তিন কাউন্সিলরকে দেহরক্ষী, জল্পনা

পুরবোর্ড গঠনের আগে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে খড়্গপুরে কাউন্সিলরদের বাড়ির সামনে পুলিশ পাহারা বসেছিল। তা এখন ঢিলেঢালা। কিন্তু পুরবোর্ড গঠনের পর থেকে নতুন করে খড়্গপুরের পুরপ্রধান-সহ তিন হেভিওয়েট কাউন্সিলরের সঙ্গে দেহরক্ষী দেখা যাচ্ছে। আর এ নিয়েই শহরে শুরু হয়েছে জল্পনা। তৃণমূল শহর সভাপতি তথা কাউন্সিলর দেবাশিস চৌধুরী, পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার এবং কংগ্রেস কাউন্সিলর রবিশঙ্কর পাণ্ডের সঙ্গে দু’জন করে দেহরক্ষী দেখা যাচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৫ ০১:১৪
Share:

দেহরক্ষী পেয়েছেন বর্তমান ও প্রাক্তন দুই পুরপ্রধানই। বাঁ দিকে, তৃণমূলের প্রদীপ সরকার। ডান দিকে, কংগ্রেসের রবিশঙ্কর পাণ্ডে। ছবি তুলেছেন রামপ্রসাদ সাউ।

পুরবোর্ড গঠনের আগে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে খড়্গপুরে কাউন্সিলরদের বাড়ির সামনে পুলিশ পাহারা বসেছিল। তা এখন ঢিলেঢালা। কিন্তু পুরবোর্ড গঠনের পর থেকে নতুন করে খড়্গপুরের পুরপ্রধান-সহ তিন হেভিওয়েট কাউন্সিলরের সঙ্গে দেহরক্ষী দেখা যাচ্ছে। আর এ নিয়েই শহরে শুরু হয়েছে জল্পনা।
তৃণমূল শহর সভাপতি তথা কাউন্সিলর দেবাশিস চৌধুরী, পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার এবং কংগ্রেস কাউন্সিলর রবিশঙ্কর পাণ্ডের সঙ্গে দু’জন করে দেহরক্ষী দেখা যাচ্ছে। আবেদন না করেই নাকি তাঁরা দেহরক্ষী পেয়েছেন।
হঠাৎ কেন এই তিন জনকেই কেন দেহরক্ষী দেওয়া হল?
খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্তের জবাব, ‘‘আগেই কাউন্সিলরদের বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন হয়েছিল। পরে হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে কাউন্সিলরদের নিরাপত্তা আরও সুনিশ্চিত করা হয়েছে। পুরবোর্ড গঠনের আগে থেকেই পরিস্থিতি বুঝে অনেক কাউন্সিলরকে দেহরক্ষী দেওয়া হয়েছে। যাঁরা আবেদন করেছেন তাঁরাও পেয়েছেন।’’
বিরোধীদের অবশ্য যুক্তি, গোষ্ঠী কোন্দলে জেরবার তৃণমূলে নিরাপত্তার অভাবের কারণেই দুই কাউন্সিলরকে দেহরক্ষী দেওয়া হয়েছে। আর সেই বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বিরোধী কাউন্সিলর রবিশঙ্করবাবুকেও দেহরক্ষী দেওয়া হয়েছে। সিপিএমের শহর জোনাল সম্পাদক অনিতবরণ মণ্ডল বলেন, ‘‘শহরে যা পরিবেশ তাতে সকলের দেহরক্ষী প্রয়োজন। কিন্তু শাসক দলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে কয়েকজন কাউন্সিলরের নিরাপত্তা পুলিশ সুনিশ্চিত করেছে। আর লোক দেখাতে রবি পাণ্ডেকেও দেহরক্ষী দেওয়া হয়েছে।’’ সিপিআই জেলা সহ-সম্পাদক বিপ্লব ভট্টের মতেও, ‘‘মানুষের উপরে আস্থা হারিয়ে ফেলায় ওঁদের দেহরক্ষীর প্রতি ভরসা বাড়ছে। তাই তৃণমূলের দুই হেভিওয়েট কাউন্সিলরকে দেহরক্ষী দেওয়া হল। আর তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার ভয়ে বিরোধী এক কাউন্সিলরকেও দেহরক্ষী দেওয়া হয়েছে।’

