ছাত্রী নেই। ফাঁকা পড়ে হস্টেল। নিজস্ব চিত্র
বছর তিনেক তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে দোতলা হস্টেল। কিন্তু সেখানে ছাত্রীরা থাকে না। অব্যবহারে বেহাল হয়ে পড়ছে হস্টেলের ভবন। ভেঙে গিয়েছে জানালার কাচ। চুরি গিয়েছে রেন পাইপ। লালগড় ব্লকের দহিজুড়ি মহাত্মা বিদ্যাপীঠের ছাত্রীদের জন্য তৈরি হওয়া হস্টেলের এখন এমনই হাল।
শুধু দহিজুড়ি নয়। জেলার সাতটি ছাত্রী-হস্টেলের ছবি প্রায় এক। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হয়েছিল ৯টি হস্টেল। সেগুলির মধ্যে দু’টির ক্ষেত্রে পুরনো হস্টেলের ছাত্রীদের নতুন ভবনে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বাকি সাতটি হস্টেল চালু হয়নি এখনও।
জঙ্গলমহলের স্কুলগুলিতে আবাসিক আদিবাসী ও তফসিলি পড়ুয়া পিছু বরাদ্দ দেয় অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতর। তাদের জন্য রয়েছে হস্টেল। কিন্তু শিক্ষা পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রে অন্য জেলার তুলনায় জঙ্গলমহলের পরিস্থিতিটা তো আলাদা। পিছিয়ে প়ড়া এলাকায় ইচ্ছে থাকলেও পরিকাঠামো এবং বাড়ির দূরত্বের কারণে অনেকেই স্কুলে যায় না। বা মাঝপথে ছেড়ে দেয় পড়াশোনা। এসব কথা চিন্তা করেই ক্ষমতার আসার পর অনগ্রসর এলাকা উন্নয়ন বরাদ্দ তহবিলের (বিআরজিএফ) টাকায় ঝাড়গ্রাম জেলায় ৯টি সরকার পোষিত উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে ছাত্রীদের জন্য ৯টি সরকারি হস্টেল গড়ার সিদ্ধান্ত নেয় তৃণমূল সরকার। প্রতিটি হস্টেলের শয্যাসংখ্যা ৫০টি। ২০১৪-’১৫ সালে হস্টেলগুলি তৈরিও হয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলির হাতে তা হস্তান্তর করে দেওয়া হয়। তবু নয়াগ্রাম ব্লকের দু’টি ছাড়া বাকি হস্টেলগুলি চালু হয়নি।? প্রশাসন সূত্রের খবর, নেপথ্যে রয়েছে মূলত দু’টি কারণ। প্রথমত, এই হস্টেলগুলিতে থাকতে গেলে পড়ুয়াদের খরচ দিতে হবে। কিন্তু খরচ দিয়ে পড়ুয়াদের রাখতে রাজি নন অভিভাবকেরা। তাই চালু করা যায়নি ছাত্রীনিবাসগুলি। দ্বিতীয়ত, ভবন তৈরি হলেও বাকি কিছুই ঠিক হয়নি এখনও। হস্টেলগুলির জন্য স্কুল সার্ভিস কমিশন থেকে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করার কথা থাকলেও এখনও হয়নি। হস্টেল থাকতে হলে ছাত্রীদের কত টাকা দিতে হবে ঠিক হয়নি তা-ও। শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক মানছেন, ‘‘পরিকল্পনাতেই গলদ। জঙ্গলমহলের ক্ষেত্রে এ ধরনের হস্টেল চালু করা সম্ভব নয়।’’
তা হলে হস্টেলগুলির ভবিষ্যৎ কী? ঝাড়গ্রাম জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) লক্ষ্মীধর দাস বলেন, “ছাত্রীদের জন্য তৈরি ওই হস্টেলগুলির বিষয়ে শিক্ষা দফতরকে জানানো হয়েছে। হস্টেলগুলি দ্রুত চালু করতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।” শিক্ষা দফতরের ওই আধিকারিকের কথায়, ‘‘বিশেষ বরাদ্দ চেয়ে শিক্ষা দফতরের ঊর্ধ্বতন মহলে আবেদন করা হয়েছে।’’
লালগড় ব্লকের দহিজুড়ি মহাত্মা বিদ্যাপীঠ উচ্চ মাধ্যমিক, কাঁটাপাহাড়ি বিদ্যাপীঠ, বিনপুর হাইস্কুল, গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের পাঁচকাহানিয়া উচ্চ মাধ্যমিক, সারিয়া আদিবাসী উচ্চমাধ্যমিক, গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের খাড়বান্ধি এসসি উচ্চমাধ্যমিক, ঝাড়গ্রাম ব্লকের বাঁধগোড়া অঞ্চল বিদ্যালয়, নয়াগ্রাম ব্লকের নয়াগ্রাম বাণীবিদ্যাপীঠ ও নয়াগ্রাম থানা বালিকা বিদ্যাপীঠে ছাত্রীদের জন্য ওই হস্টেলগুলি তৈরি হয়েছে। লালগ়ড় ব্লকের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কথায়, “অভিভাবকদের নিয়ে আলোচনা করে ছাত্রীদের জন্য হস্টেল চালু করার চেষ্টা করেছিলাম। কিছু পড়ুয়া সরকারি খরচে হস্টেলে থাকছে। তাহলে ওই হস্টেলে ছাত্রীরা কেন খরচ দিয়ে থাকবে?”
হস্টেল আছে। ছাত্রী নেই। নয়া ভবন থেকে জিনিসপত্র চুরি করে দিব্যি দিন কাটছে দুষ্কৃতী আর নেশাড়ুদের।