প্রশিক্ষণ হলেও আটকে পরিবেশবান্ধব ইট প্রকল্প

রোজগারের স্বপ্ন থমকে মহিলাদের

স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের হায়দরাবাদে নিয়ে গিয়ে পরিবেশ বান্ধব ইট তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। প্রশাসনের উদ্যোগে ইট তৈরির যন্ত্রও কেনা হয়। কিন্তু ইট বানিয়ে রোজগারের স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছে অঞ্জু বিশ্বাস, মৌসুমি মিস্ত্রিদের।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৭ ০১:৪৪
Share:

স্বনির্ভর: নিজেদের তৈরি ইট হাতে গোষ্ঠীর মহিলারা। নিজস্ব চিত্র

স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের হায়দরাবাদে নিয়ে গিয়ে পরিবেশ বান্ধব ইট তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। প্রশাসনের উদ্যোগে ইট তৈরির যন্ত্রও কেনা হয়। কিন্তু ইট বানিয়ে রোজগারের স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছে অঞ্জু বিশ্বাস, মৌসুমি মিস্ত্রিদের। প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রায় সাত মাস বাড়িতেই বসে রয়েছেন শালবনি ও গড়বেতা-১ ব্লকের তিনটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা।

Advertisement

অভিযোগ, ব্লক অফিসে ইট তৈরির যন্ত্র তালাবন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা যে এলাকায় থাকেন, সেখানে যন্ত্র বসানোই হয়নি। শালবনির স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা কয়েকদিন ব্লক অফিসে গিয়ে ইট তৈরির কাজ করেছিলেন। তারপর আর যাননি। আর গড়বেতা-১ ব্লকের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা ইট তৈরির কাজে এখনও যোগই দেননি।

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মহিলাদের অভিযোগ, বারবার প্রশাসনকে জানানো সত্ত্বেও তাঁদের এলাকায় যন্ত্র বসিয়ে ইট তৈরির উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে দেয়নি প্রশাসন। প্রশাসনের অবশ্য পাল্টা দাবি, ওই মহিলারা তাঁদের নিজেদের জমিতে ইট তৈরির যন্ত্র বসাতে রাজি নন। ওই মহিলারা তাঁদের বাড়ির কাছে সরকারি জায়গায় উপযুক্ত পরিকাঠামো-সহ যন্ত্র বসানোর দাবি করছেন। এ জন্য প্রকল্প রূপায়ণে কিছুটা দেরি হচ্ছে।

Advertisement

পরিবেশবান্ধব ইট কী?

মাড ব্লকের সাহায্যে পতিত জমির রুক্ষ্ম মাটি ব্যবহার করে তৈরি হয়। মাটি চেলে নিয়ে তার সঙ্গে প্রয়োজন অনুপাতে সিমেন্ট, বালি, চুনজল মিশিয়ে হস্তচালিত মেশিনে চাপ দিয়ে তৈরি হয় ইট। তৈরির ৭২ ঘণ্টা পরে ইটগুলি জলে ভেজানো হয়। টানা তিন সপ্তাহ জলে ভেজার পর ইটগুলো শক্ত হয়। সাধারণ ইট তৈরিতে জমির উপরের অংশের উর্বর মাটি কাটা হয়। কাঁচা ইট আগুনে পোড়ানোর জন্য কয়লা বা কাঠ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ফলে পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনা থাকে যথেষ্ট। পরিবেশ বান্ধব ইট পোড়াতে হয় না বলে দূষণও হয় কম। সাধারণ ইটের থেকে এই ইটের দাম কম।

স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের দিয়ে পরিবেশ বান্ধব ইট তৈরির জন্য গত বছর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় পাইলট প্রজেক্ট নেওয়া হয়। শালবনির প্রাণকৃষ্ণ স্বনির্ভর দলের দশজন সদস্যা এবং গড়বেতা-১ ব্লকের জয়গুরু স্বনির্ভর দলের পাঁচ জন ও স্বয়ংসিদ্ধা স্বনির্ভর দলের পাঁচজন করে মোট ২০ জনকে বাছা হয়েছিল। গত বছর জুলাইয়ে ওই তিনটি দলের ২০ জন মহিলাকে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীন হায়দরাবাদের ‘রুর‌্যাল টেকনোলজি পার্ক’-এ পাঁচদিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। ওই মহিলারা প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে দু’টি ব্লকে দু’টি যন্ত্রও কেনা হয়।

শালবনির মহাশোল কলোনি এলাকার প্রাণকৃষ্ণ স্বনির্ভর দলের নেত্রী অঞ্জু বিশ্বাস বলেন, ‘‘দলের সদস্যরা বিড়ি বেঁধে সংসার চালান। ইট তৈরি করে ভাল রোজগারের স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল। কিন্তু এলাকায় যন্ত্রই বসানো হয়নি।’’ গড়বেতা-১ ব্লকের হলদিনালা এলাকার জয়গুরু স্বনির্ভর দলের কল্পনা চক্রবর্তী বলছেন, “শালবনির মহিলারা তাও ইট বানিয়েছেন। আমরা তো এখনও ইট বানানোর সুযোগটাই পাইনি।”

শালবনির বিডিও পুষ্পল সরকার ও গড়বেতা-১ ব্লকের বিডিও বিমল শর্মাদের বক্তব্য, “সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে। ওই মহিলাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অন্যদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।” এ বিষয়ে জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ বলেন, “কোথায় সমস্যা হচ্ছে খোঁজ নিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন