আট ক্যামেরায় ৮০ হাজার বর্গফুট

নজরদারি নেই ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটিতে

ঝাঁ চকচকে হাসপাতাল ভবনের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে আগেই। নিরাপত্তার প্রশ্নেও যে ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে বজ্র আটুঁনি ফস্কা গেরো— তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। দিন কয়েক আগেই এক রোগী উধাও হয়ে গিয়েছিলেন, পরে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৭ ১৩:০০
Share:

ঝাঁ চকচকে হাসপাতাল ভবনের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে আগেই। নিরাপত্তার প্রশ্নেও যে ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে বজ্র আটুঁনি ফস্কা গেরো— তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। দিন কয়েক আগেই এক রোগী উধাও হয়ে গিয়েছিলেন, পরে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। আর তারপরেই প্রশ্ন উঠেছে হাসপাতালে নিরাপত্তা নিয়ে।

Advertisement

প্রায় ৮০ হাজার বর্গফুটের পাঁচতলা হাসপাতালে নজরদারি ক্যামেরা রয়েছে মাত্র আটটি। তা দিয়ে যে নজরদারির কাজ পুরোপুরি সম্ভব নয়, মেনে নিয়েছেন খোদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল সূত্রের খবর, আউটডোরে এবং জরুরি বিভাগে ঢোকার মুখে একটি করে, ক্যান্টিনের কাছে একটি এবং চারটি লিফট-এর সামনে লবিতে চারটি ক্যামেরা রয়েছে। নজরদারির বাইরেই থেকে গিয়েছে হাসপাতালের মূল চারটি প্রবেশ পথ, লিফট, সিঁড়ি, অপারেশন থিয়েটর এবং ওয়ার্ডগুলি।

সম্প্রতি সুপার স্পেশ্যালিটি ভবনে চিকিৎসাধীন এক রোগী উধাও হয়ে যান। কয়েকদিন পরে ‘অ্যাকিউট অ্যালকোহলিক’ ওই রোগীর মৃতদেহ উদ্ধার হয় ঝাড়গ্রাম শহরের অদূরে রাধানগর এলাকা থেকে। এই ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছেন
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বেসরকারি সংস্থার সুপারভাইজারকে শো-কজ করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিভাগীয় অনুসন্ধানেই উঠে এসেছে নিরাপত্তার ফাঁকফোঁকর। আর তাতেই অস্বস্তিতে পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের এক আধিকারিক স্বীকার করেছেন, হাসপাতালের চত্বরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন বেসরকারি সংস্থার ২০-২৫ জন কর্মী। কিন্তু পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ছাড়া নজরদারি চালানো খুবই কঠিন কাজ। কে কখন ঢুকছেন, কখন বেরোচ্ছেন তা স্বল্প সংখ্যক ক্যামেরায় ধরা পড়ে না। লিফটে না উঠে, কেউ যদি সিঁড়ি দিয়ে নেমে যান, কেউ টের পাবেন না।

সুপার স্পেশ্যালিটি ও জেলা হাসপাতাল মিলিয়ে নতুন ও পুরনো ভবনে মোট ৪২৪টি শয্যা রয়েছে। ঝাড়গ্রাম জেলার পাশাপাশি, সীমানাবর্তী বাঁকুড়া জেলা ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যের রোগীরাও এখানে চিকিৎসার জন্য আসেন। বেশিরভাগ সময়ই শয্যা সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ রোগীকে ভর্তি নিতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন সুপার স্পেশ্যালিটির আউটডোরে আসেন হাজার দু’য়েক রোগী। ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের আউটডোর-সহ গুরুত্বপূর্ণ চারটি ওয়ার্ড (মেল মেডিসিন ও সার্জিক্যাল, ফিমেল মেডিসিন ও সার্জিক্যাল) রয়েছে সুপার স্পেশ্যালিটি ভবনে। এ ছাড়া হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, পাঁচটি অপারেশন থিয়েটর, এক্সরে, ইউএসজি, ফিজিও থেরাপি, এন্ডোস্কোপি, প্যাথোলজি বিভাগগুলিও রয়েছে সুপার স্পেশ্যালিটি ভবনে।

কর্তৃপক্ষের দাবি, বছর দু’য়েক আগে নির্মাণকারী সংস্থা যখন স্বাস্থ্য দফতরকে ভবনটি হস্তান্তর করে তখন ওই আটটি সিসি ক্যামেরাই লাগানো ছিল। পরে ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্য দফতরে আবেদন জানানো হয়। কিন্তু বরাদ্দ মেলেনি। কয়েক মাস আগে ফের ৩৬টি ক্যামেরার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে নিরাপত্তার জন্য রোগীর সচিত্র পরিচয় ও বিশেষ পোশাকের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও
অনুমোদন মেলেনি।

ঝাড়গ্রাম জেলার সিএমওএইচ অশ্বিনী মাঝি বলেন, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন। সেগুলি কার্যকর করার জন্য উপর মহলে আবেদন করা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন