অপহরণের চেষ্টারও অভিযোগ

ব্যাঙ্ককর্মী পরিচয়ে ‘লুটপাট’

এই ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। ওই যুবকেরা প্রকৃতই ব্যাঙ্কের লোক কি না। নাকি লুটপাটই তাদের উদ্দেশ্য ছিল তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তদন্তে নেমে পুলিশ ওই ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের ডেকে পাঠান। এ দিন সন্ধ্যায় কাঁথি থানায় আসেন  ব্যাঙ্কের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মর্গেজ বিভাগের আধিকারিক শৌভিক সাহা। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।  

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাঁথি শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৩৯
Share:

আটক তিন অভিযুক্ত। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

ব্যাঙ্কের ঋণ পরিশোধ বিভাগের প্রতিনিধি সেজে এক গ্রাহকের বাড়িতে চড়াও হয়ে লুটপাট চালানোর অভিযোগ উঠল কয়েকজনের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ওই পরিবারের দুই নাবালিকাকে অপহরণের চেষ্টাও করা হয় বলে অভিযোগ।

Advertisement

এই ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। ওই যুবকেরা প্রকৃতই ব্যাঙ্কের লোক কি না। নাকি লুটপাটই তাদের উদ্দেশ্য ছিল তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তদন্তে নেমে পুলিশ ওই ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের ডেকে পাঠান। এ দিন সন্ধ্যায় কাঁথি থানায় আসেন ব্যাঙ্কের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মর্গেজ বিভাগের আধিকারিক শৌভিক সাহা। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

কাঁথির দেশপ্রাণ ব্লকের ছনবেড়িয়া গ্রামে বৃহস্পতিবার ভোররাতে ওই ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন রাত তিনটে নাগাদ কয়েকজন গ্রামবাসী চন্দন গিরির বাড়িতে এসে ডাকাডাকি শুরু করে। চন্দনবাবুর একটি পানের দোকান রয়েছে। স্ত্রী মাধুরীদেবীর অভিযোগ, রাত তিনটে নাগাদ মোটর বাইক ও মারুতি ভ্যানে চেপে এক মহিলা-সহ সাত আটজন অপরিচিত ব্যক্তি তাঁদের বাড়িতে আসে। মহিলা জানায়, ব্যাঙ্কের ঋণ শোধের ব্যাপারে তারা এসেছে। তিনি দরজা খুলে দিলে হুড়মুড়িয়ে কয়েকজন যুবক ঘরে ঢুকে তাণ্ডব চালাতে শুরু করে। দুষ্কৃতীরা বাড়ির আলমারির ও ট্রাঙ্কের চাবি চায়। বাধা দিতে গেলে মাধুরীদেবীর দেওর তাপস ও জা সোমা গিরিকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। মাধুরীদেবী জানান, তিনি চিৎকার শুরু করলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। বেগতিক দেখে দুষ্কৃতীরা পালানোর চেষ্টা করে।

Advertisement

প্রতিবেশী ইন্দুভূষণ গিরি বলেন, ‘‘চিৎকার শুনে লোকজন বেরিয়ে এলে একটি বাইকে এক মহিলাকে নিয়ে এক যুবক দ্রুত পালিয়ে যায়। বাকিরা গাড়িতে চেপে পালানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু গ্রামেরই এক যুবকের মোটর বাইক গাড়ির সামনে চলে আসায় তারা আটকে যায়। তিনজন ধরা পড়লেও বাকিরা পালিয়ে যায়।’’ আক্রান্ত পরিবারের তরফে এদিনই থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ধৃত তিনজনকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে জনতা। ঘটনায় পূজা দাস নামে এক মহিলা জড়িত বলে পুলিশ গ্রামবাসীদের কাছ থেকে জানতে পেরেছে।

এক প্রতিবেশী জানান, চন্দনবাবুর ভাই তাপসের ছোটখাটো লেদ-এর ব্যবসা আছে। তার জন্য তাপসবাবু ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছে শুনেছিলেন। তবে এদিন গ্রামে আসা লোকেরা ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিলেও তার কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেনি।

গ্রামবাসীদের দাবি, দুষ্কৃতীরা পালানোর সময় একটি ব্যাগ ফেলে যায়। সেই ব্যাগে কিছু কাগজপত্র সহ রুট ম্যাপ, একটি দেশি রিভলভার ও তিনটি কার্তুজ ছিল। সবই পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, আটক তিনজন ভগবানপুর থানা এলাকার বাসিন্দা। একজন কালুরভেড়ি গ্রামের মেহেরাজ খান, একজন বিষ্ণুপুর গ্রামের মেহেবুব মল্লিক এবং দুর্গাপুর গ্রামের অনিমেষ দাস। এদের মধ্যে অনিমেষ গাড়ির চালক। পুলিশের দাবি, জেরায় তিনজন জানিয়েছে, একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের কোলাঘাট শাখা থেকে তাদের ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য ছনবেড়িয়া গ্রামে পাঠানো হয়েছিল।

জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, “যাদের আটক করা হয়েছে, তারা প্রকৃতই ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি না কি দুষ্কৃতী তা খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। ওই ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষর সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে আটক ব্যক্তিরা ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি বললেও কার কোনও প্রমাণপত্র দেখাতে পারেনি।’’

যদিও পুলিশের দাবি, ছনবেড়িয়া গ্রামে এমন ঘটনা প্রথম নয় আগেও একাধিকবার ঘটেছে। এই গ্রামে অনেক বাগদা চিংড়ি চাষি থাকেন। তাঁরা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণও নেন। কিন্তু অনেক সময় সঠিক সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে ব্যাঙ্ক তা শোধের জন্য প্রাতিনিধি দল পাঠায়। এ ক্ষেত্রে প্রকৃত ঘটনা জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন