ফুলের কাঁটা বিঁধছে ঘাসফুলকে

শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, খোলা আকাশই ভরসা। কার্যত এটাই এখন স্লোগান কোলাঘাট ফুল ব্যবসায়ী অমল জানাদের। আকাশের দিকে আঙুল দেখিয়ে অমলবাবু বললেন, ‘‘মাথায় উপরে ছাদ নেই। রোদ-জল সহ্য করে এখানেই ব্যবসার জন্য পড়ে থাকতে হয়। এক চিলতে ছাউনির জন্য দোরে দোরে ঘুরেছি, কোনও কাজ হয়নি।’’

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৫১
Share:

শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, খোলা আকাশই ভরসা।

Advertisement

কার্যত এটাই এখন স্লোগান কোলাঘাট ফুল ব্যবসায়ী অমল জানাদের। আকাশের দিকে আঙুল দেখিয়ে অমলবাবু বললেন, ‘‘মাথায় উপরে ছাদ নেই। রোদ-জল সহ্য করে এখানেই ব্যবসার জন্য পড়ে থাকতে হয়। এক চিলতে ছাউনির জন্য দোরে দোরে ঘুরেছি, কোনও কাজ হয়নি।’’

রাজ্যের ফুলচাষের মানচিত্রে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পরিচিতি নতুন নয়। কলকাতার মল্লিকঘাট ফুল বাজারের অন্যতম ফুলের জোগানদার এই এলাকার চাষিরাই। কোলাঘাট স্টেশনের পাশে আর দেউলিয়ায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে প্রতিদিন সকালে ফুলের বাজার বসে। কিন্তু ফুল বিক্রি করতে হয় খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে। বর্ষায় জল-বৃষ্টি ও গ্রীষ্মে রোদ মাথায় নিয়ে বছরের পর বছর ব্যবসা চলছে এভাবেই। ভোটের সময় আসে প্রতিশ্রুতির বন্যা আর ভোট মিটে গেলেই সব হাওয়া। কিন্তু আর বিষয়টা নিয়ে চুপ করে থাকছেন না ফুলচাষিরা। এ বার ভোটের প্রচারে আসা প্রার্থীদের কাছে ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন অনেকেই। আর তৃণমূলের বিরুদ্ধে সেটাকেই হাতিয়ার করছে বাম-কংগ্রেস জোট।

Advertisement

‘কৃষক দরদি’ হিসেবে ঘোষিত তৃণমূল সরকার বিভিন্ন এলাকায় চাষিদের জন্য সরকারি কিষাণ মান্ডি তৈরি করেছে। সেখানে কোলাঘাটে ফুলচাষিদের জন্য মাথার সামান্য ছাদটুকুও মিলল না কেন এই পাঁচ বছরে প্রশ্ন তুলছেন অনেক ফুলচাষিই। অভিযোগ, রেল দফতরের জায়গায় খোলা আকাশের নিচে বাজারে এসে প্রতিদিন রোদ, বৃষ্টি-জলে দুর্ভোগে পড়তে হয়। একই দুরাবস্থা কোলাঘাটের দেউলিয়া ফুল বাজারেও। কলকাতা থেকে মুম্বইগামী ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বসে ফুলবাজারটি। সেখানে ওই সড়কের ধারে দাঁড়িয়ে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ফুল বিক্রি করতে হয় খোলা আকাশের নিচে। পূর্ব পাঁশকুড়া বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিএমের প্রার্থী ইব্রাহিম আলির তাই জোর সওয়াল, ‘‘বামফ্রন্ট সরকারের আমলেই ফুল চাষিদের স্বার্থে পাঁশকুড়ার মেচগ্রামে স্থায়ী ফুলবাজার গড়া হয়েছিল। কোলাঘাটেও একইভাবে স্থায়ী ফুলবাজার গড়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তৃণমূল পরিচালিত সরকার বিষয়টি গুরুত্বই দেয়নি।’’