Advertisement

পুলিশ পুরবোর্ড গঠনের আগে থেকে কাউন্সিলদের দেহরক্ষী দেওয়ার কথা বললেও শহরবাসী সেই দেহরক্ষী দেখতে পায়নি। দেহরক্ষী পাওয়া কাউন্সিলরাও তাই বলছেন। পুরপ্রধান প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘আমি দেহরক্ষীর জন্য কোনও আবেদন করিনি। ছ’দিন হল আমার সঙ্গে দেহরক্ষী রয়েছে। পুলিশ-প্রশাসন কেন দিয়েছে বলতে পারব না।’’

গত ৪ জুন পুরবোর্ড গঠনের রাত থেকেই কাউন্সিলরদের বাড়ির পুলিশ পাহারা উঠে গিয়েছিল। তারপর হঠাৎ সশস্ত্র দেহরক্ষী পেয়ে অবাক প্রাক্তন পুরপ্রধান রবিশঙ্করবাবুও। তিনি বলেন, ‘‘৫ জুন সকাল থেকে বাড়িতে পুলিশ ছিল না। ৮-৯ তারিখ নাগাদ দু’জন সশস্ত্র পুলিশ এসে বলল তাঁরা আমার দেহরক্ষী। আমি আবেদনও করিনি, আর এর কারণও জানি না।’’ খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অবশ্য বলছেন, ‘‘কে, কী জানে আমি জানি না। তবে পুরবোর্ড গঠনের আগে থেকেই অনেক কাউন্সিলরের দেহরক্ষী ছিল। হয়তো আপনারা দেখতে পাননি।’’

Advertisement

পুরবোর্ড গঠনের আগে শহরে তৃণমূল-দুষ্কৃতী যোগ এবং তার পরিণামে শহর জুড়ে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। একের পর এক কাউন্সিলরের বাড়িতে হামলাও হয়েছিল। সেই পরিস্থিতিতে কাউন্সিলরদের নিরাপত্তা চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় কংগ্রেস। হাইকোর্ট কাউন্সিলরদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়। তারপরই জেলা পুলিশ শহরের ৩৫ জন কাউন্সিলরের বাড়িতে দু’জন করে লাঠিধারী পুলিশ মোতায়েন করে। পুরবোর্ড গঠনের পরে তা শিথিল হয়। কয়েকজন কাউন্সিলর সেই ‘হাউস গার্ড’ তুলে নেওয়ার আর্জিও জানান। এখনও অবশ্য কয়েকজন কাউন্সিলরের বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে তাতে ঢিলেঢালা ভাব স্পষ্ট। এরই মধ্যে নতুন করে তিনজন কাউন্সিলরের সঙ্গে দেহরক্ষী দেখা যাচ্ছে। পুলিশ সূত্রে খবর, যে সব কাউন্সিলরের নিরাপত্তার অভাব রয়েছে বলে পুলিশের মনে হয়েছে তাঁদেরই নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। আবার যাঁরা নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করছেন, তাঁদের বিষয়টিও দেখা হচ্ছে।

বহুদিন ধরেই তৃণমূলের শহর সভাপতি হিসেবে দেবাশিসের একজন দেহরক্ষী ছিল। কিন্তু পুরভোটের ফল প্রকাশের পরে সেই দেহরক্ষী তুলে নেওয়া হয়। পুরভোটের ফল আশানুরূপ না হওয়াতেই শহর সভাপতির দেহরক্ষী তুলে নেওয়া হল কি না, তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে প্রশ্ন ওঠে। কর্মীদের একাংশের মধ্যেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল। তৃণমূল বোর্ড গড়ার পরে ফের তাঁকে দেহরক্ষী ফিরিয়ে দেওয়া হল বলে মনে করছে তৃণমূলের একাংশ তবে। শহরের পুরপ্রধানের দেহরক্ষী এই প্রথম। জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি অজিত মাইতি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘দেবাশিসের তো আগেও দেহরক্ষী ছিল। আমাদের দলের জেলা সভাপতি, মেদিনীপুরের পুরপ্রধানের দেহরক্ষী রয়েছে। তাই প্রদীপ সরকারও দেহরক্ষী পেতে পারেন। এটা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন