রিপোর্ট তলব রাজ্যের

ব্যাঙ্ক নেই জেলার ৪৩ পঞ্চায়েতে

পশ্চিম মেদিনীপুরে ২১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৪৩টিতেই কোনও ব্যাঙ্কের কোনও শাখা নেই। এই সব গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে যেতে হয় আশপাশের গ্রাম কিংবা শহরে।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৭ ০১:২০
Share:

ফাইল চিত্র।

একশো দিনের কাজের প্রকল্প থেকে বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা বা আবাস যোজনার টাকা— সবই এখন সরাসরি উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হয়। সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে গতি আনতে গরিব মানুষের জন্য জনধন অ্যাকাউন্টও খুলে দিয়েছে কেন্দ্র। অর্থাৎ সরকার চাইছে, সব মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকুক। কিন্তু বাস্তব হল, বহু এলাকাই এখনও ব্যাঙ্কিং পরিষেবার বাইরে।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরে ২১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৪৩টিতেই কোনও ব্যাঙ্কের কোনও শাখা নেই। এই সব গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে যেতে হয় আশপাশের গ্রাম কিংবা শহরে। ফলে, ভোগান্তির শেষ থাকে না। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধে থেকেও অনেকে বঞ্চিত হন। বিশেষ সমস্যা হয় ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে। বেকার যুবক-যুবতীরা প্রধানমন্ত্রী কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রকল্প কিংবা বাংলা স্বনির্ভর কর্মসংস্থান প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হন।

জেলার যে সব গ্রাম পঞ্চায়েতে ব্যাঙ্ক নেই, তার মধ্যে রয়েছে মেদিনীপুরের (সদর) পাঁচখুরি-২। পাঁচখুরি থেকে মেদিনীপুর শহরের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই বাধ্য হয়ে সদর শহরে এসে ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। স্থানীয় বাসিন্দা মেজুয়ালি খানের কথায়, “গ্রামে ব্যাঙ্ক থাকলে ভাল। না হলে অনেকে ভাবেন কোথায় যাব, কাকে জিজ্ঞাসা করব। শহরে গিয়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার তো অনেক ঝামেলা।”

Advertisement

পরিস্থিতি দেখে জেলার ঠিক কতগুলো গ্রাম পঞ্চায়েতে ব্যাঙ্ক নেই, সেই রিপোর্ট তলব করেছে রাজ্য সরকারের অর্থ দফতর। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, সম্প্রতি জেলা থেকে রিপোর্ট পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ আধিকারিক মানছেন, “রাজ্য রিপোর্ট চেয়েছিল। জেলা থেকে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।’’ পাশাপাশি তিনি বলেন, “প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। যে সব পঞ্চায়েতে ব্যাঙ্ক নেই, সেখানে ব্যাঙ্ক চালুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, কোন পঞ্চায়েতে কোন ব্যাঙ্ক শাখা খুলবে, তারও তালিকা সব ব্যাঙ্কে পাঠানো হয়েছে। সেই তালিকা ধরে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অথচ, পশ্চিম মেদিনীপুরে যে ব্যাঙ্কের শাখা খুব কম তা নয়। জেলায় যেখানে ২১টি ব্লক, ২১১টি পঞ্চায়েত, ৭টি পুরসভা, সেখানে ব্যাঙ্কের মোট শাখা সাড়ে তিনশো। গ্রামীণ এলাকায় আড়াইশো ব্যাঙ্ক রয়েছে। শহরে প্রায় একশোটি। জেলা প্রশাসনের অন্য এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, “বেশিরভাগ ব্যাঙ্ক গ্রামাঞ্চলে শাখা খুলতে চায় না। আমরা বলেছি, শুধু শহরে শাখা খুললে হবে না। ব্যাঙ্কগুলোও জানিয়েছে, তারা ধীরে ধীরে গ্রামাঞ্চলে শাখার সংখ্যা বাড়াবে।’’

পশ্চিম মেদিনীপুরের লিড ডিস্ট্রিক্ট ব্যাঙ্ক ম্যানেজার শক্তিপদ পড়িয়ারও আশ্বাস, ‘‘যে সব গ্রাম পঞ্চায়েতে ব্যাঙ্ক নেই, সেখানে কোনও না কোনও ব্যাঙ্কের শাখা খোলার সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন