দীর্ঘ টালবাহানার পর অবশেষে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চারটি পুরসভার উপ-পুরপ্রধানের নাম চূড়ান্ত করল তৃণমূল। বোর্ড গঠনের দিনই, গত ২৮ মে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম রামজীবনপুর পুরসভার উপ-পুরপ্রধান হিসাবে শিউলি সিংহের নাম ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু ঘাটাল মহকুমার বাকি চারটি পুরসভায় পুরপ্রধানের মতো উপ-পুরপ্রধান কে হবে তা নিয়ে শুরু হয়েছিল জোর কোন্দল।
তৃণমূল সূত্রের খবর, কোন্দল ঠেকাতে তাই এ বার খড়ার বাদে বাকি তিনটি ঘাটাল, ক্ষীরপাই ও চন্দ্রকোনায় দলে ক্ষমতাসীনদের বাদ দিয়ে নতুন মুখকেই চূড়ান্ত করল রাজ্য নেতৃত্ব। এক কথায় খড়্গপুর পুরসভার ধাঁচে এই পুরসভা গুলিতেও উপ-পুরপ্রধান ঠিক করল রাজ্য নেতৃত্ব। জানা গিয়েছে, এলাকায় দলীয় কাউন্সিরলদের ঝামেলা এড়াতে বুধবার কলকাতায় দলের রাজ্য সভাপতি জেলার নেতৃত্বদের সঙ্গে বৈঠক করে উপ-পুরপ্রধানদের নাম ঘোষণা করেন। দলের এক জেলা নেতার দাবি, “রাজ্য নেতৃত্ব বৈঠকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, উপ-পুরপ্রধান নিয়ে যদি কোনও পুরসভায় কোনও কাউন্সিলর দল বিরোধী কাজ করেন তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।’’ তবে জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের দাবি, “সবই রাজ্য নেতৃত্ব ঠিক করেছেন। ফলে কারোর আপত্তি থাকার কথা নয়। যদি থাকে তাহলে তিনি রাজ্য সভাপতি বা দলনেত্রীকে জানাতেই পারেন।”
দলীয় সূত্রের খবর, দলীয় টিকিট পাওয়া থেকে পুরপ্রধান ও উপ-পুরপ্রধান নিয়েও দলকে কম বেগ পেতে হয়নি। দফায় দফায় বৈঠক করেও উপ-পুরপ্রধানের নাম চূড়ান্ত করতে পারেনি জেলা নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, ঝামেলা এড়াতে জেলা নেতৃত্ব রাজ্যের উপরই দায়িত্ব দিয়ে হাঁফ ছাড়েন বলে খবর। ক্ষীরপাই পুরসভায় গৌতম ভট্টাচার্য ও সুজয় পাত্র তৃণমূলের দক্ষ সংগঠক। তাই উপ-পুরপ্রধান কাকে করা হবে, তা নিয়ে জল্পনা ছিল তুঙ্গে। সেখানে আনকোরা চৈতালি মণ্ডলকে উপ-পুরপ্রধান হিসাবে মনোনীত করেছেন রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। ঘাটাল পুরসভায় প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান উদয়শঙ্কর সিংহরায়কে সরিয়ে দায়িত্বে এলেন স্বপন মালিক। একইভাবে চন্দ্রকোনায় ক্ষমতাসীনদের সরিয়ে নতুন মুখ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা প্রতিমা পাত্রকে উপ-পুরপ্রধান হিসাবে মনোনীত করেন দলীয় নেতৃত্ব। খড়ারে দায়িত্ব পেলেন অরূপ রায়।
তৃণমূলের এক জেলা নেতার কথায়, “রামজীবনপুর পুরসভায় নির্মল চৌধুরীকে চেয়ারম্যান না করায় এখন থেকেই দলের বেশিরভাগ কাউন্সিলর ও কর্মীরা ক্ষোভে ফুঁসছে। একই পরিস্থিতি ক্ষীরপাই পুরসভাতেও। পরিস্থিতি যা, যে কোনও দিন বড় বিক্ষোভের সম্ভাবনা রয়েছে।’’ বলা যেতে পারে, রামজীবনপুরের আঁচ যাতে অন্য কোনও পুরসভায় না পড়ে, তাই উপ-পুরপ্রধান বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নতুন মুখ এনে বিষয়টি একপ্রকার ধামাচাপা দেওয়ার কৌশল নিল তৃণমূল।