বিরোধীদের তোলা এই অভিযোগকে অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন পূর্ব পাঁশকুড়ার বিদায়ী বিধায়ক তথা ফের তৃণমূল প্রার্থী বিপ্লব রায়চৌধুরী। তাঁর উত্তর, ‘‘কোলাঘাটের ফুলচাষিদের জন্য স্থায়ী ফুল বাজারের প্রয়োজনের কথা সবাই জানে। বাস্তব সমস্যার কথা জেনেও বিরোধীরা তা চেপে গিয়ে নানা কথা বলছেন।’’ সমস্যাটা কোথায়? তিনি বলেন, ‘‘কোলাঘাট স্টেশন সংলগ্ন এলাকা দিয়ে তেলের পাইপ লাইন থাকায় ফুলবাজারের জায়গার উপর কোনও স্থায়ী কাঠামো গড়া যাবে না। তাই ওই ফুলবাজার এভাবে চলছে। তা সত্বেও বিকল্প ব্যবস্থার পরিকল্পনা রয়েছে।’’ কিন্তু এই পাঁচ বছরেও সেই বিকল্প ব্যবস্থার কিছুই হল না তো! সুর বদলে যায় বিপ্লববাবুর। উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে কোলাঘাট শহরে হ্যামিল্টন সেতু সংস্কার, বেইলি সেতু পুনর্নির্মাণ ও গ্রামীণ এলাকায় পাকা রাস্তাঘাট, সেতু তৈরি হয়েছে। উন্নয়নের জন্যই মানুষ ফের আমাদের সমর্থন করবে।’’

ফুলবাজারের পাশাপাশি তৃণমূলকে চাপে ফেলেছে কোলাঘাটকে পুরসভা করার প্রতিশ্রুতিও। রূপনারায়ণ নদীর তীরের এই শহর ব্যবসার হাত ধরে নগরায়নের পথে এগিয়েছে অনেকটাই। কিন্তু পুরসভার তকমা না পাওয়ায় বাসিন্দাদের নাগরিক পরিষেবার অনেকটা অধরা থেকে গিয়েছে বলে অভিযোগ। পুরসভার দাবি পূরণের আশা উজ্জ্বল হয়েছিল বছর দু’য়েক আগে। সেই সময় কোলাঘাট ও মেচেদা এলাকা নিয়ে পুরসভা গঠনের প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। তবে কোলাঘাট শহরকে পুরসভার স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি প্রশাসনিক স্তরে আটকে থাকায় এ বার সেটাও হাতিয়ার হয়ে উঠেছে বিরোধীদের কাছে। তৃণমূল প্রার্থী বিপ্লব রায়চৌধুরী বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন কর্মসূচির খতিয়ান সংক্রান্ত প্রচার পুস্তিকায় কোলাঘাটকে ‘মিউনিসিপ্যালিটি এলাকা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আর সে কারণেই এ বার বিধানসভা ভোটে কোলাঘাট শহরের বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলেছেন শহরের স্বীকৃতি পেতে তাদের আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে!

পূর্ব পাঁশকুড়া বিধানসভায় ২০১১ সালের বিধানসভা ও ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের নিরিখে এখানে শাসকদল তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও এ বার লড়াই জমে উঠেছে বাম-কংগ্রেস জোট বাঁধায়। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল–কংগ্রেস জোট প্রার্থী বিপ্লব রায়চৌধুরী সিপিএম বিধায়ক অমিয় সাহুকে ১৩ হাজার ভোটে হারিয়ে জয়ী হয়েছিল। বিপ্লববাবু পেয়েছিলেন ৫০.৭১ শতাংশ ভোট। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে এই বিধানসভা এলাকায় তৃণমূল ও সিপিএম উভয়ের ভোটপ্রাপ্তির হার বেশ কিছুটা কমে যায়। তৃণমূল ৪৪.৬৭ শতাংশ ভোট এবং সিপিএম ৩৬.১০ শতাংশ ভোট পায়। তৃণমূল ও বামেদের ভোটে থাবা বসিয়েছিল বিজেপি।

এ বার ভোটে যুযুধান দু’পক্ষ সেই ভোটের কতটা ফিরে পায়, তার উপর নির্ভর করছে অনেক কিছুই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন