনবাবুর স্পষ্ট জবাব, “ক’জন সাদা টাকায় জমি কেনেন বলুন তো!”

Advertisement

সমস্যার কথা মানছেন ডিস্ট্রিক্ট রেজিস্ট্রার পীযূষ ভট্টাচার্যও। তাঁর কথায়, “এই সময়টায় রেজিস্ট্রেশন অনেকটাই কমেছে। তবে সমস্যা থিতিয়ে গেলে জমি কেনাবেচা বাড়বে। অনেকেই আর বাড়িতে টাকা রাখার ঝুঁকি নেবেন না। সম্পত্তি কিনে রাখবেন।’’

বর্তমানে স্ট্যাম্প ডিউটি লাগে জমির দামের ৫-৭ শতাংশ। ১১ শতাংশ রেজিস্ট্রেশন ফি। অনলাইনেও রেজিস্ট্রেশন ফি দেওয়া যায়। অর্থাৎ সাদা টাকায় জমি কেনাবেচা হলে মানুষের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবুও ক্রেতা-বিক্রেতা কোনও পক্ষই রাজি নন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রোমোটারের কথায়, “আমার কাছেই এক সঙ্গে দু’টি ফ্ল্যাট কিনতে এক খদ্দের এসেছিলেন। শর্ত ছিল পুরনো নোট নিতে হবে। আমি সেই টাকা নিয়ে কী করব। তাই বলেছি, সব ফ্ল্যাট বিক্রি হয়ে গিয়েছে।” নিজের ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন স্বপন পাণিগ্রাহি। তাঁরও অভিজ্ঞতা, ‘‘আগে তবু দু’-একজন খদ্দের মিলছিল। নোটের ঝামেলা এসে যাওয়ায় খদ্দেরই মিলছে না।”

তাই রেজিস্ট্রেশন দফতর এখন সুনসান। প্রবীণ দলিল লেখক জগন্নাথ ঘোষ বলছিলেন, “আড়াই লক্ষ টাকার বেশি হলেই সরকার নজরদারি চালাবে। আর শহরের বুকে ২ কাঠা জমির দামই ১৫-২০ লক্ষ টাকা। কে ঝুঁকি নেবে বলুন তো!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন